• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন

পানি কখন পবিত্র, কখন অপবিত্র

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ১ সেপ্টেম্বর ২০২০  

পানি মহান আল্লাহর অন্যতম নিয়ামত। এর ওপর মানুষ, প্রাণিজগৎ ও সব উদ্ভিদের জীবনের ভিত্তি। পানির প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি। কিন্তু মহান আল্লাহ পানি অতি সহজে পাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। পানি মানুষের শারীরিক প্রয়োজন পূর্ণ করে। পানির সঙ্গে মানুষের আধ্যাত্মিক প্রয়োজনও সম্পৃক্ত, তা হলো পবিত্রতা। এর ওপর নামাজ ও অন্য অনেক ইবাদত নির্ভরশীল। পানি নামক এ মূল্যবান নিয়ামত দানের একটি কারণ হলো, এর দ্বারা মানুষ পবিত্রতা হাসিল করবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘... তিনি আকাশ থেকে পানি অবতরণ করেন তোমাদের পবিত্র করার জন্য...।’

(সুরা : আনফাল, আয়াত : ১১) 

পানি মৌলিকভাবে পবিত্র-পবিত্রকারী। ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি আকাশ থেকে বিশুদ্ধ পানি বর্ষণ করি।’

(সুরা : ফুরকান, আয়াত : ৪৮)

তাই যতক্ষণ পর্যন্ত পানি নাপাক হওয়ার প্রমাণ না পাওয়া যাবে ততক্ষণ তা পবিত্র বলে গণ্য হবে।

পবিত্রতা অর্জনের দিক থেকে পানি পাঁচ প্রকার :

(১) তাহির মুতাহহির গায়রে মাকরুহ : যে পানি নিজে পবিত্র ও অন্য বস্তুকেও পবিত্র করে এবং এর দ্বারা অজু ও গোসল করা মাকরুহ নয়। যেমন—বৃষ্টি, নদী, সাগর, পুকুর, নালা, ঝরনা, কূপ, টিউবওয়েল, শিশির ও বরফ ইত্যাদির পানি। এ পানিকে ‘মুতলাক পানি’ বলা হয়।

(২) তাহির মুতাহহির মাকরুহ : যে পানি নিজে পবিত্র এবং অন্য বস্তুকেও পবিত্র করে। তবে মুতলাক পানি থাকা অবস্থায় তা দ্বারা অজু-গোসল করা মাকরুহে তানজিহি। যেমন—পালিত বিড়াল, ছাড়া মুরগি, ইঁদুর, পাখি বা এমন কোনো প্রাণীর মুখ দেওয়া পানি, যার উচ্ছিষ্ট মাকরুহ।

(৩) তাহির গায়রে মুতাহহির : যে পানি নিজে পবিত্র, তবে অন্য বস্তুকে পবিত্র করে না। এ পানি দ্বারা অজু ও গোসল জায়েজ নয়। যেমন—অজু-গোসলের জন্য ব্যবহৃত পানি, যা নাপাকি দূর করার জন্য বা আল্লাহর নৈকট্য লাভ ও সওয়াব অর্জনের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়েছে। তবে এমন পানি শরীর বা কাপড়ে লাগলে তা নাপাক হবে না।

(৪) নাপাক পানি : এমন প্রবহমান পানি, যাতে নাপাকি পড়ার কারণে পানির রং, ঘ্রাণ বা স্বাদ পরিবর্তন হয়ে গেছে। অথবা আবদ্ধ অনেক পানি, যাতে নাপাকি পড়ার কারণে সব দিকের পানির রং, ঘ্রাণ বা স্বাদ বদলে গেছে। অথবা আবদ্ধ অল্প পানি, যাতে নাপাকি পতিত হয়েছে। এসব পানি দিয়ে অজু ও গোসল জায়েজ হবে না। কোনো নাপাক বস্তুও পবিত্র করা যাবে না।

(৫) মাশকুক পানি : যে পানি দিয়ে অজু ও গোসল জায়েজ হওয়া বা না হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ থাকে। যেমন—গাধা বা খচ্চরের মুখ দেওয়া পানি। এ পানি দিয়ে অজু করার পর তায়াম্মুম করতে হবে। (তাহতাবি আলা মারাকিল ফালাহ : ১৬-১৭)

যদি পানির সঙ্গে কোনো পবিত্র জিনিস মেশার ফলে পানির রং, ঘ্রাণ বা স্বাদ বদলে যায়। যেমন—স্রোতের পানির সঙ্গে বালু মিশে গেল, অথবা জাফরান বা সাবান পড়ে পানিতে তার কিছুটা রং এসে গেল, এ অবস্থায় পানি পবিত্র থাকবে এবং তরল থাকার শর্তে তা দিয়ে অজু ও গোসল জায়েজ হবে। (হিদায়া : ১/৩৪)

যদি কোনো পবিত্র জিনিস দিয়ে পানি জ্বাল দেওয়ার পর পানির গুণাবলি (রং, ঘ্রাণ বা স্বাদ) পরিবর্তন হয়ে যায়, তাহলে এ পানি দ্বারা অজু ও গোসল জায়েজ হবে না। (হিদায়া : ১/৩৫)

তবে বরই পাতা বা সুগন্ধি ঘাস দ্বারা জ্বাল দেওয়া পানি দিয়ে অজু ও গোসল জায়েজ হবে।

যদি স্রোতের পানিতে নাপাকি পতিত হয় এবং পানির রং, ঘ্রাণ বা স্বাদে কোনো পরিবর্তন না আসে, তাহলে তা দিয়ে পবিত্রতা হাসিল করা জায়েজ। (ফাতাওয়া আলমগিরি : ১/১৬-১৭)

বড় পুকুর যার একদিকে পানি নাড়া দিলে অন্যদিকে নড়ে না—এ ধরনের পুকুরের একদিকে নাপাকি পড়লে অন্যদিক দিয়ে পবিত্রতা হাসিল করা জায়েজ। (হিদায়া : ১/৩৬)

যে জীবের দেহে প্রবহমান রক্ত থাকে না, যেমন—মাছি, মশা, ভোমর, বিচ্ছু ইত্যাদি। তা পানিতে পড়ে মরে গেলে, অথবা মরে পড়ে গেলে পানি অপবিত্র হয় না। এ পানি দিয়ে অজু ও গোসল জায়েজ। (হিদায়া : ১/৩৭)

যদি পানিতে বসবাসকারী জীব পানিতে মরে যায় যেমন—মাছ, কাকড়া, ব্যাঙ ইত্যাদি, তাহলে পানি অপবিত্র হবে না।

যে পানি গাছ বা ফল-ফলাদি থেকে বের হয় যেমন—আখের রস, ফলের রস, ডাবের পানি ইত্যাদি। তা দিয়ে অজু ও গোসল জায়েজ নেই।

যে জীবের দেহে প্রবহমান রক্ত আছে, তা অল্প পানিতে পড়ে মরে গেলে অথবা মরে পড়ে গেলে পানি নাপাক হয়ে যাবে। 

পবিত্র পানিতে ব্যবহৃত পানি মিশে গেলে এবং ব্যবহৃত পানি পরিমাণে বেশি হলে সব পানি ব্যবহৃত পানি বলে গণ্য হবে। তা দিয়ে অজু ও গোসল জায়েজ হবে না। (ফাতাওয়া আলমগিরি : ১/২২)