• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন

পাট শিল্প ধ্বংসে বিএনপির যাবতীয় অপকর্ম ও বর্তমান প্রেক্ষাপট

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ৩০ জুন ২০২০  

আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে বিএনপি পাট শিল্প ধ্বংস করেছিল বলে জনশ্রুতি রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের সঙ্গে আঁতাত করে দেশের পাট শিল্প ধ্বংস করে দিয়েছিল বিএনপি। এর অংশ হিসেবে ২০০২ সালে আদমজী পাট কল বন্ধ করে দিয়েছিল বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নের মাধ্যমে। একই সময় বিশ্ব ব্যাংক ভারতের কয়েকটি নতুন জুট মিলে অর্থায়ন করে। বিএনপি বিজেএমসিতে রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি ছড়িয়ে দিয়েছিল। কিন্তু বর্তমান সরকার পাট শিল্পকে পুনরায় সোনালি ফসলে পরিণত করতে উদ্যোগ নিয়েছে।

তথ্যসূত্র বলছে, ২০০২ সালে তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত সরকার বিশ্বব্যাংক এবং আইএমএফের প্ররোচনায় ঐতিহ্যবাহী পাটশিল্পকে বন্ধ করে লাখ লাখ মানুষকে পথে বসাতে কসুর করেনি। ২০০২ সালে পুঞ্জীভূত ১২শ’ কোটি টাকা লোকসানের কথা বলে বন্ধ করা হলেও ওই সময়ে আদমজী সরকারকে ১৫শ’ কোটি টাকা বিদ্যুৎ বিল আর ৬শ’ কোটি টাকা গ্যাস বিল পরিশোধ করেছিল। তার ওপর ভ্যাট, ট্যাক্স তো ছিলই। বিশ্বব্যাংক আদমজী বন্ধ করার জন্য ১৫শ’ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছিল। এতে প্রত্যক্ষভাবে ৩০ হাজার শ্রমিক বেকার এবং পরোক্ষভাবে ১০ লাখের অধিক মানুষ তাদের আয়ের উৎস হারিয়ে দারিদ্র্যের দুষ্টচক্রে আটকা পড়ে। যখন আদমজী বন্ধ করে দেওয়া হয়, তখন এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংকের এদেশীয় দক্ষিণ এশিয়া শাখার প্রধান আনন্দে উচ্ছ্বসিত হয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ‘অত্যন্ত সাহসী’ পদক্ষেপের ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন। পাটকল বন্ধ ঘোষণা দিয়ে তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত সরকার যে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রে পা দিয়েছিল, সেটি অনুধাবন না করেই উচ্ছ্বাসে মেতেছিল। গবেষণায় দেখানো হয়েছে, এর এক-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ ৫শ’ কোটি টাকা আধুনিকায়নে ব্যয় করলেই পাট খাতের চেহারা পাল্টে যেত।

আসলে ১৯৯৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি বিশ্বব্যাংক, আইএমএফের পরামর্শে সরকার আদমজী বন্ধের চুক্তি সই করে। বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সুর মিলিয়ে প্রচার চালাতে থাকে; আদমজীর লোকসানের টাকা দিয়ে কয়টা যমুনা ব্রিজ, কয়টা সুবৃহৎ উন্নয়ন প্রকল্প তৈরি করা যাবে। উন্নয়নের জোয়ারে দেশ ভেসে যাবে। ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে জুট সেক্টর অ্যাডজাস্টমেন্ট ক্রেডিট নামে সরকারকে দেওয়া ঋণে বলা হয়েছিল দুর্নীতি হ্রাস, দক্ষতা বৃদ্ধি ও আধুনিকায়নে ব্যবহার করা হবে; তার কোনোটিই হয়নি। পরে গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের নামে শ্রমিক ছাঁটাই এবং একে একে বিভিন্ন ইউনিট বন্ধ করা হয়।

এদিকে তথ্যসূত্র বলছে, পাটখাতে শ্রমিক অসন্তোষ শুরু হয় ১৯৯১ সালে বিএনপির শাসনামলে। তৎকালীন সরকারের একরোখা ও দুর্নীতিপরায়ণ নীতির কারণে পাটকল শ্রমিকরা আন্দোলন করেছিল। সে সময় বিএনপি-জামায়াত আন্দোলনরত শ্রমিকদের ওপর গুলি চালিয়ে ১৭ জন শ্রমিককে হত্যা করে। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ তখন পাটের শ্রমিকদের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন করে পাটের ন্যায্য মূল্যের দাবিতে এবং প্রেস কনফারেন্সের আয়োজন করে। বিএনপির শাসনামলে বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বস্ত্র বিভাগের কোনো সম্পর্ক ছিলো না। পাট পণ্য এক সময় রফতানির মূল খাত ছিলো বাংলাদেশে। কিন্তু বিএনপি সরকারের অবহেলায় পাট শিল্পের অবনতি ঘটে। তৈরি করেনি এ শিল্পে দক্ষ জনবল। সেক্ষেত্রে আজকে পাটখাতের উন্নয়নে বর্তমান সরকারের অবদান সবচেয়ে বেশি। সিস্টেম লস বন্ধে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে (পিপিপি) নতুন করে সরকারের পাটকল চালুর এই উদ্যোগ নিয়ে বিএনপি-জামায়াতের হইচই কেবল লোক দেখানো বলেই মনে হচ্ছে।