• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৭ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন
ব্রেকিং:
বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে: রাষ্ট্রপতি শারীরিক ও মানসিক বিকাশে খেলাধুলা গুরুত্বপূর্ণ: প্রধানমন্ত্রী বিএনপির বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক মামলা নেই: প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পশুপালন ও মাংস প্রক্রিয়াকরণের তাগিদ জাতির পিতা বেঁচে থাকলে বহু আগেই বাংলাদেশ আরও উন্নত হতো মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতার প্রতি নজর রাখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর প্রধানমন্ত্রী আজ প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ উদ্বোধন করবেন মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব না খাটানোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর দলের নেতাদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানায় শেখ হাসিনা মুজিবনগর দিবসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা

জ্বালানি খাতে বঙ্গবন্ধুর পদক্ষেপের ধারা অব্যাহত রাখার তাগিদ

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ৯ আগস্ট ২০২০  

বঙ্গবন্ধু  জ্বালানি খাতে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ এবং স্বনির্ভরতার ওপর জোর দিয়েছিলেন। আমাদেরও সেটি করতে হবে। জ্বালানি নীতি সরকারের সার্বিক চিন্তার মধ্যে রাখতে হবে। বঙ্গবন্ধুর দুঃসাহসিক পদক্ষেপে  এ খাতের মেরুদণ্ড গড়ে দিয়ে গিয়েছিলেন। আমাদের সেই ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা দিবস উপলক্ষে রবিবার (৯ আগস্ট) জ্বালানি বিভাগের আয়োজনে অনলাইনে সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক ই ইলাহী চৌধুরী বলেন, ‘জ্বালানি নীতি সরকারের সার্বিক চিন্তার মধ্যে রাখতে হবে। আমরা মানুষের উন্নয়ন চাই।’ তিনি বলেন, ‘আমরা গ্যাস ও বায়ুর সম্পদের মূল্যায়ন করেছি।’ দেশের ভোলাতে আরও গ্যাস পাওয়া যাবে বলে মনে করেন তিনি। কয়লা উত্তোলনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কয়লা তুলতে গেলে জমি আর ফেরত পাবো না। এজন্য আমরা একটি সমীক্ষা করেছি। এই সমীক্ষায় অনেকগুলো সমস্যা আমাদের সামনে এসেছে। এগুলো বিবেচনায় নিয়েই কাজ করতে হচ্ছে। আমাদের সাগরে যদি গ্যাস পাওয়া যায়, তাহলে তা আসতে ১০ বছর লাগবে। এজন্য বিকল্প চিন্তাও একই সঙ্গে করতে হবে।’ উপদেষ্টা জ্বালানি ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানান। একইসঙ্গে মানসম্পন্ন জ্বালানি সরবরাহেরও নির্দেশ দেন তিনি।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেন, ‘৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে বাংলাদেশকে অন্ধকারে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল। ৯ আগস্ট আমাদের জন্য একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ দিন। যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশে ৫টি গ্যাস ক্ষেত্র কিনে নেন বঙ্গবন্ধু। তার স্বনির্ভর জ্বালানি খাতের দর্শন অনুসরণ করেই বর্তমান সরকার কাজ করছে। এতে করে আমাদের নিজস্ব গ্যাস উৎপাদন বেড়েছে। এছাড়াও জ্বালানির সংস্থান নিশ্চিত করতে আমদানি করা হচ্ছে। এতে করে আমাদের রফতানি বাড়ছে। আমরা সম্পদের সুষ্ঠু পরিকল্পনা করছি। এখন বৈশ্বিক জ্বালানি খাতে পরিবর্তন হচ্ছে। এজন্য লম্বা সময় ধরে একই পরিকল্পনা কাজ করবে না। এজন্য বহুমুখী জ্বালানি ব্যবহার করছে সরকার। কিন্তু আমাদের কারিগরি জ্ঞান এবং দক্ষ জনবলের অভাবের কারণে অনেক কাজ দ্রুতই করা যায় না।’ তিনি বলেন, ‘বিএনপি সরকারের সময় মিয়ানমারের থেকে ভারত পাইপ লাইন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পাকিস্তানের কথা শুনে বিএনপি সেই উদ্যোগে সংযুক্ত হয়নি। এতে করে আমরা ২০/২৫ বছর পিছিয়ে গেছি।’ তিনি বলেন, ‘সবাইকে সাশ্রয়ী মূল্যে জ্বালানি দেওয়ার প্রচেষ্টা রয়েছে সরকারের।’

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানির  সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘জ্বালানি ব্যবহারের সঙ্গে বাড়ছে মানুষের উন্নয়ন এবং জিডিপি। এখন আমরা জ্বালানি ব্যবহারে মধ্যম আয়ের দেশের নিচের দিকে রয়েছি। এটা আস্তে আস্তে বাড়ছে।’ কিন্তু জ্বালানি সরবরাহে আমাদের সাশ্রয়ী, নির্ভরযোগ্য এবং টেকসই হতে হবে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, ‘গ্যাসের উৎপাদন ২০১৮ সাল পর্যন্ত বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়েছে। এখন এই উৎপাদন কমতে শুরু করেছে। এখন উন্নয়ন না করলে চাহিদা এবং সরবরাহে একটি বড় পার্থক্য তৈরি হবে’। যা দূর করা প্রয়োজন বলে জানান তিনি। এখন গ্যাসের পরিবর্তে মানুষ আস্তে আস্তে বিদ্যুৎ ব্যবহার বাড়ছে। তিনি বলেন, ‘সাগর এবং স্থলভাগে অনুসন্ধান, নবায়নযোগ্য জ্বালানির উন্নয়ন একই সঙ্গে পারমাণবিক জ্বালানি ব্যবহার বাড়াতে হবে।’ তিনি সাগরে এবং স্থলভাগে তেল গ্যাস অনুসন্ধানে সরকারের নেওয়া উদ্যোগগুলোর বিষয়ে কথা বলেন।  কামরুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের আস্তে আস্তে জীবাশ্ম জ্বালানির প্রতি নির্ভরতা কমিয়ে আনতে হবে। এখন প্রতি বছর ৬০ লাখ টন জ্বালানি তেল আমদানি করা হয়। এজন্য আমাদের বিকল্প চিন্তা করতে হবে।’

ভূতাত্ত্বিক এবং  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন ভূইয়া বলেন, ‘দেশে যে পরিমাণ কূপ খনন করা হয়েছে। কোনও কোনও দেশে একটি গ্যাস ক্ষেত্রেই এ রকম কূপ খনন করা হয়। আমরা এখনও পর্যন্ত প্রধান মজুতগুলোকে লক্ষ্য নির্ধারণ করে কূপ খনন করেছি। এখন আমাদের উচিত অন্য জায়গাতে অনুসন্ধান করা।’ এজন্য তৃতীয়মাত্রার জরিপ চালানোর জন্য তিনি অনুরোধ জানান।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক জ্বালানি উপদেষ্টা ড. ম. তামিম বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ এবং স্বনির্ভরতার ওপর জোর দিয়েছিলেন। আমাদেরও সেটি করতে হবে। বঙ্গবন্ধু বেসরকারি বিনিয়োগও উৎসাহিত করেছেন জ্বালানি খাতে।’

বিদ্যুৎ জ্বালানি খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. শহিদুজ্জামান সরকার বলেন, ‘জ্বালানি নিরাপত্তায় তার সরকার কাজ করে যাচ্ছে। তবে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে আমদানি নির্ভরতা কমাতে হবে।’

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন জ্বালানি বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আনিসুর রহমান। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সংসদীয় স্থায়ি কমিটির সদস্য আবু জাহির, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান এবি  আবদুল ফাত্তাহ,  বিপিসি চেয়ারম্যান সামছুর রহমান। অন্যদের মধ্যে বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব ড. সুলতান আহমেদসহ পিডিবি, আরইবি চেয়ারম্যান এবং বিভিন্ন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন।