• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন

বাংলাদেশে তৈরি ‘গুফি’ বই ব্যবহৃত হচ্ছে বিশ্বজুড়ে

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ১৪ মার্চ ২০২০  

 

বাংলাদেশের বিভিন্ন স্কুলেই শিক্ষার্থীদের ভারতীয় বই পড়ানো হয়। বিশেষ করে ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলগুলোতে বিদেশি বইয়ের প্রাধান্য দেখা যায় বেশি। তবে অবাক হবেন, যখন শুনবেন বাংলাদেশে প্রকাশিত শিশুদের জন্য বই পড়ানো হচ্ছে পৃথিবীর নানা দেশে। 

ভাবতে কিছুটা কাল্পনিক লাগা এই বিষয়টিকে বাস্তবে রূপ দিয়েছে লাইট অব হোপ লিমিটেড। তাদের তৈরি গুফি (Goofi) বইয়ের সিরিজগুলোর মাধ্যমে এটি সম্ভব হয়েছে। 

কয়েকশ বছর আগে উপমহাদেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে ইংরেজি শাসকগোষ্ঠী এমনভাবে ঢেলে সাজিয়েছিল যার মূলমন্ত্র ছিল, এই শিক্ষাব্যবস্থা থেকে যে শিক্ষার্থীরা বের হবে তারা গায়ের রঙে ভারতীয় হলেও, চিন্তা ও মানসিকতায় হবে ইংরেজ। দুঃখজনক হলেও, এখন অব্দি উপমহাদেশের দেশগুলোর শিক্ষাব্যবস্থা সেটি থেকে বের হতে পারেনি। 

এবার জাপান বা ফিনল্যান্ডে উপমহাদেশের শিক্ষার মূলমন্ত্রের ভিত্তিতে শিশু শিক্ষাকে ঢেলে সাজানো হয়েছে। এই শিক্ষাব্যবস্থায় জোর দেওয়া হচ্ছে শিশুদের মধ্যে সৃজনশীলতা, সমস্যা সমাধানের দক্ষতা, মূল্যবোধ সৃষ্টি ইত্যাদি বিষয়ের ওপর। 

একই বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দিয়ে শিশুদের আবেগীয় দক্ষতা ও নৈতিকতাবোধ বাড়ানোর লক্ষ্যে ১০১৭ সালে যাত্রা শুরু করে লাইট অব হোপ লিমিটেড। 

যেহেতু পৃথিবীর সব দেশের শিশুদের জন্যই এই বিষয়গুলো প্রয়োজন, তাই যাত্রার শুরু থেকেই তাদের চিন্তা ছিল পৃথিবীর সব শিশুর উপযোগী করে বই এবং কনটেন্ট ডিজাইন করা। এই কাজটি করতে গিয়ে প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় ভাষা। কারণ, বাংলাদেশি শিশুরা কথা বলে বাংলায়, ব্রিটিশ শিশুরা ইংরেজিতে আর জার্মানের শিশুরা জার্মান ভাষায়। 

ভাষাকে পাশ কাটিয়ে কিংবা খুব স্বল্প পরিমাণ ব্যবহার করে কীভাবে বই তৈরি করা যায় তা নিয়ে ভাবেন তারা। এমন একটি বই তৈরি করতে চান যেখানে শিশুরা মূলত ছবির মাধ্যমে বা বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে নিজেদের সৃজনশীলতা চর্চা করতে পারবে। যদিও এই ব্যাপারটি ছিল যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং। 

এর অংশ হিসেবে দুটি সিরিজ তৈরি করে গুফি। এগুলো হলো ‘গুফি লেটার টু পিকচার’ এবং বর্ণ তখন ছবি হলো। লাইট অব হোপের সহপ্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও ওয়ালিউল্লাহ ভুঁইয়া এই সিরিজটি তৈরি করেন। এই সিরিজের ৪টি বইতে দেখানো হয়েছে কীভাবে ধাপে ধাপে একটি অক্ষর থেকে বিভিন্ন ছবি হয়। যেমন, ক থেকে কীভাবে কাক আঁকা যায় কিংবা বি থেকে কীভাবে বার্ড আঁকা যায়। 

বর্তমানে ৩০টি দেশে শিশু, অভিভাবক ও শিক্ষকরা এই সিরিজটি ব্যবহার করছেন। শুরুটা ই-বুকের মাধ্যমে হলেও, ২০১৯ সালে এই চারটি বই হার্ডকাভারে প্রকাশিত হয়। এবারের গ্রন্থমেলাতেও বইগুলো জনপ্রিয়তা পেয়েছে। 

লাইট অব হোপ এই দুটি সিরিজের ওপর গবেষণা করে দেখেছে, শিশুরা ৩০ ভাগ তাড়াতাড়ি সময়ে অক্ষর শিখে ফেলছে এবং তা অভিভাবক বা বড়দের সাহায্য ছাড়াই। সেসঙ্গে বাড়ছে তাদের সৃজনশীলতা। 

বাংলা ও ইংরেজির পর এবার জার্মান ও স্প্যানিশ ভাষার অক্ষরগুলো নিয়ে কাজ করা হয়েছে। পৃথিবীর ৭০ ভাগ শিশু প্রধান ৭টি ভাষায় কথা বলে। এই ভাষাগুলোতে সিরিজটি করা গেলে, ৭০০ মিলিয়ন শিশুর কাছে পৌঁছানো যাবে।

এখন পর্যন্ত প্রায় ৪০টি বই প্রকাশ করেছে গুফি। সেগুলো পাওয়া যাচ্ছে দেশে-বিদেশে।

গুফিকে সারা বিশ্বের শিশুদের কাছে পৌঁছে দেওয়াই বাংলাদেশি কোম্পানি লাইট অব হোপের লক্ষ্য। তাদের প্রত্যাশা ভবিষ্যতের পৃথিবীর জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা যেন তৈরি হয় প্রতিটি শিশুর মাঝে– থাকুক না সে বাংলাদেশের চরে, নিউইয়র্ক শহরে কিংবা নেপালের পাহাড়ে।