• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন

পৃথিবীর সব কীটপতঙ্গ মরে গেলে কী হবে?

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ১৯ জানুয়ারি ২০২০  

 

নানাবিধ কারণে প্রতিনিয়ত কমছে পৃথিবীর কীটপতঙ্গ। এভাবে কীটপতঙ্গ কমতে থাকলে এক সময় খাদ্যসংকটে পড়তে হতে পারে পৃথিবীবাসীকে। কারণ খাদ্য উত্পাদন এবং জীবজগেক রক্ষার জন্য কীটপতঙ্গের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।এক পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালেই ক্যালিফোর্নিয়ার মনার্ক প্রজাপতির সংখ্যা ৮৬ শতাংশ কমে গেছে।
লন্ডনে ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামের সিনিয়র কিউরেটর ড. এরিকা ম্যাকএ্যালিস্টার বলেন, পৃথিবীর সব কীটপতঙ্গকে আমরা যদি মেরে ফেলি তাহলে আমরাও মারা যাব। কীটপতঙ্গ না থাকলে আমাদের বিষ্ঠা আর মৃত প্রাণীর মধ্যে বাস করতে হতো। জৈবিক বর্জ্য পচনে সাহায্য করে কীটপতঙ্গ। পৃথিবী পরিষ্কার রাখতে সহায়তা করে কীটপতঙ্গ। বিভিন্ন প্রাণী বা উদ্ভিদ মরে গেলে তার ওপর কীটপতঙ্গ হামলে পড়ে, এতে করে এসব মৃত প্রাণীর পচনের প্রক্রিয়া দ্রুততর হয়। এর ফলে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি পায়।
অন্য প্রাণীর খাদ্য জোগান দিতেও রয়েছে কীটপতঙ্গের ভূমিকা। এই পোকামাকড় খেয়েই কিন্তু পাখি, বাদুড় এবং ছোটো আকারের স্তন্যপায়ী প্রাণীরা বেঁচে থাকে। সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. ফ্রান্সিসকো সানচেজ-বেয়ো বলেন, মেরুদণ্ডী প্রাণীর ৬০ শতাংশই বেঁচে থাকার জন্য কীটপতঙ্গের ওপর নির্ভরশীল। সুতরাং পোকামাকড় না থাকলে পাখি, বাদুড়, ব্যাঙ এবং মিঠা পানির মাছও অদৃশ্য হয়ে যাবে। তারা নিজেরাই কখনো হয় অন্যের খাদ্য, কখনো তারা হয় ইকোসিস্টেমের সেবক।

কিন্তু এ ছাড়াও আরেকটি অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে কীটপতঙ্গ। আর সেটি হলো পরাগায়ন—যা খাদ্য উত্পাদনের জন্য অত্যাবশ্যক। এক জরিপে বলা হয়, পরাগায়নের জন্য মানুষ যে সুফল পায়—তার পরিমাণ ৩৫ হাজার কোটি ডলার। ড. সানচেজ বেয়ো বলেন, বেশির ভাগ ফুলেরই পরাগায়নের জন্য পোকামাকড়ের দরকার হয়— যার মধ্যে আছে চাল-গমের মতো শস্যের গাছের ৭৫ শতাংশ। কিন্তু বাস্তবতা হলো, আমরা অনেক সময় বুঝিই না যে, পোকামাকড় থেকে আমরা কতটা সাহায্য পাচ্ছি।

যুক্তরাষ্ট্রের স্মিথসোনিয়ান ইনস্টিটিউটের মতে পৃথিবীর সব কীটপতঙ্গকে যদি এক জায়গায় জড়ো করে ওজন করা হয় তাহলে তা হবে পৃথিবীর সব মানুষের সম্মিলিত ওজনের চাইতেও ১৭ গুণ বেশি। সংখ্যায় এত বেশি হলেও কীটপতঙ্গেরা গণহারে বিলুপ্ত হওয়ার ঝুঁকি থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। অনেক কীটপতঙ্গ আবিষ্কৃত বা চিহ্নিত হবার আগেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে।

জার্মানি, যুক্তরাজ্য এবং পুয়ের্তো রিকো হচ্ছে এমন তিনটি দেশ—যেখানে গত ৩০ বছর ধরে কীটপতঙ্গের সংখ্যার ওপর জরিপ চালানো হচ্ছে। তাতে দেখা যায়, প্রতিবছর ২ দশমিক ৫ শতাংশ করে পতঙ্গের সংখ্যা কমছে। জার্মানিতে ৬০টি সংরক্ষিত জায়গাতেই গত ৩০ বছরে উড়ন্ত পতঙ্গের সংখ্যা ৭৫ শতাংশেরও বেশি কমে গেছে। এই হারে সংখ্যা কমতে থাকলে এক শতাব্দীর মধ্যে কীটপতঙ্গের প্রজাতিগুলোর ৪১ শতাংশেরও বেশি অদৃশ্য হয়ে যাবে। —বিবিসি