• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন

ত্রাণ বিতরণ নিয়ে বিএনপি নেতার কাণ্ড!

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ১১ এপ্রিল ২০২০  

করোনা পরিস্থিতিতে ত্রাণ বিতরণ নিয়ে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার বোয়ালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দীন বিশ্বাস। ফেসবুকে লাইভে ত্রাণ দেয়ার দৃশ্য প্রচারের সময় তিনি কখনো মাথায়, কখনো ঘাড়ে ধাক্কা দিয়ে সাহায্য-গ্রহীতাকে বাধ্য করছেন ফেসবুক সম্প্রচারে মুখ দেখাতে। কখনো আবার পেছন থেকে বৃদ্ধার শাড়িও টেনে ধরছেন ছবি না তোলায়।

সম্প্রতি এরকমই এক ভিডিও ভাইরাল হয়েছে ফেসবুকে। এতে দেখা যাচ্ছে, একেকজন করে লাইন থেকে সামনে আসছেন। হাতের টোকেনটি মাস্ক পরে থাকা লোকটির হাতে তুলে দিলে পাশে থেকে আরেকজন এগিয়ে দিচ্ছেন পাটের একটি ব্যাগ। তাতে ত্রাণের খাদ্যসামগ্রী। তবে চাইলেই তা নিয়ে চলে যেতে পারছেন না ত্রাণ নেওয়া ব্যক্তি। শুরুতে যার হাতে টোকেন তুলে দিয়েছেন তিনি কখনো মাথায়, ঘাড়ে ধাক্কা দিয়ে ব্যক্তিকে বাধ্য করছেন চলমান ফেসবুক সম্প্রচারে মুখ দেখাতে।

ঘটনাটি শুক্রবারের (১০ এপ্রিল)। ভিডিওতে দেখা যায়, ত্রাণগ্রহীতা ব্যক্তিরা দুস্থ ও অতিদরিদ্র শ্রেণির মানুষ। বেশিরভাগই বয়োবৃদ্ধ। জরাজীর্ণ পোশাক। শরীর-স্বাস্থ্যও ভালো না। শরীর এতটাই দুর্বল যে কেউ কেউ ত্রাণসামগ্রীর ব্যাগটি তুলতেও হিমশিম খাচ্ছিলেন। মাথা নিচু করে ত্রাণসামগ্রী নিতে গিয়ে ভিডিওতে মুখ না দেখানোয় এক লোকের গালে বিএনপি নেতা ও চেয়ারম্যান মহিউদ্দীন বিশ্বাস এমনভাবে ধাক্কা দেন যে, মুখের মাস্কটি খুলে পড়ে যায়। পড়ে সেটি মেঝে থেকে আরেকজন ছুড়ে বাইরে ফেলে দেন।

তারপরই একজন বৃদ্ধা ত্রাণের ব্যাগটি নিয়ে চলে যাওয়ার সময় চেয়ারম্যান পেছন থেকে তার শাড়ির আঁচল টেনে ধরেন। ওই নারী তখনো বুঝে উঠতে পারেননি কেন তাকে পেছন থেকে এভাবে ধরা হলো। পরে ভিডিওগ্রাফারের অনুরোধে তাকে যেতে দেওয়া হয়। একই ধরনের দুর্ব্যবহারের আচরণের শিকার হন একজন প্রবীণ নাগরিকও। শিকার হতে হয়েছে অবহেলাসূচক বাক্যালাপেরও।

ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার পর শুরু হয় সমালোচনা। কেউ কেউ এই ধরনের অসদ্ব্যবহার ও অশোভন আচরণের বিচার দাবি করেছেন।

বিষয়টি উল্টো সাংবাদিকদের ওপর চাপানোর চেষ্টা করেছেন এই বিএনপি নেতা। তিনি বলেন, ‘ভিডিওটা আমার অফিসের কম্পিউটার অপারেটর অনিক আহমেদ করছিল। ও ভালোভাবেই করছিল। কিন্তু সাংবাদিকরা কাটছাঁট করে দেখিয়েছে। আমি কারো গায়ে হাত দেইনি।’

ত্রাণ বিতরণের ছবি কিংবা ভিডিও করার কোনো বাধ্যবাধকতা স্থানীয় প্রশাসন থেকে ছিল কি না? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না কেউ বলেনি। আজকাল দেখি সবাই দেখায়, ত্রাণ দিলাম, তাই দেখালাম।’

এ ব্যাপারে কুষ্টিয়া জেলার স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মৃণাল কান্তি দে বলেন, ‘আমি জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলেছি। বোয়ালিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কেন মানুষের সঙ্গে অসদ্ব্যবহার করলেন তা জানতে চেয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ করা হবে।’

এর আগে ২০১৭ সালে অনিয়মের অভিযোগে বোয়ালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ১২ সদস্য বিএনপি নেতা মহিউদ্দীন বিশ্বাসের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রকাশ করেছিলেন।