• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন

পদ্মাসেতুর ফলে শিবচরের অর্থনৈতিক অগ্রগতি নতুন মাত্রা নেবে

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ১০ ডিসেম্বর ২০২০  

শিবচর প্রতিনিধিঃ সর্বশেষ স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে পুরোপুরি দৃশ্যমান হচ্ছে পদ্মাসেতু। পদ্মাসেতুকে ঘিরে স্বপ্ন দেখছে দক্ষিণাঞ্চলের পদ্মাসেতু সংলগ্ন এলাকা মাদারীপুরের শিবচরের মানুষ। পিছিয়ে পড়া জনপদের উন্নয়নের সাথে সাথে বাড়বে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মান। অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হবে এই অঞ্চল। আর এই জন্যই পদ্মাসেতুকে ঘিরে এতো স্বপ্ন এবং উচ্ছ¡াস মাদারীপুর জেলার শিবচর এলাকার মানুষের মধ্যে।

সরেজমিনে ঘুরে এবং স্থানীয়দের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, পদ্মাসেতুর একপ্রান্ত শরিয়তপুরের জাজিরা এবং মাদারীপুরের শিবচরে সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলগামী পরিবহন সেতু পার হয়ে জাজিরা প্রান্তে নেমে শিবচরের উপর দিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় পৌছে যাবে। আর এই পদ্মাসেতুকে ঘিরেই এই সকল অঞ্চলের অবহেলিত জনপদে এখন উজ্জ্বল সম্ভাবনা। প্রত্যন্ত জনপদে গত ১৫ বছর আগেও যেখানে ছিল না কোন রাস্তা, কাদামাটি-পানি পেরিয়ে ঘরে ফিরতে হতো সাধারণ মানুষের, জরুরী প্রয়োজনে কোথাও তরিত্বগতিতে যাওয়ার কোন ব্যবস্থা ছিল না সেই সকল এলাকাতে এখন দেশের অন্যতম সড়কের ছোঁয়া!

রাস্তাঘাট হওয়ার সাথে সাথেই হাট-বাজার, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান তৈরি হয়ে প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে এখন শহুরে স্পর্শ। জীবন-মানের রাতারাতি এই পরিবর্তনে বিস্মিত এই সকল এলাকার মানুষ। অভিভূত এবং আনন্দিত। বিশেষ করে পদ্মাসেতুর কাজ শুরু হওয়ার পর থেকেই রাতারাতি পাল্টে যেতে থাকে মাদারীপুর জেলার শিবচরসহ আশেপাশের এলাকার চিত্র।

পদ্মাসেতুর জন্য তৈরিকৃত এ্যাপ্রোচ সড়ক; যার ফলে পদ্মাসেতুর জাজিরা পয়েণ্ট থেকে শিবচর উপজেলার পাঁচ্চর পর্যন্ত যোগাযোগের আমুল পরিবর্তন ঘটেছে। এ্যাপ্রোচ সড়কটির জন্য আশেপাশের এলাকার উন্নয়ন হয়েছে। নির্মান করা হয়েছে পাকা রাস্তা। বিশেষ করে পদ্মাসেতু  ও সড়ক নির্মানের জন্য পরিবহনের সহজ যোগাযোগ তৈরি করতে এমনিতে নির্মান করতে হয়েছে রাস্তা-ঘাট। আর এর ফলেই প্রত্যন্ত গ্রামগুলো পেয়েছে আধুনিক সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। এর ফলে দ্রæততার সাথে এই সকল এলাকার ব্যবসায়-বাণিজ্যের প্রসারও বাড়তে থাকে।

শিবচর উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে,‘পদ্মাসেতুকে ঘিরে মাদারীপুর জেলার শিবচরের চরাঞ্চলে এখন উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। পদ্মাসেতুর সঙ্গে যুক্ত এক্সপ্রেসওয়ে শিবচরের উপর দিয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গার সাথে যুক্ত হয়েছে। এই এক্সপ্রেস হাইওয়ের পাশে নতুন ভাইে গড়ে উঠেছে কমপক্ষে ১০টি বাজার। পুরানো হাট-বাজারগুলোতেও আধুনিকতা এসেছে। তাছাড়া রেললাইনের ২ টি স্টেশনও শিবচরে হচ্ছে। আর এই স্টেশনকে ঘিরেই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে। সহজেই দূর-দূরান্ত থেকে কম খরচে মালামাল বহন করতে পারবে। এদিকে পদ্মাসেতুকে কেন্দ্র করেই শিবচরে ১০৮ একর জায়গায় ১৯শত কোটি টাকা ব্যয়ে শেখ হাসিনা তাঁত পল্লী নির্মান হবে। ১শত ৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, ১ হাজার ৬৪ টি প্লট নিয়ে দাদা ভাই হাউজিং প্রকল্প নির্মান করা হয়েছে, সম্প্রতি চালু হয়েছে বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম তালুকদার টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ। পদ্মার পাড়ের ৭৫ একর জায়গা নির্ধারন করা হয়েছে শেখ হাসিনা ইনষ্টিটিউট ফর ফন্ট্রিয়ার টেকনোলজি, ৪শত একর জায়গা নির্ধারন করা হয়েছে শিবচর ইউনিয়নে বিসিক শিল্প নগরী স্থাপনের। ন্যাশনাল জুডিশিয়াল একাডেমি ও সংস্কৃতি কেন্দ্র নির্মান প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে পৌরসভা ও সংলগ্ন এলাকায়। মহাসড়কে ট্রমা সেন্টার নির্মান শুরু হয়েছে। নির্মিত হবে কর্মজীবী মায়েদের জন্য বেগম রোকেয়া কর্মজীবি মহিলা হোস্টেলসহ ট্রেনিং সেন্টার ও ডে-কেয়ার সেন্টার। আধুনিক কাঁচাবাজারসহ শপিং কমপ্লেক্স নির্মান শুরু হচ্ছে শীঘ্রই।

কুতুবপুর এলাকার বাসিন্দা আসলাম জানান,‘পদ্মা সেতু চালু হলে এই এলাকায় উৎপাদিত নানা ধরণের পন্য রাজধানী ঢাকায় সহজেই পৌছানো যাবে। আবার ঢাকা থেকে সহজেই যেকোন কিছু এখানে নিয়ে আসা যাবে। এতে করে ব্যবসায়-বাণিজ্যের প্রসারতা হবে। অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে এই এলাকার মানুষ।’

সুরুজ শেখ নামের এক নবীন খামারি জানান,‘পদ্মাসেতুর সর্বশেষ স্প্যান আজ উঠবে বলে শুনেছি। ভাবতেই অন্যরকম আনন্দ হচ্ছে। পদ্মাসেতু হয়ে গেলে খামারের দুধ ঢাকায় নিয়ে গিয়ে বিক্রি করতে পারবেন বলে উচ্ছ¡াস প্রকাশ করেন তিনি।’

স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আবজাল হোসেন বলেন,‘নদীতে নাব্যতা সংকটের কারণে নৌ চলাচল ব্যহত হচ্ছে দিন দিন। পদ্মাসেতু হয়ে গেলে যেকোন মালামাল সহজেই গাড়িতে করে ঢাকায় পৌছানো সম্ভব। শিবচর থেকে তখন ঢাকার দূরত্ব হবে মাত্রা ৪০ মিনিট! অর্থনৈতিক দিয়ে এই এলাকা পদ্মাসেতুর ফলে এগিয়ে যাবে।’

কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহসেন উদ্দিন সোহেল বেপারী বলেন,‘পদ্মাসেতু সংলগ্ন পদ্মার চরাঞ্চল ও আশেপাশের এলাকায় নানা স্থাপনা তৈরি হবে। এতে করে মানুষের কর্মক্ষেত্র তৈরি হবে। হাটবাজারের উন্নয়ন ইতোমধ্যে হচ্ছে। ব্যবসায় বানিজ্যের প্রসার ঘটবে এই অঞ্চলে।'