• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন

দুষ্কৃতিকারীদের দিন ঘনিয়ে এসেছে

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১  

দুষ্কৃতিকারী ও সমাজবিরোধীদের প্রতিরোধে এগিয়ে আসার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান । তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু বলেন, দুষ্কৃতিকারীদের দিন ঘনিয়ে এসেছে। তাদের খুঁজে বের করা হবে। বাংলাদেশের মাটি থেকে তাদের অস্তিত্ব নির্মূল করা হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, সমাজ থেকে দুর্নীতির মূল উচ্ছেদ করতে হবে। আর কাউকেই এদেশের মানুষকে শোষণ করতে দেওয়া হবে না। তিনি দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলেন, দেশের সকল সম্পদ জনগণের। বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষই সকল জাতীয় সম্পদের মালিক।

১৯৭৩ সালের এই দিনে পলাশ ও ঘোড়াশাল এলাকায় হাজার হাজার শ্রমিক সমাবেশে বঙ্গবন্ধু উৎপাদনে সর্বোচ্চ কঠোর পরিশ্রমের উদাত্ত আহ্বান জানান। বঙ্গবন্ধু বলেন, দেশ গড়ার জন্য কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে উৎপাদন বাড়িয়ে তুললে জনগণ উপকৃত হবে। তিনি বলেন, দেশের কৃষক, শ্রমিক, মেহনতি মানুষ কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধি করবেন, তাতে তাদের কল্যাণ ততই বৃদ্ধি পাবে। বঙ্গবন্ধু বলেন, তার সারাজীবনের স্বপ্ন এমন একটি শোষণহীন সমাজ গড়ে তোলা যেখানে দেশের দুঃখী মানুষ খেতে পারবে, পরনে কাপড় পাবে, মাথাগোঁজার ঠাঁই পাবে, পাবে একটি শান্তিময় জীবন।

ধামরাইয়ের বিশাল জনসভায় প্রধানমন্ত্রী

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, এবারের নির্বাচনে বিশ্বকে দেখিয়ে দিতে হবে বাংলার মানুষ বঙ্গবন্ধুর পেছনে ঐক্যবদ্ধ। ধামরাই থানার আলী আব্বাস হাই স্কুল মাঠে বঙ্গবন্ধু বলেন, বাংলার মানুষ এবার নৌকা ছাড়া আর কোথাও ভোট দেবে না। ধামরাই জনসাধারণ দুই হাত তুলে বন্ধুকে সমর্থনে আশ্বাস দেন। বঙ্গবন্ধু বলেন, মাঠে ও কারখানায় উৎপাদন বাড়াতে হবে। দীর্ঘ ২৫ বছর পাকিস্তানের বাংলাদেশের সম্পদ লুট করে নিয়েছে। বারবার পাকিস্তানি শাসকদের কবল থেকে বাংলার মানুষকে মুক্ত করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু বাংলার মীরজাফর এর হাতে হাত মিলিয়েছে বলে আমাদের সংগ্রামে সফল হয়নি। আমার যৌবন কাল কেটেছে কারান্তরে।

পাকিস্তানিরা কী পরিকল্পনা করেছিল

বঙ্গবন্ধু বলেন, ২৫ মার্চ রাতে আমার বাড়িতে হামলা করা হয়। আমার সামনে ৫০ জন বাঙালি সৈন্যকে হত্যা করা হয়। তারপর আমাকে গ্রেফতার করা হয়। পাকিস্তানিদের পরিকল্পনা উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু বলেন, পাকিস্তানিরা পরিকল্পনা করেছিল বাংলার ১২ থেকে ৪০ বছর বয়স পর্যন্ত সকলকে হত্যা করবে। বাঙালিরা কাপুরুষ। কিন্তু আমাদের মুক্তিবাহিনী শ্রমিক-কৃষক ছাত্র-যুব বুদ্ধিজীবী সবাই পাকিস্তানি সৈন্যদের পরাজিত করে প্রমাণ করেছে বাঙালি কিভাবে অত্যাচারী শাসকদের রুখে দিতে পারে। বঙ্গবন্ধু গ্রামে গ্রামে দুর্নীতিবাজ চোরাকারবারি গুণ্ডাদের উৎখাত করার আহ্বান জানান।

আর কারও ওপর শোষণ চলবে না

বঙ্গবন্ধু সকল প্রকার অন্যায় অবিচার দূরীকরণের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, জনগণকে শোষণ করা আর কখনও বরদাশত করা হবে না। বাংলাদেশের মানুষ আর কখনও শোষিত হবে না। হানাদার বাহিনীর দ্বারা দেশের অর্থনীতির সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত হওয়ার ফলে উদ্ভূত পরিস্থিতি উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু বলেন, দেশের ধ্বংসপ্রাপ্ত অর্থনীতি পুনর্গঠনের জন্য কঠোর পরিশ্রম আমাদের করতেই হবে।

৩ বছর দেশ কঠিন অবস্থা পার করছে

১৯৭০ সাল থেকে দেশ কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে পার করছে উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু বলেন, বাংলাদেশকে উপর্যুপরি তিনটি বছর কঠিন অবস্থার মধ্যে কাটাতে হচ্ছে। বিগত ১৯৭০ সালে বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস এসেছিল। ১৯৭১ সালে এক বছর ধরে যুদ্ধ চলছে। এরপর গত বছর সারাদেশে খরা বিরাজ করেছে।

কিছু লোকের চরিত্র বদলায়নি

বঙ্গবন্ধু বলেন, জনগণের নেতা হলে জনগণকে ভালবাসতে হয়। যারা জনগণের চরম দুর্দশার সময়ে নিরাপদে ছিলেন, যারা যুদ্ধবিধ্বস্ত গ্রামাঞ্চলে জনগণের সেবায় গত একবছর দু মুঠো খাবার, কাপড় নিয়ে এগিয়ে যায়নি তারা নির্বাচনের আগে ভোট চাইতে আসছে। কিন্তু জনগণ প্রমাণ করবে মীরজাফরদের বাংলার মাটিতে কোনও স্থান নেই। বঙ্গবন্ধু বলেন, পাকিস্তানের জেল থেকে বেরিয়ে দেখি সোনার বাংলা শ্মশান হয়ে গেছে। গত বছর বিদেশ থেকে আট কোটি মণ খাদ্য আনা হয়েছে। তার মধ্যে ভারত দিয়েছে দুই কোটি ৯০ লাখ মন।

দেশের সকল সম্পদ জনগণের

ঢাকা থেকে ৩০ মাইল দূরে ঘোড়াশালের কাছে এক বিশাল জনসভায় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে ঘোষণা করেন, দেশের সকল সম্পদ জনগণের। দেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষই আমাদের সকল জাতীয় সম্পদের মালিক। কাউকে আর জনগণকে শোষণ করতে দেওয়া হবে না।

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর এই ঘোষণার সঙ্গে আনন্দে উদ্বেলিত হযয়ে ‘জনতা জয় বঙ্গবন্ধু, বঙ্গবন্ধু জিন্দাবাদ’, ‘বঙ্গবন্ধু যেখানে, আমরা আছি সেখানে’ স্লোগান দিতে থাকে। বঙ্গবন্ধু উল্লেখ করেন, দেশের মূল শিল্প কারখানা ব্যাংক-বীমা রাষ্ট্রয়ত্ত করা হয়েছে। এসব শিল্পকারখানা ব্যাংক-বীমার মালিক আজ আর মুষ্টিমেয় ব্যক্তিদের নয়। সব সমগ্র জাতির সম্পদে পরিণত হয়েছে।