• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন

জলবায়ু পরিবর্তন : জরুরি অবস্থা গ্রহণের প্রস্তাব সংসদে গৃহীত

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ১৪ নভেম্বর ২০১৯  

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অস্তিত্বের সংকট, উপর্যুপরি দুর্যোগের ভয়াবহ আঘাত এবং চরম ভাবাপন্ন আবহাওয়ার বৃদ্ধি, জীব-বৈচিত্র্যের অপূরণীয় ক্ষতি, খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কা, ক্রমবর্ধমাণ পানি সংকট, মহাসাগরগুলোর ওপর অভাবনীয় চাপ এবং সম্পদের অমিতাচারী ব্যবহারের প্রেক্ষাপটে গ্রহজনিত জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা বিষয়ক একটি প্রস্তাব জাতীয় সংসদে গৃহীত হয়েছে।

বুধবার জাতীয় সংসদে প্রস্তাবটি আনেন সাবের হোসেন চৌধুরী (ঢাকা-৯)। এটি চলমান একাদশ জাতীয় সংসদে গৃহীত প্রথম প্রস্তাব।

সাবের হোসেন চৌধুরী সিদ্ধান্ত প্রস্তাব আনার পর জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পরিবেশ বিপর্যয়ের নানা চিত্র সংসদে পাওয়ার পয়েন্টের মাধ্যমে তুলে ধরেন। এরপর এ প্রস্তাবের সমর্থনে সরকার ও বিরোধী দলীয় অনেক এমপি বক্তব্য রাখেন। এমনকি বিএনপির এমপিরাও এর সমর্থনে বক্তব্য রাখেন। বক্তব্যে তারা জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহ কুফল তুলে ধরেন। আলোচনা শেষে প্রস্তাব ‘হ্যাঁ’ ‘না’ ভোটে দিলে তা ‘হ্যাঁ’ ভোটে জয়ী হয়। এর আগে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বক্তব্য দেন। এই প্রস্তাবে কিছু সংশোধনী আনা হয়। সেগুলোও গৃহীত হয়।

প্রস্তাবে সাবের হোসেন আরো উল্লেখ করেন- এটি প্রতিষ্ঠিত যে চলমান সংকটে সর্বনিম্ন মাত্রার অবদান রাখা সত্ত্বেও সর্বোচ্চ ক্ষতি এবং ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ এবং অনেক উন্নয়নশীল দেশ ও ছোট দ্বীপ রাষ্ট্র; আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যে সকল প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে তার অধিকাংশই পূরণ হয়নি; গ্রহণজনিত ন্যায়বিচার এবং ক্লাইমেট ইক্যুইটির দাবি, ঝুঁকির মধ্যে থাকা এই দেশগুলোকে আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দিতে হবে, যাতে তারা তাদের কাঙ্ক্ষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারে।

তিনি আরো উল্লেখ করেন, এই সব বহুমাত্রিক সংকট মোকাবেলায় বিশ্বের সকল পার্লামেন্ট ও সরকার, জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা কর্তৃক দ্রুত কার্যকর ও সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক এবং সকল অংশীজনের সমন্বয়ে অভিন্ন সত্ত্বারূপে আমাদের বাসযোগ্য একমাত্র এই গ্রহটির সুরক্ষা ও হেফাজতের লক্ষ্যে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা হোক।

বক্তব্যে সাবের হোসেন চৌধুরী জানান, জলবায়ুর এই অভিঘাতের ফলে সমুদ্র পৃষ্টের উচ্চতা ৬ ফুট বেড়ে যেতে পারে। যার ফলে ঢাকাসহ বিশ্বের বহু শহর পানির তলায় ঢুবে যেতে পারে। জলবায়ু বিপর্যয়ের ফলে বিশ্বের ১৬ ভাগ প্রাণী বিলুপ্ত। আরো ১০ লাখ প্রাণী বিলুপ্তির পথে। প্লাস্টিক বর্জ্য খাচ্ছে মাছেরা, আর সেই দূষিত দ্রব্য বিষ খাওয়া মাছ খেয়ে মূলত আমরাও বিষ খাচ্ছি। বিশ্বে আজ ধীরে ধীরে তাপমাত্রা বেড়ে চলেছে, বসবাস অযোগ্য হয়ে উঠছে পৃথিবী। এর জন্য বিশ্বের সব দেশগুলোকে জলবায়ু ও পরিবেশ দুষণ রোধে এক যোগে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি। প্রস্তাবটির বিষদ বর্ণনা দিতে সাবের হোসেন চৌধুরী সংসদে স্লাইড শো প্রদর্শন করেন।

 

জানা যায়, স্বাধীনতার পর সংসদে এমপিদের ভোটে ২৩টি সিদ্ধান্ত প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। এর মধ্যে বিগত দশম জাতীয় সংসদেই ৪টি সিদ্ধান্ত প্রস্তাব গৃহীত হয়। কিন্তু যত সমারোহে সিদ্ধান্ত প্রস্তাবগুলো গ্রহণ করা হয়, তত গুরুত্ব দিয়ে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আইন করা বা ব্যবস্থা নেয়া হয় না। এমনকি সিদ্ধান্ত প্রস্তাবটির বিষয়ে মন্ত্রী কী ব্যবস্থা নিলেন সেটি সংসদে জানানোর জন্য আইন আছে। কিন্তু কোনো মন্ত্রীই সেই নিয়ম মানেননি।

সংসদের কার্যাপ্রণালি বিধি ১৪৩ এর (২) ধারা অনুযায়ী গৃহীত সিদ্ধান্ত সম্পর্কে কোনো ব্যবস্থা নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী পরে সংসদে তা জানাবেন। কিন্তু দশম সংসদে চারটি সিদ্ধান্ত প্রস্তাব পাস হলেও এ সম্পর্কে মন্ত্রীরা কে কি করেছেন তা সংসদে জানাননি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, সিদ্ধান্ত প্রস্তাব সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীরা সংসদে যানাবেন এটাই আইন। সেটা না মানাটা সংসদীয় চর্চার বড় ব্যাঘাত।

সংসদের আইন শাখা-২ এর সূত্র জানায়, সিদ্ধান্ত প্রস্তাবগুলো সংসদ চলাকালীন বুধবার বেসরকারি দিবসে আনা হয়। এমপিদের আনা সিদ্ধান্ত প্রস্তাবে মন্ত্রী একমত না হলে তিনি ব্যাখ্যা করে সেই সিদ্ধান্ত প্রস্তাবটি প্রত্যাহারের অনুরোধ করেন। আর গ্রহণ করার হলে গ্রহণ করেন। সিদ্ধান্ত প্রস্তাব গ্রহণ বা প্রত্যাখান দুটিই ‘হ্যাঁ/না’ ভোটে দিয়ে পাস করে নিতে হয়। ফলে এটিকে এক ধরনের আইনও বলা হয়।

বিগত দশম জাতীয় সংসদে ৪টি সিদ্ধান্ত প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু একটিও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন হয়নি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সংসদ নিয়ে গবেষণা করা প্রতিষ্ঠান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর নির্বাহী ড. ইফতেখারুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, জাতীয় সংসদ একটি মহান জায়গা। এর গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু সেখানে গৃহীত কাজগুলো যদি গুরুত্ব না পায়, তাহলে জনগণের অধিকার খর্ব হয়। কারণ জনগণের প্রতিনিধিরাই সেখানে এসব সিদ্ধান্ত নেন। সংসদীয় কার্যক্রমকে শক্তিশালী করতে অবশ্যই সিদ্ধান্ত প্রস্তাবগুলো বাস্তবয়ন করতে হবে। বাস্তবায়ন যদি না করা হয়, টাকা খরচ করে এগুলো গ্রহণ করার দরকার কী!