• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন

পদ্মাসেতুর সাথে বদলে যাচ্ছে শিবচরের জনজীবন

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ৩ নভেম্বর ২০১৯  

শিবচর প্রতিনিধিঃ দৈনন্দিন নানা কাজের চাপে হাঁপিয়ে উঠে যে কেউই। অথবা একঘেয়েমী ভর করে মনে। এছাড়াও নানা কারনেই অনেক সময় মনের মাঝে বিরাজ করে বিরক্তভাব-খিটখিটে মেজাজ! এই মানসিক ক্লান্তি দূর করতে ভ্রমনের চেয়ে বড় ওষুধ যেন আর নেই। কিন্তু দূরে কোথাও ঘুরে আসতে সময়েরও প্রয়োজন। রয়েছে অর্থেরও। বিনে পয়সায় বা স্বল্পখরচে মনের ক্লান্তি দূর করতে পারার সুযোগ খুঁজে অনেকেই। আর এ কারনেই মূলত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে পদ্মানদীর পাড়! পদ্মাসেতু নির্মানের সাথে সাথে শিবচরের চরাঞ্চলের জনজীবনেও পরিবর্তন আসতে শুরু করেছে। উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে চরাঞ্চলের জনপদে।

শিবচরের কাওড়াকান্দি এলাকার পদ্মানদীর পাড়ের নদী শাসন বাধের উপর বসে নানা বয়সীদের বৈকালিক সময় কাটাতে দেখা যাচ্ছে। প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত ৯/১০ টা পর্যন্ত মানুষের পদভারে জমজমাট থাকে এই নদীশাসন বাধ।

পদ্মার পাড় বিনোদনের নতুন মাত্রা হিসেবে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে দিন দিন। কাওড়াকান্দি ঘাটের (পুরাতন ঘাট) পদ্মা নদীর তীরে প্রায় অর্ধ কিলোমিটার ব্যাপী নদী শাসন বাধ অবসর সময় কাটানোর জন্য জনপ্রিয় স্থানে রূপ নিচ্ছে।
দূর দূরান্ত থেকেও নানা শ্রেনী-পেশার মানুষ প্রতিদিন ঘুরতে আসছে পদ্মার পাড়ে। পাড়ে বসে থেকে গল্প করা, বাদাম চিবুনো, সেল্ফি তোলা ছাড়াও ডিঙ্গি নৌকায় নদীতে ভেসে বেড়ায় বিনোদন প্রেমীরা।

স্থানীয়দের সাথে আলাপ করলে তারা জানান, কাওড়াকান্দি ঘাটটি সরিয়ে কাঁঠালবাড়িতে স্থানান্তর করার পর এ এলাকাটিতে কেমন যেন মৃতভাব চলে এসেছিল। মানুষের আনাগোনা ছিল না তেমন। শুধু স্থানীয়রা ছাড়া। তবে নদী শাসন বাঁধের কাজ শেষ হওয়ার পর ধীরে ধীরে জমে উঠতে শুরু করে। বিভিন্ন এলাকা থেকে নানান বয়সী মানুষ বিকেলে ঘরতে আসে এখানে। নদীর পাড়ে বসে থাকে। নৌকায় ঘুরে বেড়ায়। স্থানীয় বাজারটিও বেশ জমজমাট হয়ে উঠেছে একারনেই।

ঘুরতে আসা শিবচরের একটি পরিবারের সাথে আলাপ করলে তারা জানান,'দূরে কোথাও যাওয়ার সুযোগ হয় না। অথচ ঘুরতে ইচ্ছা করে। পরিচিত একজনের পরামর্শে পদ্মার পাড়ে এসেছি। যেমনটা ভেবেছিলাম তার চেয়েও চমৎকার লাগছে। নদীর ঢেউয়ের শব্দ, হালকা বাতাস। সব মিলিয়ে অপূর্ব লাগছে। '

স্থানীয় আরেক যুবক বলেন,'শুধু অবসর কাটানোর জন্যই না অনেকে আসেন শুধু হাটতে। স্থানীয় ডায়াবেটিস রোগীদের অনেকেই ভোর ও বিকেলে নদী শাসন বাঁধের উপর দিয়ে হাটতে দেখা যায় নিয়মিত।'

স্থানীয় এক কলেজ ছাত্র জানান, প্রায় দিন বিকেলে এখানে আসি। সময় কাটানোর জন্য বেশ ভালো একটা জায়গা। নদীর ঢেউয়ের শব্দ আর জলছোঁয়া বাতাসে যে কারোরই মন ভালো হয়ে যাবে এখানে আসলে। দূর হবে ক্লান্তিও।'

জানা গেছে, বছরের ঈদ ও পূজার সময় নদীশাসন বাঁধের পুরোটা জুড়েই যেন মানুষের মেলা বসে। নদীতে গোসল, নৌকা নিয়ে ঘুরে বেড়ানোসহ আনন্দে মেতে উঠে বিনোদন প্রেমীরা। অনেকে আবার পিকনিক করতেও আসে এখানে। সব মিলিয়ে সাধারন মানুষের কাছে অবসর কাটানোর জন্য বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে পদ্মার তীরের এ এলাকা। ঈদ-পূজা ছাড়াও প্রতিদিন বিকেলে জমে উঠে নদীর পাড়।

কোলাহল থেকে কিছুটা দূরে একান্ত কিছু সময় কাটানোর জন্য পরিবার-পরিজন নিয়েও যেমন অনেকে আসছেন। আবার প্রিয়জন নিয়েও নদীর পাড় ধরে ঘুরতে দেখা যাচ্ছে অনেককে। এছাড়াও ভাবুক মনের অনেকেই একা বসে দেখছেন পদ্মার ঢেউ। মুগ্ধ হচ্ছেন মৃদমন্দ জলছোঁয়া বাতাসে। যা মনে জমে থাকা ক্লেদ দূর করে দিচ্ছে কিছু সময়ের জন্য। এমন অভিব্যক্তি ঘুরতে আসা মানুষের। শিবচরের কাওড়াকান্দি, কাঁঠালবাড়ী ও পদ্মাসেতু সংলগ্ন পদ্মানদীর নদীশাসন বাধ এলাকা বিনোদনের জন্য বিনোদনপ্রমীদের আদর্শ স্থানে পরিণত হবে বলে মনে করেন স্থানীয়রা।