• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন

দেশে টিকা দেওয়ার ছক প্রস্তুত

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ১৬ জানুয়ারি ২০২১  

সপ্তাহখানেক পরই দেশে আসছে বহু প্রত্যাশিত করোনাভাইরাসের টিকা। এর জন্য প্রতিদিন সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে বৈঠক, সভা, প্রশিক্ষণসহ নানা ধরনের প্রস্তুতিমূলক কাজ চলছে। টিকা রাখার জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গোডাউনগুলো। আট বিভাগের কোন জেলায় কী পরিমাণ টিকা সরবরাহ করা হবে, সে বিষয়ে একটি খসড়া তৈরি হয়েছে; তবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, কোন এলাকায় আক্রান্তের সংখ্যা বেশি, তা বিবেচনায় নিয়ে টিকা বণ্টনের ছক তৈরি করা হয়েছে। শুরুতে যেসব জেলায় বেশি সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে, সে রকম আট-১০টি জেলায় টিকা যাবে। সারা দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ টিকা পাবে ঢাকা বিভাগ।

গত বুধবার থেকে শুরু হয়েছে টিকাদানকারী কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিতে একটি উচ্চপর্যায়ের প্রশিক্ষক গ্রুপের প্রশিক্ষণ। চিকিৎসকদের ২৫ জনের একটি প্রশিক্ষক দল নিজেরা করোনার টিকা দেওয়ার জন্য প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। পরে তাঁরা অন্যদের প্রশিক্ষণ দেবেন। এ ছাড়া বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে টিকা সরবরাহ ও প্রয়োগ ব্যবস্থাপনাভিত্তিক একটি বৈঠক করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। বৈঠকে চূড়ান্ত পর্যায়ের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা করেন সচিব ও মহাপরিচালকরা; আগের পরিকল্পনাগুলো বিশ্লেষণ করে সে অনুযায়ী কাজ করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. খুরশীদ আলম বলেন, ‘এখনো আমরা কোন কোন জেলায় আগে টিকা যাবে, সেটা চূড়ান্ত করিনি। তবে আমাদের ভাবনা রয়েছে বড় ১০টি শহরবেষ্টিত জেলায় আমরা টিকা পাঠাব। এ ক্ষেত্রে যেখানে বেশি সংক্রমণ রয়েছে, সেদিকটিও বিবেচনায় নেওয়া হবে।’

মহাপরিচালক বলেন, ‘সবার আগে টিকা দেওয়া হবে টিকাদানকারী পর্যায়ের স্বাস্থ্যকর্মীদের। এ ক্ষেত্রে ঢাকায় করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত সরকারি হাসপাতালগুলো প্রাধান্য পাবে। তার সঙ্গে একই সময়ে টিকা দেওয়া হবে মাঠপর্যায়ের একদল স্বাস্থ্যকর্মীকে। বলা যায় পাইলট আকারে তাঁদের টিকা দেওয়া হবে। তাঁরাই পরে সাধারণ মানুষকে টিকা দেবেন। অন্যদিকে আমরা আগামী ৩০ জানুয়ারির মধ্যে টিকাদানকারীদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শেষ করে ফেলব।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ঢাকায় শুরু থেকে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ সংক্রমণ ঘটায় টিকা বণ্টনের ক্ষেত্রেও সবার আগে প্রাধান্য পাবে ঢাকা। খসড়া তালিকার তথ্য অনুসারে প্রথমে আসা ৫০ লাখ ডোজ টিকা থেকে ঢাকা জেলায় থাকবে প্রায় সাড়ে ১২ লাখ ডোজ। আর বিভাগওয়ারি হিসাবে মোট তিন কোটি ডোজ টিকার মধ্যে ঢাকা বিভাগে ৫০ লাখ, চট্টগ্রাম বিভাগে ৩০ লাখ, রাজশাহী বিভাগে ২০ লাখ, রংপুর বিভাগে সাড়ে ১৬ লাখ, খুলনা বিভাগে ১৬ লাখ, সিলেট বিভাগে সাড়ে ১০ লাখ, বরিশাল বিভাগে সাড়ে আট ও ময়মনসিংহ বিভাগে পাঁচ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়া হবে। অর্থাৎ দেড় কোটি মানুষের প্রতিজনকে দুই ডোজ করে মোট তিন কোটি টিকা দেওয়া হবে; যা ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা উদ্ভাবিত টিকা। এ টিকা বেক্সিমকোর মাধ্যমে দেশে আনছে সরকার। 

খসড়া তালিকা অনুযায়ী, জেলা হিসাবে দিনাজপুরে তিন লাখ, কুড়িগ্রামে দুই লাখ, লালমনিরহাটে এক লাখ, গাইবান্ধায় আড়াই লাখ, নীলফামারীতে দুই লাখ, পঞ্চগড়ে এক লাখ, ঠাকুরগাঁওয়ে দেড় লাখ, হবিগঞ্জে দুই লাখ, মৌলভীবাজারে দুই লাখ, ফরিদপুরে দুই লাখ, গাজীপুরে সাড়ে তিন লাখ, গোপালগঞ্জে সোয়া এক লাখ, জামালপুরে আড়াই লাখ, কিশোরগঞ্জে তিন লাখ, মাদারীপুরে সোয়া এক লাখ, মানিকগঞ্জে দেড় লাখ, মুন্সীগঞ্জে দেড় লাখ, নারায়ণগঞ্জে তিন লাখ, নরসিংদীতে আড়াই লাখ, নেত্রকোনায় আড়াই লাখ, রাজবাড়ীতে এক লাখ, শরীয়তপুরে সোয়া এক লাখ, বান্দরবানে ৫০ হাজার, ভোলায় পৌনে দুই লাখ, ঝালকাঠিতে ৭০ হাজার, পটুয়াখালীতে দেড় লাখ, পিরোজপুরে সোয়া এক লাখ, বরগুনায় এক লাখ, বরিশালে আড়াই লাখ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তিন লাখ, চাঁদপুরে আড়াই লাখ, চট্টগ্রামে তিন লাখ, কুমিল্লায় সাড়ে পাঁচ লাখ, কক্সবাজারে আড়াই লাখ, সিরাজগঞ্জে সোয়া তিন লাখ, রংপুরে তিন লাখ, খাগড়াছড়িতে ৬০ হাজার, লক্ষ্মীপুরে পৌনে দুই লাখ, নোয়াখালীতে সোয়া তিন লাখ, রাঙামাটিতে ৬০ হাজার মানুষ টিকা পাবে।

এ ছাড়া বাগেরহাটে দেড় লাখ, চুয়াডাঙ্গায় এক লাখ, যশোরে পৌনে দুই লাখ, পাবনায় আড়াই লাখ, রাজশাহীতে পৌনে তিন লাখ, সুনামগঞ্জে আড়াই লাখ, সিলেটে সাড়ে তিন লাখ, ঝিনাইদহে পৌনে দুই লাখ, খুলনায় আড়াই লাখ, কুষ্টিয়ায় দুই লাখ, মাগুরায় এক লাখ, মেহেরপুরে ৭০ হাজার, নড়াইলে ৮০, সাতক্ষীরায় দুই লাখ, বগুড়ায় সাড়ে তিন লাখ, জয়পুরহাটে এক লাখ, নওগাঁয় পৌনে তিন লাখ, নাটোরে পৌনে দুই লাখ মানুষসহ ৬৪ জেলায় টিকা দেওয়ার খসড়া নিয়ে কাজ করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (টিকা দান) শামসুল হক বলেন, ‘কোন জেলায় কত টিকা যাবে—এমন কিছু এখনো আমরা চূড়ান্ত করতে পারিনি। আমরা শুধু বেক্সিমকোকে আমাদের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের একটি তালিকা ও যোগাযোগের নম্বর দিয়েছি। যাতে করে বেক্সিমকো ওই কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে কোথায় টিকা রাখা হবে তা ঠিক করতে পারে।’

এদিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে করোনাভাইরাসের টিকা প্রয়োগ ও বিতরণ সংক্রান্ত এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের পর স্বাস্থ্যমন্ত্রী উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান, দেশে একসঙ্গে ১৪-১৫ কোটি ডোজ টিকা সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা রয়েছে। প্রথমে দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতেই করোনার টিকা দেওয়া হবে। জেলা পর্যায়ের প্রতিটি হাসপাতালে সংরক্ষিত কোল্ড রুমে প্রায় চার লাখ ২৫ হাজার ডোজ টিকা রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিটি হাসপাতালে পাঁচ থেকে ১০টি আইস ফ্রিজার আছে, যেখানে অন্তত ৭১ হাজার ডোজ টিকা রাখা যাবে। প্রাথমিকভাবে সারা দেশে সাত হাজার ৩৪৪টি টিম টিকা দেওয়ার কাজ করবে। প্রতিটি টিমে ছয়জন স্বাস্থ্যকর্মী থাকবেন।

মন্ত্রী জানান, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর কঠোরভাবে বিষয়টি মনিটর করবে। টিকাসংক্রান্ত সব তথ্য যেন মানুষ দ্রুত জানতে পারে সে জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে নিয়মিত ভ্যাকসিন বুলেটিন প্রচার করা হবে। টিকা দেওয়ার জন্য ৪২ হাজার স্বাস্থ্যকর্মীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। সরকারিভাবে টিকা দেওয়া শুরুর পর দেশের বড় বড় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও টিকা দিতে পারবে সরকারের নীতিমালা অনুসরণ করে।