• বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন

জিহ্বার রঙ দেখে স্বাস্থ্য সমস্যা নির্ণয়

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ২০ মার্চ ২০১৯  

ডাক্তার এর কাছে কোনো সমস্যা নিয়ে গেলেই ডাক্তার পরীক্ষা-নিরিক্ষা ও বিভিন্ন পর্যবেক্ষন এর সময় একবারের জন্য হলেও আমাদের জিহ্বা দেখে থাকেন। আমরা হয়ত বুঝি না বা জানি না কেনো এটা তারা করে থাকে। কিই বা বোঝা যায় এর মাধ্যমে!   আসলে জিহ্বার আকার, আকৃতি, গঠন ও রঙ আমাদের অনেক রোগ সম্পর্কে সংকেত দিয়ে থাকে।   জিহ্বা প্রধানত আমাদের পরিপাকতন্ত্রের খবর জানায়।  কয়েক শতাব্দী পুরনো এ পন্থা  চীনাদের চিকিৎসা পদ্ধতির অঙ্গ ছিল।  দেহের কোনো জায়গায় কোন সমস্যা আছে কিনা তা তিনি জিহ্বা দেখে বুঝা যায়।
 সাধারণত সুস্থ শরীরে জিহ্বার রং হালকা গোলাপী থাকে যার অর্থ হলো শরীরে তেমন কোনো বিশেষ রোগ নেই এবং পরিপাকতন্ত্রও ঠিকমতো কাজ করছে। যদি জিহ্বার রং বিভিন্ন ধরনের হয় অর্থাৎ জিহ্বার রঙের পরিবর্ত্ন হয় তাহলে বুঝতে হবে তা শারীরিক কোন না কোন সমস্যার জানান দিচ্ছে ।  
আসুন বিস্তারিতভাবে জেনে নেই কিভাবে জিহ্বার রঙ দেখে  বিভিন্ন শারীরিক  সমস্যা নির্ণয়ের প্রাথমিক ধারণা পাওয়া যায়-
জিহ্বার  বিভিন্ন রঙ ও বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা:

♦ জিহ্বায় সাদা আবরণঃ

সাদা জিহ্বা সাধারণত ক্ষণস্থায়ী তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে এটি দীর্ঘস্থায়ী এবং বারবার হতে পারে।

 জিহ্বায় সাদা পাতলা আবরণ থাকলে ধরে নিতে হবে রোগীর হজমে তেমন কোনো সমস্যা নেই এবং তাঁর পরিপাকতন্ত্র ঠিকভাবে কাজ করছে।

কিন্ত যদি জিহ্বায় মোটা সাদা আবরন পরে তবে তা শরীর খারাপের লক্ষন। এর দ্বারা বুঝে নিতে হবে রোগীর শরীরের ভেতরে কোনো সমস্যা হচ্ছে  এবং বুঝতে হবে শরীরের কোনো একটা অংশ ঠিকমতো কাজ করছে না।

জিহ্বায় সাদা হওয়ার কারণ :

জিহ্বায় সাদা আবরণ সৃষ্টি হওয়ার পিছনে প্রধান কারণ হলো জিহ্বার প্যাপিলাতে প্রদাহ, যা সূক্ষ্ম খাদ্যকণা, ব্যাকটেরিয়া বা মৃত কোনো কোষ প্যাপিলাতে আবদ্ধ হওয়ার কারনে ঘটে থাকে। তবে অন্যান্য অনেক কারণে জিহ্বার  প্যাপিলার প্রদাহ হতে পারে যেমন- ধূমপান, মদ্যপান,পানিশূন্যতা। অনেকের আবার ঘুম থেকে ওঠার পর মাঝে মাঝে সাদা জিহ্বা দেখা যায় যা ঠাণ্ডাজনিত কোনো অসুখ বা অ্যালার্জির কারণে হতে পারে।  সাধারণ কারণ ছাড়াও বিভিন্ন অসুস্থতার কারণে জিহ্বা সাদা হতে পারে যেমন ১. ক্যান্ডিইয়াসিস ২. সব সময় অসুস্থ থাকা ৩. দেহে ভাইরাসের আক্রমণ ৪. এইডস্ এর কারণে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়লে ৬. ডায়রিয়ায় পানি শূন্যতা বেশি হলে ৭. অ্যাজমার জন্য স্টেরয়েড ইনহেলার ব্যবহার করলে। এছাড়া যেসব ওষুধ সেবনের কারণে শুষ্ক মুখ হয়ে যায় সেক্ষেত্রে জিহ্বা সাদা হতে পারে।

এ অবস্থায় করণীয়:

সাধারণভাবে সাদা জিহ্বার এ অবস্থা দূর করতে কিছু  কাজ করতে হবে।  সেগুলো হলো- ১. নিয়মিত ব্রাশ করা ও ব্রাশ করার সময় জিহ্বা পরিষ্কার কতা। ২.ধূমপানের অভ্যাস থাকলে তা অবিলম্বে পরিহার করা। ৩. পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা। ৪. অধিক পরিমাণে আঁশযুক্ত খাবার গ্রহণ করা।

 

জিহ্বার উপরে লালচে গোটা ও  চামড়া ওঠা:

শরীরে এনার্জি বলতে কিছুই অবশিষ্ট নেই এমন পরিস্থিতি হলে জিহ্বার উপরিভাগে লাল চাকা চাকা  হয়ে চামড়া উঠে যায়। তবে কোনো ধরনের এলার্জির কারণেও এমনটা হতে পারে।   

জিহ্বা ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া:

শরীরে ঠিকমতো হজম না হলে জিহ্বা ফ্যাকাশে হয়ে যায়। এছাড়া শরীরের ভেতরে ভেতরে ঠাণ্ডা লাগলে এ ধরনের সমস্যা হতে পারে। রক্তস্বল্পতার লক্ষণের জন্য ফ্যাকাশে হয়ে পাশাপাশি জিহ্বা বারবার শুকিয়ে যেতে পারে।

জিহ্বা হলুদ রং হওয়া:

লিভারের কোনো সমস্যা যেমন, জন্ডিস হলে জিহ্বার রং হলুদ হয়ে যেতে পারে। এছাড়া জ্বর হলেও জিহ্বার রং  মাঝে মধ্যে হলুদ হতে পারে।   

জিহ্বা লাল রং হওয়া:

শরীরের কোথাও ইনফেকশন হলে জিহ্বা উজ্জল লাল বর্নের হতে যেতে পারে। এ ধরনের সমসায় প্রথমে জিহ্বার অগ্রভাগ  লাল হয়, তা পুরো  জিহ্বায় ছড়িয়ে পড়ে। চর্বি জাতীয় খাবার ও মশলাযুক্ত খাবার বেশি খেলে জিহ্বায় লাল রং হতে পারে। কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা থাকলেও জিহ্বার রং এরুপ হতে পারে। এছাড়া  যারা অতিরিক্ত এলকোহল গ্রহন করে তাদের শরীরে এলকোহলের মাত্রা বেড়ে গেলে জিহ্বা লাল রং এর হতে পারে।

জিহ্বার রঙ নীল  হওয়া:

দেহে অক্সিজেনের অভাব হলে জিহ্বার রং নীল হয়ে যেতে পারে। এই অবস্থাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় “সায়ানোসিস” হিসাবে পরিচিত। রক্তে সমস্যা, হৃদযন্ত্রের সমস্যা এবং ফুসফুসের জটিলতার কারণে  এমনটি ঘটতে পারে। তবে অন্যান্য লক্ষণ এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া নিশ্চিতভাবে কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যাবেনা।  

জিহ্বায় খয়েরী রংয়ের দাগ:

যদি কখনো কারও জিহ্বার কোনো একটি স্থানে বেশ গাঢ় খয়েরী দাগ দেখা দেয় তবে তা ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে। এ বিষয়ে আদৌ কোনো প্রকার অবহেলা করা উচিত নয়। তাই এ অবস্থায় সময়ক্ষেপণ  না করে জরুরী ভিত্তিতে বিশেষজ্ঞ  ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।

জিহ্বায় কালো রঙের দাগ:

জিহ্বায় প্রচুর পরিমাণে ব্যাকটেরিয়া জমা হলে তা হঠাৎ কালো রং ধারণ করতে পারে। এছাড়া কোন কোন ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসাবেও    জিহ্বার রং কালো হয়ে যেতে পারে।   

জিহ্বার পার্পল রং:

শরীরে কখনো কোনো ভিটামিনের ভীষণ ঘাটতি হলে জিহ্বা পার্পল রং ধারণ করতে পারে।

আমাদের শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ হচ্ছে এই জিহ্বা। কিন্তু আমরা কখনো জিহ্বার তেমন কোনো যত্ন নেই না। আমাদের উচিত নিয়মিত জিহ্বার যত্ন নেয়া। নিয়মিত জিহ্বা পরিষ্কার রাখার মাধ্যমে আমরা অনেক রোগের হাত থেকে মুক্তি পেতে পারি । তাই আমাদের উচিত  নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করার সময় জিহ্বা ও মাড়ি ভালোভাবে পরিষ্কার করা। কিন্তু একটি  বিষয় মনে  রাখতে হবে যে, জিহ্বা  দেখে  নিজে নিজে কোনো সিদ্ধান্তে  নেওয়া ঠিক নয়। কারণ, জিহ্বা পরীক্ষা করার কিছু নিয়ম আছে যা শুধুমাত্র অভিজ্ঞ ডাক্তাররাই করতে পারেন। তাই কখনো জিহ্বার রং এর কোন পরিবর্তন লক্ষ্য করলে সাথে সাথে  বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে ও তার পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে।