• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন

জাতিসংঘে অন্তর্ভুক্তি: বাংলাদেশ প্রশ্নে আপস ফর্মুলা

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ২৮ নভেম্বর ২০২০  

জাতিসংঘে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে প্রস্তাবক দেশগুলো কার্যত একটা আপস ফর্মুলায় ঐক্যমতে পৌঁছেছে। বিষয়টি ১৯৭২ সালের এই দিনে (২৮ নভেম্বর) সাধারণ পরিষদে উপস্থাপনের জন্য নির্ধারিত ছিল। খবরে প্রকাশ, গতকাল (২৭ নভেম্বর) সন্ধ্যায় সাধারণ পরিষদে বাংলাদেশের জাতিসংঘভুক্তির প্রশ্নে যে বিতর্ক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল, তা অনুষ্ঠিত হয়নি। এ প্রশ্নে সংশ্লিষ্ট সবার পক্ষে গ্রহণযোগ্য একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছতে নেপথ্যে আরও আলোচনার জন্য, সময় দেওয়ার উদ্দেশ্যে বিতর্ক ২৪ ঘণ্টা পিছিয়ে আজকের জন্য নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছিল। বাংলাদেশ সময় রাত ৩টা ৩০মিনিটে এই বিতর্ক সাধারণ পরিষদের সভাপতির অনুমোদনক্রমে অনুষ্ঠিত হবে এবং বাংলাদেশকে অবিলম্বে জাতিসংঘভুক্তির জন্য প্রস্তাব উত্থাপন করে যুগোস্লাভিয়া ও অন্যান্য ২২টি দেশের সম্মতিতেই সাধারণ পরিষদের বৈঠক ২৪ ঘণ্টার জন্য পিছিয়ে দেওয়া হয়।

বিজয় দিবসের কর্মসূচি চূড়ান্ত

এ দিন সন্ধ্যায় গণভবনে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে প্রথম বিজয় দিবস পালনের কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হয়। ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস পালিত হবে এ খবর দেয় বাসস। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ বৈঠক তিন ঘণ্টা স্থায়ী হয়।

রাজাকার আব্দুর রহমানের মৃত্যুদণ্ড

১৯৭২ সালের এই দিনে ঢাকার ১২ নম্বর স্পেশাল ট্রাইব্যুনালের বিচারক খোরশেদ আলী খুনি রাজাকার আব্দুর রহমানকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন। এই রাজাকারের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার কর্মচারী গোলাম মোস্তফাকে নৃশংসভাবে হত্যার অভিযোগ এনে চার্জশিট দেওয়া হয়। মামলায় বাদীপক্ষের অভিযোগ, যুদ্ধের সময় নভেম্বর মাসের ১৮ তারিখ সন্ধ্যার আগে আসামি ও অপর একজন রাজাকার গোলাম মোস্তফার গ্রামের বাড়িতে যায় এবং তাকে বাড়ির পাশের জঙ্গল কেটে পরিষ্কার করতে বলে। তখন  গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘ইফতারের সময় হয়ে যাচ্ছে। পরের দিন তিনি কাজটি করবেন।’ এতে রাজাকার দল ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে মারপিট করতে করতে মাটিতে ফেলে দেয়। আসামি তাকে গুলি করে। গ্রামের লোক ও আত্মীয়-স্বজনেরা গুলির শব্দে পালিয়ে যায়। পরে নিহত ব্যক্তির স্ত্রী বাড়ি ফিরে দেখতে পান যে, তার স্বামীর মৃতদেহ শিয়াল ও কুকুরে খেয়ে ফেলেছে।  তাদের গৃহপালিত কুকুর নিহতের মাথাটি বাড়ির দরজার সামনে রেখে পাহারা দিচ্ছে।

দৈনিক ইত্তেফাক, ২৯ নভেম্বর ১৯৭২অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশ্ব ব্যাংকের  সাহায্যের আশ্বাস

বিশ্ব ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট কারগিল চার দিনব্যাপী ঢাকা সফরের পর এ দিন (২৮ নভেম্বর) বিকালে নয়াদিল্লির উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন। বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিনিধিরা তেজগাঁও বিমানবন্দরে তাকে বিদায় জানান। এর আগে সকালে তিনি পরিকল্পনা কমিশনের বৈঠকে মিলিত হন এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন পরিকল্পনায় আর্থিক সাহায্যের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশ্বাস দেন। ঢাকা তেজগাঁও বিমানবন্দরে বিশেষ সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের উন্নয়নমূলক কাজে ব্যাপক অংশগ্রহণের আভাস দিয়ে কারগিল আরও বলেন যে, ‘বিশ্ব ব্যাংক অর্থনৈতিক উন্নয়নমূলক যেকোনও সরকারি প্রকল্পে অর্থনৈতিক ও কারিগরি সাহায্য দেওয়ার চেষ্টা করবে।’

দৈনিক বাংলা, ২৯ নভেম্বর ১৯৭২সহযোগিতাই প্রগতির পথ

আমরা যে পারস্পরিক সহযোগিতার কথা— তা গল্প, গালভরা ও কেতাদুরস্ত শোনায় বলে নয়, একমাত্র পারস্পরিক সহযোগিতা আর বন্ধুত্ব দিয়ে আমরা নিজেদের উঁচু স্তরে তুলতে পারি বলেই আমরা পারস্পরিক সহযোগিতার কথা বলে থাকি। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধান বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী নয়াদিল্লিতে এসব কথা বলেন। ঐতিহাসিক লাল কেল্লায় ‘দিওয়ানে আম’-এ বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধানের সম্মানে দিল্লি পৌরসভা আয়োজিত নাগরিক সংবর্ধনায়  আবু সাঈদ চৌধুরী আরও বলেন, ‘আমরা আমাদের প্রাচীন ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকালে দেখতে পাই, সমাজে একটি একাত্মবোধ গড়ে উঠেছিল। কারণ, লোকে দেখেছিল যে, একমাত্র একে অপরের সঙ্গে সহযোগিতা করেই সাধারণ কল্যাণ অর্জিত হতে পারে। এটা মানবজীবনের ধর্ম। যুগে যুগে মনীষীরা শুধু প্রচার করে এসেছেন তা-ই নয়, প্রগতির নিরিখেও সত্য বলে প্রমাণিত।’ বাংলাদেশে বিরাজমান বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে নয়াদিল্লির নাগরিকদের  ধারণা দিতে গিয়ে রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রগতিশীল নেতৃত্বে তারা নির্বাচনের কাজে ব্যস্ত। যে আত্মোৎসর্গের মনোভাব নিয়ে জনগণ স্বাধীনতা যুদ্ধে লড়াই করেছে, সেই একই অনুভূতি থেকে নেতারা দেশ গঠনের কাজে নিজেদের নিয়োজিত করেছেন।’=