• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন

চার লেনের কাজ চলছে নাটোর-বগুড়া মহাসড়কে

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ৩ অক্টোবর ২০২০  

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর নাটোর-বগুড়া মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত হচ্ছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের তত্ত্বাবধানে ইতোমধ্যে কাজও শুরু হয়েছে। আগামী অর্থবছরে এ কাজটি সম্পন্ন করা হবে। তবে এই সড়কটি ছয় লেনে রূপান্তর করার প্রক্রিয়া চলছে বলেও জানিয়েছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ। এই সড়কটির কাজ শেষ হলে এলাকাবাসীর স্বপ্নের বাস্তবায়ন হবে।   

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রায় ৫০ বছর আগে চালু হওয়া নাটোর-বগুড়া মহাসড়ক দিয়ে রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা বিভাগের সব রকম যানবাহন চলাচল করে। এই সড়কে এত গাড়ির চাপের কারণে মাত্র ১০ মিনিটের যানজট সৃষ্টি হলে হাজারো গাড়ি ও মানুষের দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়। অথচ যে সংখ্যক যানবাহন এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করে, সে অনুযায়ী সড়কটি যথেষ্ট চওড়া নয়।

এজন্য যানবাহন মালিক, জনপ্রতিনিধি ও সাধারণ মানুষসহ সংশ্লিষ্ট সবাই সড়কটি সংস্কারসহ প্রশস্তকরণের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। এবার কাজ শুরু হওয়ায় তারা খুব খুশি এবং আশাবাদী। এ নিয়ে নানাভাবে আশার কথা ব্যক্ত করেছেন তারা। একই সঙ্গে সরকারকে এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন।       

স্থানীয় শস্য ব্যবসায়ী মো. পারভেজ জানান, বিভিন্ন এলাকা থেকে শস্য কিনে ট্রাকে করে গন্তব্যস্থলে পৌঁছাতে হয়। কিন্তু দিনের বেলায় এই মহাসড়ক দিয়ে মালবাহী এবং ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। তাই তাদের মালামাল যথাস্থানে পৌঁছাতে দেরি হয়। এতে ব্যবসায়িকভাবে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হন। কাজেই এই সড়কটি প্রশস্তকরণ করা হলে তাদের মালবাহী যানবাহন চলাচলে আর বাধা থাকবে না। খুব সহজেই এবং যথাসময়ে তাদের মালামাল গন্তব্যস্থলে পৌঁছানো সম্ভব হবে।  

স্থানীয় অটোরিকশা চালক মো. বশির, ফিরোজ, মোস্তফাসহ আরো অনেকে জানান, যাত্রীসহ নাটোর শহর থেকে দিঘাপতিয়া যেতে খুব ঝুঁকির নিয়ে অটোরিকশা চালাতে হয়। এই মহাসড়কে যানবাহন বেশি এবং দ্রুত চলাচলের কারণে মাঝেমধ্যে দুর্ঘটনার শিকার হতে হয়।  সড়কটি চার লেনে রূপান্তরিত হলে তাদের সেই সমস্যা আর থাকবে না।

দিঘাপতিয়া এমকে কলেজের শিক্ষার্থীরা বলেন, এই মহাসড়ক দিয়ে দ্রুতগতির যানবাহন চলাচল করার কারণে অনেক ঝুঁকি নিয়ে তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে হয়। বলা চলে শঙ্কা নিয়ে তাদের চলতে হয়। তাই এই মহাসড়কটি প্রশস্তকরণ করা খুব দরকার।  সম্প্রতি এই মহাসড়ক চার লেনে রূপান্তরিত করার কাজ শুরু হয়েছে জেনে তারা খুব খুশি। এজন্য স্থানীয় সংসদ সদস্যকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তারা। একই সঙ্গে সরকারকে এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন।

দিঘাপতিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. ওমর শরীফ চৌহান বলেন, উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের যান চলাচলের জন্য এটাই একমাত্র মহাসড়ক। যে সড়ক দিয়ে অতিমাত্রায় যানবাহন চলাচল করে। এতে অনেক সময় যানজটের সৃষ্টি হয় এবং সড়ক দুর্ঘটনায় অনেক সময় প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে।  

এছাড়া দেশের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান দিঘাপতিয়া উত্তরা গণভবন পরিদর্শন করতে আসা দর্শনার্থীরাও নানা বিড়ম্বনায় পড়েন। অনেকটা ঝুঁকি নিয়েই তাদের চলাচল করতে হয় এইসব মহাসড়ক দিয়ে। তাই এই মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত হলে সব সমস্যার সমাধান হবে এবং সড়ক দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমে আসবে।             

হাইওয়ে পুলিশের ঝলমলিয়া ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মো. রেজওয়ানুল ইসলাম বলেন, নিরাপদ সড়ক ও দুর্ঘটনা এড়াতে সড়ক প্রশস্ত হওয়া জরুরি। এক্ষেত্রে নাটোর-বগুড়া মহাসড়কের মাদ্রাসা মোড় থেকে দিঘাপতিয়া পর্যন্ত চার লেন সড়ক নির্মিত হলে অবশ্যই দুর্ঘটনা রোধ হবে। কারণ এই সড়কটি সরু হওয়ায় অতিরিক্ত যানবাহন চলাচলের কারণে মাঝে মধ্যেই দুর্ঘটনা ঘটে। এতে প্রাণহানিও ঘটেছে অনেক। চার লেনের এই সড়কটির কাজ শেষ হলে এসব শঙ্কা কেটে যাবে।  

নাটোর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুর রহিম জানান, সম্প্রতি একনেকের বৈঠকে নাটোর-বগুড়া মহাসড়ক প্রশস্তকরণের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি প্রকল্প অনুমোদন দেন। এতে বরাদ্দ দেওয়া হয় ৭০৭ কোটি ৩২ লাখ টাকা। ইতোমধ্যে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে এই সড়ক দিয়ে চলাচলকারী যানবাহন ও মানুষের ৫০ বছরের দুর্ভোগ লাঘব হবে।

তিনি বলেন, বগুড়ার জাহাঙ্গীরাবাদ থেকে নাটোর শহর পর্যন্ত সাতটি প্যাকেজে এই সম্প্রসারণ কাজ সম্পন্ন হবে। এর মধ্যে নাটোর অংশে চারটি প্যাকেজে ৩৮৪ কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে সড়ক প্রশস্তকরণ করা হবে। ইতোমধ্যে নাটোর শহরের মাদ্রাসা মোড় থেকে তিন দশমিক ২০ কিলোমিটার চার লেনের কাজ শুরু হয়েছে। এতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৮১ কোটি টাকা। অপরদিকে ৬৩ কোটি ৬৪ লাখ ৮৯ হাজার টাকা ব্যয়ে সিংড়ার খেজুরতলা থেকে শেরকোল পর্যন্ত ৩৫ ফুট করে সড়ক চওড়ার কাজ শুরু হয়েছে।