• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন

প্রশিক্ষণ-প্রচার চালাতেই শাহজাদপুরে আসে জেএমবি সদস্যরা

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ২১ নভেম্বর ২০২০  

প্রশিক্ষণ ও প্রচার কার্যক্রম চালাতেই সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের উকিলপাড়া এলাকায় পরিত্যক্ত একটি বাড়ি ভাড়া নেয় জেএমবি সদস্যরা। ওই আস্তানায় ভারী কোনো অস্ত্র না থাকলেও বোমা তৈরির সরঞ্জামাদি এবং জিহাদি প্রশিক্ষণের বই পাওয়া যায়।

শুক্রবার (২০ নভেম্বর) সন্ধ্যায় র‌্যাব-১২ লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, শুক্রবার ভোর ৫টা থেকে অভিযান চালিয়ে চার জেএমবি সদস্যকে আটক করা হয়। এ সময় দুটি বিদেশি পিস্তল, বেয়ারিং বল, গান পাউডার, ডেটনেটর, ফিউজ, কেবল, সার্কিট, রড কার্টার টুল, জিহাদি বই, নির্দেশিকা, টেপ, চা-পাতি রামদা ইত্যাদি পাওয়া গেছে।  

আটকরা হলেন, জেএমবি সংগঠনের শীর্ষ সক্রিয় সদস্য পাবনার সাথিয়া উপজেলার দাড়ামুধা গ্রামের মোখলেসুর রহমানের ছেলে শামীম হোসেন ওরফে কিরণ (১৯), একই এলাকার আবু তালেবের ছেলে নাইমুল ইসলাম (২৫), দিনাজপুর কোতয়ালী থানার শশরাসাহাপাড়া গ্রামের মানিক হোসেনের ছেলে আতিউর রহমান (১৯) ও সাতক্ষীরা জেলার তালা থানার দক্ষিণ নলতা গ্রামের বজলুর রহমানেরে ছেলে আমিনুল ইসলাম শান্ত (২০)।  

আটক জঙ্গি সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, শামীম হোসেন কিরণ রাজশাহী জেএমবির আঞ্চলিক কামান্ডার মাহমুদের সেকেন্ড ইন কমান্ড এবং পাবনা ও সিরাজগঞ্জ অঞ্চলের আঞ্চলিক নেতা। তারা জেএমবির সামরিক শাখার সদস্য এবং তারা দীর্ঘদিন ধরে জেএমবি কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে সংগঠন পরিচালনার জন্য চাঁদা সংগ্রহ করতেন বলে প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছেন। তারা তাদের পরিচয় গোপন করে তাবলিক জামায়েতের ছদ্মবেশে এসব প্রচার ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করছিলেন।  

এর আগে, অভিযান শেষে র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার সাংবাদিকদের বলেন, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে রাজশাহী শাহ মখদুম এলাকা থেকে জেএমবির উত্তরাঞ্চলের আঞ্চলিক কমকান্ডার মাহমুদসহ চারজনকে গ্রেফতার হয়। তাদের তথ্যমতে শুক্রবার ভোর ৫টা থেকে এই বাড়িটি ঘিরে রাখা হয়। টানা সাড়ে ৫ ঘণ্টার অভিযান শেষে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ওই চার জঙ্গি আত্মসমর্পণ করলে তাদের আটক করা হয়। পরে বোম ডিজপোজাল দল ঢুকে দুটি পিস্তল, বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করে। এখানে পিস্তল, কিছু বিস্ফোরক ছাড়া ভারী কোনো অস্ত্র ছিল না। তবে এখানে বোমা তৈরি ও জিহাদি প্রশিক্ষণের কিছু বই রয়েছে।  

তিনি বলেন, ২০-২৫ দিন আগে বাসা ভাড়া নিয়ে তাবলীগ জামায়াতের ছদ্মবেশে এরা প্রচারণা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালায়। জেএমবির জেহাদীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য নিয়ে আসা হতো। এখানে আরও কিছু জঙ্গি এখানে আসার কথা ছিল। নেতৃত্ব স্থানীয় একজনের কারণেই তারা আসেন নাই। তারা একটি বাসায় একমাস বা দুইমাসের বেশি থাকতো না। তাদের পরিকল্পনা ছিল এখানে তাবলীগে বেশে দাওয়াত কার্যক্রম ও চাঁদা আদায় ও প্রশিক্ষণ পরিচালনা করে বাসাটা ত্যাগ করা।  

র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক আরও বলেন, রাজশাহীতে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে আটক হওয়ায় মাহমুদ আগে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমে ছিলেন। তিনি এর আগেও গ্রেফতার হয়ে জেলে ছিলেন। ওই সময় এরপর রাশেদুল ইসলাম সুমন নামে অপর এক জঙ্গির সংপর্শে এসে জেএমবির আদর্শের সঙ্গে যুক্ত হন।

এদিকে আবাসিক এলাকাতে হঠাৎ জঙ্গি তৎপড়তার বিষয়টি জানতে পেরে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক শুরু হয়েছে। ওই বাড়িটির আশপাশে সব বাড়ির লোকজন নিজ নিজ ঘরে অবরুদ্ধ অবস্থায় পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছেন। এরপর দু-একজন করে বাইরে বের হলে তাদের চোখে মুখে দেখা যায় আতঙ্কের ছাপ।  

রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী শেখ দিদারুল আলম ডলার বলেন, বাড়িটি পরিত্যক্ত ছিল। সেখানে কিভাবে ভাড়া নিয়ে বাস করছে সে বিষয়টি প্রতিবেশীরা জানতেও পারিনি। আজ ভোরে গুলির আওয়াজ শুনে বাইরে বেরিয়ে দেখি বিপুল সংখ্যক র‌্যাব সদস্যরা বাড়িটি ঘিরে রেখেছে। এ নিয়ে পুরো এলাকা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে।  

স্থানীয় একটি ক্লিনিকের কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার সিনথিয়া খান বলেন, আটক জেএমবি সদস্যদের মধ্যে দু-একজনকে আমরা স্বাভাবিকভাবেই চলাচল করতে দেখেছি। সন্দেহজনক কিছু মনে হয়নি।  

পরিতোষ মণ্ডল, অ্যাডভোকেট শাহজাহান মিয়াসহ অনেক এলাকাবাসীই এই জঙ্গি আস্তানার খবর জানেন না বলে উল্লেখ করেন। তারা বলেন, এ অঞ্চলে বেশিরভাগই ভাড়াটিয়া বাড়ি। কখন কে কোথায় ভাড়া থাকে সেটা জানা বড় মুশকিল। তবে পরিত্যক্ত ওই বাড়িটির মালিক আলাউদ্দিন বগুড়ায় থাকেন। তার খোঁজখবর নিয়েই বাড়িটি ভাড়া দেওয়া উচিত।