• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন

ডায়াবেটিসে কী খাবেন কী খাবেন না, জানুন সঠিক ডায়েট চার্ট

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ১ সেপ্টেম্বর ২০২০  

দিন দিন সারাবিশ্বেই বাড়ছে ডায়াবেটিসে আক্রান্তের সংখ্যা। যারা ডায়াবেটিস রোগী তারা খাবার নিয়ে নানা রকম দ্বিধায় ভুগে থাকেন। কোন খাবারটি খাওয়া তাদের জন্য উপকারী আর কোনটি নয়, এই নিয়ে অনেকেই অনেক রকম মত প্রকাশ করে থাকেন। যা তাদের সঠিক তথ্যটি জানতে বাধা দেয়।  

ডায়াবেটিসে খাবার নিয়ে যাদের ভ্রান্ত ধারণা আছে, তাদের জন্যই আমাদের আজকের প্রতিবেদন। এই প্রতিবেদনই আপনাকে সহায়তা করবে, ডায়াবেটিসে কী খাবেন কী খাবেন না এবং একটি সঠিক ডায়েট চার্ট সম্পর্কে জানতে। চলুন তবে জেনে নেয়া যাক বিস্তারিত-  

> বেশি মিষ্টি বা চিনি খেলে ডায়াবেটিস হয়। ধারণাটি ভুল। আসলে বেশি মিষ্টি খেলেই ডায়াবেটিস হয় না। মিষ্টি শর্করা জাতীয় খাবার। ভাত, রুটি, এগুলোও শর্করা জাতীয় খাবার। পেটের ভেতরে অবস্থিত অগ্ন্যাশয় থেকে নিঃসৃত হরমোন ‘ইনসুলিন’ রক্তের শর্করা বা গ্লুকোজ ভেঙে শরীরে শক্তি উৎপন্ন করে। অগ্ন্যাশয় থেকে ইনসুলিন নিঃসরণ না হলে বা কম হলে রক্তে গ্লুকোজ বা চিনির পরিমাণ বেড়ে যায়। এ অবস্থাই ডায়াবেটিস। কোনো কারণে ইনসুলিন কাজ করতে না পারলেও ডায়াবেটিস হয়। সুতরাং বেশি বেশি মিষ্টি খেলেই যে ডায়াবেটিস হবে, তা ঠিক নয়।

> তবে একসঙ্গে বেশি মিষ্টি খেলে হঠাৎ করেই রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেশি হয়ে যাবে এবং অগ্ন্যাশয়ের ওপর বাড়তি চাপ পড়বে। তখন এটা সমস্যা। তাছাড়া বেশি মিষ্টি মানে বেশি ক্যালরি গ্রহণ। সেক্ষেত্রে ঠিকমতো হাঁটাহাঁটি বা ব্যায়াম না করলে সে ক্যালরি শরীরে জমা হবে এবং শরীর মোটা হয়ে যাবে। তাতে ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যাবে।

> ডায়াবেটিক খাবার নির্বাচনে অনেক নিয়মকানুন মানতে হয়। এটিও ভুল তথ্য। আসলে অনেক নিয়ম মানতে হয় না। আহার হবে পরিকল্পিত। দৈনন্দিন কাজকর্মের চাহিদা মেটাবে রোজকার খাবার। খাবারটা অন্যদের খাবারের মতো স্বাভাবিক খাবারই। তা হতে হয় শরীরের ক্যালরির চাহিদা অনুযায়ী পরিমিত এবং সুষম। তাতে যেসব শর্করাজাতীয় খাবার খেলে রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা ধীরে ধীরে বাড়ে, এমন পূর্ণ দানাশস্য বা গোটাশস্যের শর্করা ও আঁশ এবং সবজি থাকবে বেশি, আর তেল-চর্বি থাকবে কম। যেসব ফলে শর্করার পরিমাণ বেশি, সেসব ফলও খেতে হবে পরিমিত। খাবার হতে হবে এমন যাতে ব্যায়াম বা প্রয়োজনে ওষুধের মাধ্যমে রক্তের চিনির মাত্রা থাকবে মেটামুটি স্বাভাবিক মাত্রায়।

> ডায়াবেটিস হলে পছন্দের সব খাবার খাওয়াই বন্ধ হয়ে যায়! আসলে তা নয়। খেতে হবে পরিমিত পরিমাণে এবং অবশ্যই পরিকল্পিত উপায়ে। হয়তো পরিমাণটা একটু কমাতে হতে পারে।

> ডায়াবেটিস হলে সব সময় বিশেষ ‘ডায়াবেটিক’ খাবারই খেতে হবে। এমনটি সঠিক নয়। বাড়ির অন্য সদস্যরা যে খাবার খাবে, ডায়াবেটিস রোগীও সে খাবার থেকেই খেতে পারবে। শুধু ক্যালরি, শর্করার ধরন, আমিষ, সবজি আর তেল-চর্বির দিকে খেয়াল রাখতে হবে।

> ডায়াবেটিস রোগীর জন্য শর্করা জাতীয় খাবার খারাপ। তবে শর্করা জাতীয় খাবার খাদ্যতালিকায় রাখতেই হবে। এ খাবার রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। সুতরাং একটু হিসেব করে খেতে হবে। যেসব শর্করা রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা তাড়াতাড়ি বাড়ায়, সেগুলো কম খেতে হবে। যেমন- চিনি, মিষ্টি, বেশি ছাঁটা চালের ভাত, ময়দার রুটি। যেসব শর্করা রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা ধীরে ধীরে বাড়ায়, সেগুলো খাওয়া যাবে বেশি। যেমন- লাল চালের ভাত, লাল আটার রুটি, সবজি, গোটা শস্যদানা। ক্যালরিটা হিসেবে রাখতে হবে অবশ্যই।

> ডায়াবেটিস রোগীর জন্য আমিষ জাতীয় খাবার ভালো। আমিষ হতে হবে পরিমিত। মোট ক্যালরির ১৫ থেকে ২০ শতাংশ যেন আসে আমিষ থেকে। বেশি আমিষ ভালো নয়। আমিষের সঙ্গে খাওয়া হয়ে যায় স্যাচ্যুরেটেড চর্বি, যা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াবে।

> ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কালো জাম, জামরুল, কামরাঙ্গা, আমড়া, আমলকী, জাম্বুরা, কচি ডাব ইত্যাদি ফল উপকারী।

> ডায়াবেটিস হলে ওষুধের মাত্রা কম বেশি করে বা সমন্বিত করে যত খুশি এবং যা খুশি খাওয়া যাবে। ইনসুলিন বা অন্য ওষুধের মাত্রাটা একটু বাড়িয়ে দিয়ে একটু বেশি খেয়ে নিলেও বিপত্তি হতে পারে। বাড়তি ক্যালরির কোনো প্রয়োজন নেই। ওষুধ নিলেও খাবার হতে হবে পরিমিত এবং সুষম।

> ডায়াবেটিসে কৃত্রিম মিষ্টি বিপজ্জনক। কৃত্রিম মিষ্টি চিনির চেয়ে বেশি মিষ্টি। তবে ক্যালরি কম।

> যে খাবার খেয়ে ডায়াবেটিস রোগী ডাক্তারের পরামর্শ মতো ব্যায়ামের মাধ্যমে কিংবা ব্যায়াম ও ওষুধের মাধ্যমে রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে পারবেন এবং অভিজ্ঞ পুষ্টিবিদের কাছে পাবেন প্রয়োজনীয় ক্যালরি সমৃদ্ধ ডায়েট চার্ট, সেটাই হবে আসল ‘ডায়াবেটিক খাবার’। সেই সঙ্গে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে রক্তের তেল-চর্বির মাত্রাও।

ডায়াবেটিস রোগীদের খাবারের সময় ও পরিমাণের ওপর নজর দেয়া একান্ত জরুরি। তাই সাধারণ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য রইল একটি উপকারী ডায়েট চার্ট। চলুন জেনে নেয়া যাক সেটি-

সকাল ৬টা- আধা চামচ মেথি গুঁড়া + পানি।

সকাল ৭টা- এক কাপ চিনি ছাড়া চা + এক-দুটি মেরি বিস্কুট।

সকাল সাড়ে ৮টা- এক প্লেট ওটমিল +  আধবাটি অঙ্কুরিত শস্য + ১০০ মিলি ক্রিম ও চিনি ছাড়া দুধ।

সকাল সাড়ে ১০টা- একটি ছোট ফল বা এক কাপ চিনি ছাড়া বাটারমিল্ক বা লেবু জল।

১টায় দুপুরের খাবার- দুটি রুটি, মিক্সড সবজি, এক বাটি ভাত, এক বাটি ডাল, এক বাটি দই, আধকাপ সয়াবিন, আধবাটি সবুজ সবজি ও এক প্লেট সালাদ।

বিকাল ৪টা- এক কাপ চা চিনি ছাড়া, এক-দুটি টোস্ট বিস্কুট।

সন্ধ্যা ৬টা- এক কাপ স্যুপ।

রাত সাড়ে ৮টা- দুটি রুটি, এক বাটি ভাত, এক বাটি ডাল, আধা বাটি সবুজ সবজি, এক প্লেট সালাদ।

রাত সাড়ে ১০টা- এক কাপ দুধ, ক্রিম ও চিনি ছাড়া।

এছাড়া খিদে পেলে কাঁচা সবজি, সালাদ, চা, স্যুপ, লেবু পানি খেতে পারেন। তবে গুড়, চিনি, মধু, মিষ্টি, শুকনো ফল খাবেন না।

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য পরামর্শ

>  প্রতিদিন অন্তত ৩৫ থেকে ৪০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন।

> ডায়াবেটিস রোগীদের সময়মতো খাবার খাওয়া প্রয়োজন। খাবারের বিরতি দেয়া একেবারেই চলবে না।

>  তৈলাক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন।

>  ফাইবার-জাতীয় খাবার খাদ্যতালিকায় রাখুন। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা ঠিক রাখে।

>  খুব বেশি উপোষ করবেন না।

>  বেশি তাড়াতাড়ি খাবার খাবেন না। ডায়াবেটিস রোগীদের সব সময় ধীরে খাবার খাওয়া উচিত।