• বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১০ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন

দারিদ্র্য জয়ে নতুন মাইলফলক স্থাপন করেছে বাংলাদেশ

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ২৮ মার্চ ২০২০  

১৯৭২ সাল থেকে দেশে দারিদ্র্যের হার ক্রমশ কমছে। মুক্তিযুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে ওই সময়ে দারিদ্র্যের হার ছিল ৭৮ শতাংশ। সর্বশেষ ২০১৮ সালের হিসাব অনুযায়ী তা ২১ দশমিক ৮ শতাংশে নেমে এসেছে। দারিদ্র্যের হার কমানোয় ধরাবাহিক অগ্রগতির চিত্রে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের মন্তব্য, দারিদ্র্য জয়ে বাংলাদেশ মাইলফলক স্থাপন করেছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব পর্যালোচনা করে এ চিত্র প্রকাশ করেছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। বঙ্গবন্ধু জন্মশতবাষির্কীতে মধ্যম আয়ের পথে বাংলাদেশ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছে। প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে পরিকল্পনা বিভাগ। সর্বশেষ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) বৈঠকে প্রতিবেদনটি উপস্থাপনও করা হয়।

প্রতিবেদন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনা সচিব নুরুল আমিন বলেন, বাংলাদেশের এই অর্জন টেকসই ও পরিকল্পিত উন্নয়নের ফল। সরকারের বিভিন্ন আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে উন্নয়ন অগ্রগতির একটি খণ্ডচিত্র এ প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে।

সচিব বলেন, বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ আজ উন্নয়ন ও অগ্রগতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ দারিদ্র্য নিরসনে, নারীর ক্ষমতায়নের শিক্ষা বিস্তার, তথ্যপ্রযুক্তির অগ্রগতি, বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং পরিবেশ রক্ষাসহ বিভিন্ন খাতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সামনে রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। দ্রুততম সময়ে আর্থসামাজিক উন্নয়নের রূপরেখা বাস্তবায়নে এ দেশের ঈর্ষণীয় সক্ষমতা এরই মধ্যে প্রমাণিত।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ৭৮ শতাংশ। বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের সময় ২০০৯ সালে এই ছিল ৩৩ দশমিক ৪ শতাংশ। এরপর ২০১০ সালে ৩১ দশমিক ৫ শতাংশ, ২০১১ সালে ২৯ দশমিক ৯ শতাংশ, ২০১২ সালে ২৮ দশমিক ৫ শতাংশ, ২০১৩ সালে ২৭ দশমিক ২ শতাংশ, ২০১৪ সালে ২৬ শতাংশ, ২০১৫ সালে ২৪ দশমিক ৮ শতাংশ, ২০১৬ সালে ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ, ২০১৭ সালে ২৩ দশমিক ১ শতাংশ এবং ২০১৮ সালে ২১ দশমিক ৮ শতাংশে এসে দাঁড়ায় দারিদ্র্যের হার। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দারিদ্র্য নিরসনে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ বাস্তবায়নের ফলেই ধারাবাহিক এই অগ্রগতি সম্ভব হয়েছে।

কেবল দারিদ্র্য নয়, অতি দারিদ্র্যের হার কমার ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের অগ্রগতি উল্লেখযোগ্য। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশে অতিদরিদ্র জনগোষ্ঠী ছিল মোট জনসংখ্যার ৪৪ শতাংশ। ২০০৯ সালে তা কমে হয় ১৯ দশমিক ৩ শতাংশ। এরপর ২০১০ সালে ১৭ দশমিক ৬ শতাংশ, ২০১২ সালে ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ, ২০১৪ সালে ১৩ দশমিক ৮ শতাংশ, ২০১৬ সালে ১২ দশমিক ৯ শতাংশ, ২০১৭ সালে ১২ দশমিক ১ শতাংশ ও সবশেষ ২০১৮ সালের হিসাবে ১৩ দশমিক ৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে অতি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পরিমাণ।

দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশের বিশেষত গত ১০ বছরের এই সাফল্য সারবিশ্বের জন্যই উদাহরণ— এমনটিই মনে করেন পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম। তিনি  বলেন, যেসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশের উন্নতি হয়েছে, দারিদ্র্য তার মধ্যে অন্যতম। কেবল আমরাই এই সাফল্যের কথা বলছি না, বিশ্বব্যাংকও এরই মধ্যে বাংলাদেশকে দারিদ্র্য হ্রাসের ক্ষেত্রে রোল মডেল হিসেবে ঘোষণা করেছে।

পরিকল্পিত অর্থনৈতিক পরিকল্পনা দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশের এই অগ্রগতির পেছনের কারণ হিসেবে মনে করেন ড. শামসুল আলম।তিনি বলেন, সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা, সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা, রূপকল্প ২০২১, এজেন্ডা ২০৩০, রূপকল্প ২০৪১ এবং বদ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ প্রণয়ন করেছে। তবে সরকার শুরু পরিকল্পনা প্রণয়নেই থেমে থাকেনি, পরিকল্পনা বাস্তবায়নেও নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এরই মধ্যে ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা শেষ হয়েছে, সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা শেষ হবে আগামী জুন মাসে। প্রথম রূপকল্প শেষের পথে। ফলে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা নিয়ে কাজ চলছে। সস্প্রতি দ্বিতীয় রূপকল্পও অনুমোদন পেয়েছে। এছাড়াও সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলসহ বিভিন্ন পরিকল্পনা ও উদ্যোগ বাস্তবায়নের ফল হিসাবে দারিদ্র্যের হার উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমেছে।