• বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন

বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিতে ঘেরা দৃষ্টি নন্দন উপজেলা শিবচর

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ১৮ মার্চ ২০২১  

শিবচর প্রতিনিধিঃ মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলা। উপজেলা শহরে প্রবেশ করলেই মনে হবে বঙ্গবন্ধু আর মুক্তিযুদ্ধের অনন্য স্মৃতি বিরাজ করছে চারপাশে। রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি স্তম্ভ, বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি, স্বাধীনতা চত্বর, শহীদ বুদ্ধিজীবি চত্বর, ৭১ সড়ক। সব মিলিয়ে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে সর্বত্র। পরিকল্পিত উন্নয়নের সাথে শিবচরে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষনে গৃহিত পদক্ষেপগুলোকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তয়ানের প্রতিচ্ছবি হিসেবে উল্ল্যেখ করে জাতীয় সংসদে একাধিক এমপি মন্ত্রী শিবচরকে নিয়ে বক্তব্যও রেখেছেন একাধিক বার।

সবমিলিয়ে পদ্মা সেতু সংলগ্ন উপজেলাটির অধিকাংশ সড়কের মোড় ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে স্থাপন করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের অসংখ্য প্রতিকৃতি যেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের এক উজ্জীবিত জনপদ শিবচর। আর এসব সম্ভব হচ্ছে জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ ও আওয়ামী লীগ সংসদীয় দলের সাধারণ সম্পাদক নুর-ই আলম চৌধুরীর উদ্যোগে।

জানা গেছে, ভৌগোলিক কারণে পদ্মা সেতু সংলগ্ন দক্ষিণাঞ্চলের প্রবেশদ্বার মাদারীপুরের শিবচর উপজেলাটি বহুল পরিচিত ও গুরুত্বপূর্ণ। মহান মুক্তিযুদ্ধে এ উপজেলার বীর সন্তানদের রয়েছে অনন্য অবদান। বঙ্গবন্ধুর বড় বোন চৌধুরী ফাতেমা বেগমের ছেলে তৎকালীন প্রাদেশিক সরকারের এমপি ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী (দাদা ভাই) ছিলেন মুজিব বাহিনীর কোষাধ্যক্ষ ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক। বড় বোনের বাড়ির সূত্র ধরে শিবচরে বঙ্গবন্ধুর নিয়মিত পদচারণা ছিল। দাদা ভাইয়ের নির্দেশনাতেই শিবচর থেকে পার্শ্ববর্তী ৯ উপজেলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা হয়। উপজেলাটিতে ঢুকতেই একের পর এক চোখে পড়বে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি, মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য ও সেতুগুলো লাল-সবুজের রঙে ঢাকা রয়েছে। এ ছাড়া বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, শেখ হাসিনার প্রতিকৃতিও রয়েছে অসংখ্য স্থানে। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি শেখ হাসিনা সড়কের বিজয় চত্বর, বরহামগঞ্জ চত্বর, সড়ক ৭১ সংলগ্ন ৭১ চত্বর, চৌধুরী ফাতেমা বেগম পৌর অডিটরিয়াম, আওয়ামী লীগ কার্যালয়, উপজেলা পরিষদ ভবন, পৌরসভা ভবন, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স, ইলিয়াছ আহমেদ চৌধুরী কলেজসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থানে স্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রবাহমান ৭১ ভাস্কর্য, স্বাধীনতাস্তম্ভ, শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিস্তম্ভ, মুক্তবাংলা, মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিস্তম্ভ ,লিটন চৌধুরী স্কয়ার নামক অসংখ্য ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়েছে উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থানে। রয়েছে দৃষ্টিনন্দন লালন মঞ্চ,রবীন্দ্র সরোবর,লিটন চৌধুরী অডিটোরিয়াম। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, দাদা ভাইয়ের ম্যুরালও রয়েছে বেশ কিছু স্থানে ।

বিভিন্ন স্কুল, সড়ক, সেতু, ঘাট শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের নামে নামকরণ করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষনের সাথে সাথে দেশের একাধিক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে শিবচরে। যা পদ্মা আড়িয়াল খা পাড়ের উপজেলাটিকে গড়ে তুলেছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতির সংমিশ্রনে আধুনিকতা ও উন্নয়নের মডেল হিসেবে। পদ্মা আড়িয়াল খার মতো নদ নদী ছাড়াও অসংখ্য নদী খাল বিলে ঘেরা উপজেলাটিতে নির্মান করেছেন ২ শতাধিক ব্রীজ কালভার্ট, হাজার কিলোমিটার আভ্যন্তরীন সড়ক, ২শতাধিক প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল কলেজ মাদ্রাসা ভবন, দেশের প্রথম হাউজিং প্রকল্প , ১টি মাধ্যমিক স্কুলকে সরকারিকরন,৪টি কলেজকে অনার্স ও ১টি কলেজে মাস্টার্সে উন্নতিকরন, ৪টি থানা – তদন্ত কেন্দ্র স্থাপন, সহকারী পুলিশ সুপার কার্যালয়, আধুনিক ৩টি

অডিটোরিয়াম,মুক্তমঞ্চ,শিল্পকলা একাডেমি, সুপার মার্কেট, বাস স্ট্যান্ড, শিশু পার্ক নির্মান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর আধুনিকায়ন হয়েছে। এরইমধ্যে বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের আইসিটি ইনষ্টিটিউটের কার্যক্রম অস্থায়ীভাবে শুরু হয়েছে দত্তপড়ায় ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী কলেজে। বীরমুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম তালুকদার টেকনিকাল স্কুল এন্ড কলেজ উদ্বোধন হয়েছে। ১০৮ একর জায়গায় ১৯ শ কোটি টাকা ব্যয়ে শেখ হাসিনা তাঁত পল্লী নির্মানে কাজ চলছে। ১৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের প্রকল্পর ভিত্তিপ্রস্তর হয়েছে। হাতে নেয়া হয়েছে ভারতের আইআইটির আদলে শেখ হাসিনা ইন্সটিটিউট অব ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি ও হাইটেক পার্ক প্রকল্প, কারিগরি ইনষ্টিটিউট। স্বাস্থ্য খাতে নির্মানাধীন রয়েছে ইনষ্টিটিউট অব হেলথ এন্ড টেকনোলজি ও নার্সিং ইনষ্টিটিউট, ৩টি মা ও শিশু কেন্দ্র,ট্রমা সেন্টার নির্মানসহ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১শ শয্যায় উন্নিতকরনসহ নানান প্রকল্প । দেশের প্রথম ন্যাশনাল জুডিশিয়াল একাডেমি জায়গা নির্ধারন করা হয়েছে। অলিম্পিক ভিলেজ বাস্তবায়নে একাধিক টিম জায়গা নির্ধারনে কাজ করছে।

পরিকল্পিত উন্নয়ন আধুনিকতার সাথে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নের দৃষ্টান্তে রুপ নিয়েছে শিবচর। ইলিয়াছ আহমেদ চৌধুরী দাদা ভাইয়ের নামে তোরণ নির্মাণের মধ্য দিয়ে ১৯৯৬ সালে এ কর্মযজ্ঞ শুরু করেছিলেন তারই সন্তান চীফ হুইপ নুর-ই-আলম চৌধুরী। এসব স্মৃতিস্তম্ভে বিভিন্ন দিবসে শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ শ্রদ্ধা জানানোয় প্রসার ঘটছে মুজিব আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন, জাতীয় ও শোক দিবসগুলোতে এসব প্রতিকৃতি ঘিরে পালিত হয় নানা কর্মসূচি। বছরজুড়েই পর্যটক সমারোহ বাড়ছে দিন দিন। এ ছাড়া লাল-সবুজের সমারোহে উপজেলাটিকে করে তুলেছে মুক্তিযুদ্ধময় মুজিব আদর্শের এক অনন্য জনপদ।

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার মোঃ শাহজাহান চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধুর বড় বোনের বাড়ি শিবচরের দত্তপাড়ায় হওয়ায় বঙ্গবন্ধুর ছিল আত্মার টান ছিল এ এলাকার মানুষের প্রতি। তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা অনেক সময় কাটিয়েছেন এ মাটিতে। তাইতো শিবচর আজ রুপ নিয়েছে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের এক পুন্য ভূমিতে।

শিবচর পৌর মেয়র আওলাদ হোসেন খান বলেন, 'আমাদের শিবচর উপজেলায় যে দিক থেকেই কেউ প্রবেশ করুক তার নজরে পড়বে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিসহ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসসমৃদ্ধ বিভিন্ন ভাস্কর্য ও লাল-সবুজের বিশাল সমারোহ। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি শিবচরে যে পরিমাণে রয়েছে, তা বাংলাদেশের অন্য কোথাও আছে কি-না তা আমার জানা নেই।'

শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, 'বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে শিবচরে চীফ হুইপ স্যারের উদ্যোগ সারাদেশে দৃষ্টান্ত হতে পারে।সৌভাগ্য এ ধরনের জনপদে চাকুরি করতে পেরে। শিবচরে এখন অনেকেই উন্নয়ন মন্ত্রর সাথে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নের কর্মপন্থা শিখতে আসেন।'

চীফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী মুঠোফোনে সাংবাদিকদের বলেন, 'মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রেরনাতেই শিবচর বঙ্গবন্ধুর আদর্শ সমৃদ্ধ মুক্তিযুদ্ধময় এক জনপদ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আপোষহীন বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কারনেই বাংলাদেশ স্বাধীন হয় । তাই তার আদর্শ ধরে রাখা আমাদের দায়িত্ব। আর শিবচরের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অসামান্য ভূমিকা রয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধে। সেই স্মৃতি সংরক্ষন করার মধ্য দিয়ে নতুন প্রজন্ম বেড়ে উঠছে।'