• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন

নীরবে সালামের উত্তর দেয়ার ব্যাপারে কোরআন হাদিসের বিধান

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ১০ এপ্রিল ২০২১  

‘আসসালামু আলাইকুম’- ‘আপনাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক’।  একজন মুসলমান অন্য মুসলমানের সঙ্গে দেখা হলে এই বাক্যটি বলেন। একজন মুসলমান তার ভাইয়ের জন্য শান্তি কামনা করছেন। সালাম একটি সম্মানজনক, অভ্যর্থনামূলক, অভিনন্দনজ্ঞাপক, শান্তিময় উচ্চমর্যাদা সম্পন্ন পরিপূর্ণ ইসলামি অভিবাদন।

উল্লেখ্য যে, ‘আস-সালাম’ আল্লাহর সুন্দর নামসমূহের মধ্যে একটি অন্যতম নাম। এবং জান্নাতের নাম সমূহের মধ্যে একটি জান্নাতের নাম।

মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা সর্বপ্রথমে আদমকে (আ.) সালামের শিক্ষা দেন। (মিশকাত, হাদিস নম্বর-৪৬২৮, অধ্যায়-শিষ্টাচার, অনুচ্ছেদ-সালাম)।

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে- রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করে বলেন, যাও ফেরেশতাদেরকে সালাম দাও এবং তোমার সালামের কি উত্তর দেয় মন দিয়ে শুন। এটিই হবে তোমার আর তোমার সন্তানদের সালাম। সে অনুযায়ী আদম গিয়ে বলেন,

‘আসসালামু আলাইকুম’

অৰ্থ: ‘আপনাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক’

ফেরেশতারা উত্তর দেন,

‘ওয়ালাইকুম আসসালাম ওয়া রহমাতুল্লাহি’

অৰ্থ: ‘আপনাদের ওপর শান্তি এবং আল্লাহ রহমত বর্ষিত হোক’

ফেরেশতারা রাহমাতুল্লাহ বৃদ্ধি করেন। (মিশকাত, হাদিস নম্বর- ৪৬২৮, অধ্যায়- শিষ্টাচার, অনুচ্ছেদ- সালাম।

ভাব বিনিময়ের অন্যতম মাধ্যম সালাম। সালাম দেয়া সুন্নত হলেও এর উত্তর দেয়া ওয়াজিব। আর ওয়াজিব তরক করা বড় গুনাহের কারণ। অনেকেই আছেন সালামের উত্তর দেন নিরিবে। 

সেক্ষেত্রে অনেকেই প্রশ্ন করেন, কেউ কাউকে সালাম দিলে সালামের উত্তর নীরবে দেয়া যাবে কি? কীভাবে সালামের উত্তর দিতে হবে? বিষয়টি ছোট হলেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সালামের উত্তর দেয়া সম্পর্কে ইসলামের বিধানই বা কী?

হ্যাঁ! নীরবে সালামের উত্তর দিলে ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে। তবে নীরবে উত্তর না দিয়ে উচ্চস্বরে এবং সুন্দরভাবে মিষ্টি ভাষায় সালামের উত্তর দেয়া জরুরি। তা না হলে এতে বেশকিছু সমস্যার সৃষ্টি হয়। সালামের মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়। তাছাড়া কোরআন এবং সুন্নায় সালামের উত্তর সুন্দর ও উত্তমভাবে দেয়ার বিষয়টি সম্পর্কে সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে।

সালাম হলো দোয়া। সালামের অর্থ হলো- আপনার ওপর শান্তি এবং বরকত বর্ষিত হোক। সুতরাং সালামের উত্তরও সুন্দরভাবে সালাম প্রদানকারীকে শুনিয়ে তার জন্য এভাবে দোয়া করা যে, আপনার ওপরও শান্তি ও বরকত বর্ষিত হোক। হাদিসের নির্দেশনা হলো- সম্ভব হলে আরো বেশি বাড়িয়ে দোয়া করা।

দোয়া করা সম্পর্কে কোরআনুল কারিমে আল্লাহ তায়ালা বলেন,

وَإِذَا حُيِّيْتُم بِتَحِيَّةٍ فَحَيُّواْ بِأَحْسَنَ مِنْهَا أَوْ رُدُّوهَا إِنَّ اللّهَ كَانَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ حَسِيبًا

‘আর যদি কেউ তোমাদের জন্য দোয়া করে (সালাম দেয়), তাহলে তোমরাও তার জন্য দোয়া কর। তার চেয়ে উত্তম দোয়া অথবা তারই মতো ফিরিয়ে বলো। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব বিষয়ে হিসাব-নিকাশ গ্রহণকারী।’ (সূরা: নিসা, আয়াত: ৮৬)।

এ আয়াতের নির্দেশনা অনুযায়ী সালামের উত্তর শুনিয়ে সুন্দরভাবে আরো বাড়িয়ে দেয়া উত্তম। সম্ভব হলে বেশি দোয়া করা। সম্ভব না হলে যেটুকু সালাম বা দোয়া করা হয় ন্যূনতম ততটুকু উত্তর দেয়া বা দোয়া করা জরুরি। এতে পরস্পরের আন্তরিকতা বৃদ্ধি পায়। শত্রুতা দূর হয়ে যায়। ভালোবাসা সৃষ্টি হয়। আল্লাহর রহমত বর্ষিত হয়।

পক্ষান্তরে কেউ যদি সালামের উত্তর সুন্দরভাবে না দেয় বা উচ্চস্বরে শুনিয়ে না দেয় তবে অনেক ক্ষেত্রে তাতে কিছু সমস্যার সৃষ্টি হয়। যেমন: অনেকেই সালামের উত্তম মনে মনে (নীরবে) দিয়ে থাকে। এমনভাবে সালামের উত্তর দেয় যে, এর মাধ্যমে ভালোবাসা সৃষ্টির পরিবর্তে মনের মধ্যে বিদ্বেষ জন্ম নেয়ার অবস্থা তৈরি হয়।

কেউ কাউকে আগ্রহ নিয়ে সালাম দিল, কিন্তু আগ্রহের সঙ্গে উত্তর না পেলে কিংবা খুব নিম্ন স্বরে বা নীরবে উত্তর এলে তাতে সালাম দেয়া ব্যক্তির মনে সন্দেহ বা ক্ষোভের সৃষ্টি হয়, মনোক্ষুণ্ন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে কিংবা ওই ব্যক্তির মাঝে হীনমন্যতা সৃষ্টি হয়।

সালাম দেয়া-নেয়ার ক্ষেত্রে বিষয়টি এভাবে নিয়মিত হতে থাকলে তা এক সময় ভুল বোঝাবুঝিতে পরিণত হয়। পরস্পর সালাম বিনিময়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। সে কারণেই মহান আল্লাহ তায়ালা কোরআনুল কারিমে আয়াত নাজিল করে উত্তম ভাষায় সালাম ও দোয়ার উত্তর দেয়ার প্রতি দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।

মনে রাখতে হবে- একে অপরকে দেখলেই সালাম দেয়া ইসলামের রীতি ও গুরুত্বপূর্ণ একটি বিধান। হাদিসে এসেছে, ‘কথা বলার আগেই সালাম দেয়া।’ (মিশকাত)।

যত কথা ও কাজই থাকুক না কেন, দেখা-সাক্ষাৎ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রথমে সালাম দিতে হয়। এ সালাম দেয়া সুন্নত। সালামের উত্তর দেয়া প্রত্যেকের ওপর ওয়াজিব বা আবশ্যক।

সালাম এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ ও উপকারী বিষয়, যার মাধ্যমে মানুষের সব তিক্ততা-হিংসা-বিদ্বেষ দূর হয়ে যায়। হাদিসে এসেছে, ‘সালামের মাধ্যমে পরস্পরের মাঝে হিংসা-বিদ্বেষ দূর হয়ে ভালোবাসার বন্ধন সৃষ্টি হয়।’ (মুসলিম, আবু দাউদ, মেশকাত)।

মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা মুসলিম উম্মাহকে সালাম দেয়ার পর শুনিয়ে বাড়িয়ে উত্তম ভাষায় সালামের উত্তর দেয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।