• মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ৫ ১৪৩০

  • || ০৮ রমজান ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন
ব্রেকিং:
২০৩২ সাল পর্যন্ত ইইউতে জিএসপি সুবিধা পেতে আয়ারল্যান্ডের সমর্থন চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে পাশে আছি: প্রধানমন্ত্রী জনসমর্থন থাকায় আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত করা অসম্ভব রোহিঙ্গাদের জন্য বৃহত্তর তহবিল সংগ্রহে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান লেখাপড়ার নামে শিক্ষার্থীদের ওপর চাপ সৃষ্টি না করার আহ্বান বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে আওয়ামী লীগের কর্মসূচি বিশ্বে অনেক বাজার আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে: প্রধানমন্ত্রী ট্রাস্ট করে ভাষা সংরক্ষণ-উন্নয়নের উদ্যোগ, হচ্ছে আইন ‘কিডনি রোগীদের চিকিৎসায় নানা উদ্যোগ নিয়েছে সরকার’ ইফতার পার্টি না করে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ প্রধানমন্ত্রীর

বঙ্গবন্ধু টানেল ঘিরে কৌতূহলের শেষ নেই মানুষের

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ২২ ডিসেম্বর ২০২০  

দেশের প্রথম টানেল নিয়ে দিন দিন কৌতূহল বাড়ছে মানুষের। বিশেষ করে দক্ষিণ পতেঙ্গা আর আনোয়ারা-কর্ণফুলী অংশের মানুষের চোখেমুখে খুশির ঝিলিক। পতেঙ্গা সৈকতে বেড়াতে আসা মানুষও উঁকিঝুঁকি মারছেন ‘টানেলের মুখ’ এলাকায়। ইতিমধ্যে জমি অধিগ্রহণের টাকা, চাকরি পেয়ে, শ্রমিকদের ঘরভাড়া দিয়ে আর ছোট ছোট ব্যবসা-বাণিজ্য করে অনেকে বদলে ফেলেছেন ভাগ্য।

পাকিজা খাতুনের বয়স ৬০ ছুঁই ছুঁই। দক্ষিণ পতেঙ্গার টানেলের মুখ এলাকায় তার শ্বশুর বাড়ির সামনে পাথরে খোদাই করে লেখা আছে ‘কালু মিঞা চৌকিদারের বাড়ী, ফুলছড়ি পাড়া’। পাকিজার চোখেমুখে বিস্ময়। বললেন, ওই যে বিশাল এলাকাজুড়ে টানেলের প্রবেশ পথ, প্রকল্প অফিস, কর্মকর্তাদের আবাসন সেখানে ছিল জমি, মাছের ঘের ইত্যাদি। সেই জমিতে সবজি হতো, ধান হতো। কত দ্রুত বদলে গেল সব।

তিনি বলেন, একটা সময় ছিল দক্ষিণ পতেঙ্গা থেকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, আদালত ভবন, নিউ মার্কেট যেতে বেলা পার হয়ে যেত। এখন টানেলের কারণে রাস্তাঘাটগুলো উন্নত হয়েছে। রাতবিরাতে রোগী নিয়ে দ্রুত হাসপাতালে যেতে পারি। মাসখানেক আগে কলি আকতার নামের এক গৃহবধূকে দ্রুত বন্দরটিলা মমতা হাসপাতালে নিয়ে সিজার করিয়ে প্রাণ বাঁচাতে পেরেছি। যাদের টাকা আছে তারা ভাড়া ঘর তৈরি করে, দোকান দিয়ে আয়-রোজগার বাড়াতে পারছেন।  

টানেলে কাজের পালা শেষ করে বের হন শ্রমিকরা। বাইরে অপেক্ষমাণ থাকে বিভিন্ন ঠিকাদার, সাপ্লাইয়ের লোকজন। এসব শ্রমিকদের ঘিরে ধরেন অনেকে। টানেলের ভেতর দেখতে কেমন, কতটা গাড়ি চলতে পারে, কত উঁচু, ভয় করে কিনা, রেললাইন কেন ইত্যাদি হাজারো প্রশ্ন। এভাবে লোকমুখে ছড়িয়ে পড়ছে টানেলের খবর। খবর ছড়িয়ে পড়ছে ইউটিউব, ফেসবুক, পত্র-পত্রিকা, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের মাধ্যমে।  

নিউ সি বার্ড দোকানের মালিক মো. ইমরান (৪৯) বললেন, আগে অজপাড়া গাঁয়ের মতো ছিল আমাদের এলাকাটি। এখন টানেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে আর আউটার রিং রোডের উসিলায় যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হয়েছে। জমির দাম বেড়েছে। দক্ষিণ পতেঙ্গায় আগে ২-৩ লাখ টাকায় পাওয়া যেত ২০ গণ্ড জমি। এখন সড়কের পাশে ১ গণ্ডা জমি বিক্রি হচ্ছে ২০ লাখ টাকা। ভেতরের দিকে হলে ১০ লাখ টাকা।

সাবের স্টোরের মালিক মো. আলম (৩৮)। ২০০০ সাল থেকে দক্ষিণ পতেঙ্গা এলাকায় দোকান দিয়েছেন তিনি। বললেন, এখন আউটার রিং রোড দিয়ে আধঘণ্টায় নিউমার্কেট যেতে পারি। আগে এটা ছিল অকল্পনীয়। টানেলের মুখ এলাকাটি ছিল জঙ্গলের মতো, ক্ষেতখামার ছিল। বদলে গেছে আমূল।

টানেলকে ঘিরে শুধু দক্ষিণ পতেঙ্গা নয়, বদলে যাচ্ছে কর্ণফুলী-আনোয়ারা এলাকাও। সেখানে টানেলের মুখ থেকে নির্মিত হচ্ছে চার লেনের নতুন একটি সংযোগ সড়ক। পুরোদমে চলছে সড়কে মাটি ভরাটের কাজ।

সিইউএফএল ও ডিএপি ফার্টিলাইজার কোম্পানি এলাকায় তৈরি হচ্ছে ৭২৭ মিটারের ফ্লাইওভার। ফ্লাইওভারের শেষ প্রান্তে মাটি ভরাটের কাজ তদারকি করছেন ঠিকাদারের একজন প্রকৌশলী। তিনি বাংলানিউজকে জানান, টানেলের মুখ থেকে আনোয়ার ছাতরী চৌমুহনী পর্যন্ত চার লেনের প্রায় ৫ কিলোমিটার সড়ক তৈরি হচ্ছে। ফ্লাইওভারের পিলারের কাজ শেষ, গার্ডার বসানোর কাজ চলছে। ‘কে-৬’, ‘কে-৭’ অংশে সড়কের মাটি ভরাটের কাজও প্রায় শেষ। এ সড়কে একটি আন্ডারপাসও থাকবে। সব মিলে পুরোদমে কাজ চলছে।

২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু টানেলের নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন। এখন পর্যন্ত এই প্রকল্পের ৬১ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। বাকি কাজ ২০২২ সালের মধ্যে শেষ হবে। প্রথম টিউবের নির্মাণকাজ শেষ। গত ১২ ডিসেম্বর শুরু হয়েছে দ্বিতীয় টিউবের নির্মাণকাজ।  

চীনের সাংহাই শহরের আদলে বন্দরনগর চট্টগ্রাম শহরকে ‘ওয়ান সিটি, টু টাউন’ মডেলে গড়ে তুলতে নগরের পতেঙ্গা ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের আনোয়ারার মধ্যে সংযোগ স্থাপনে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে টানেল নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। দুই টিউবের এই টানেল নির্মাণকাজ শেষ হলে ৪ লেন দিয়ে ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার গতিতে গাড়ি চলাচল করতে পারবে।