• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন

ঘরে বসেই ডিএসসিসির ট্রেড লাইসেন্স ও গৃহকর পরিশোধ

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০  

 


দুর্নীতি ও ভোগান্তি রোধে অনলাইনেই ই-ট্রেড লাইসেন্স ফি ও হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় করছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। এ পদ্ধতির সঙ্গে করদাতাদের সংযুক্ত করতে প্রতিবছর পৌরকর মেলারও আয়োজন করে আসছে সংস্থাটি। উদ্বোধনের পর গত দুই বছর ধরেই এই পদ্ধতিতে ট্যাক্স আদায় করা হচ্ছে। ফলে নগরবাসীকে ট্রেড লাইসেন্স ও গৃহকর পরিশোধে ব্যাংক কিংবা নগর ভবনে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে না। ঘরে বসেই মোবাইল ফোন বা ব্যাংকিং পদ্ধতির মাধ্যমেই ট্যাক্স বা ফি পরিশোধ করা যাচ্ছে। গ্রাহকের দেওয়া মোবাইল ফোন বা ই-মেইলে চলে আসছে লাইসেন্স বা ফি পরিশোধের রশিদ। পাশাপাশি নাগরিকদের জন্ম-মৃত্যু ও ওয়ারিশ সনদও অনলাইন পদ্ধতিতে করা হয়েছে। ডিএসসিসি মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন নির্বাচিত হওয়ার পর এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করেছেন।
পৌর কর মেলা

জানা গেছে, মেয়র সাঈদ খোকন, ২০১৭ সালের নভেম্বরে হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধের এ অনলাইন কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। কার্যক্রমের আওতায় যে কেউ ঘরে বসে নতুন ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণ, নবায়ন ও বাসাবাড়ির হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধ করতে পারছেন। ফলে এ খাতের অনিয়ম ও দুর্নীতির অবসান হয়েছে। ট্রেড লাইসেন্স করতে গিয়ে কাউকে আর উৎকোচ দিতে হচ্ছে না। ঘরে বসেই নিজের হোল্ডিং রেজিস্ট্রেশন ও  ট্যাক্স পরিশোধ করতে পারছেন। তবে এ পদ্ধতি শুরুর সময় নগরবাসীকে কিছুটা বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়েছে।

অনলাইন সেবা সুবিধা প্রণয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত ডিএসসিসির উপপ্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা সাইদুর রহমান  বলেন, হোল্ডিং ট্যাক্স প্রদান, ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়নের ক্ষেত্রে অতীতে অনেক অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে। কেউ সেবা নিতে গেলেই ভোগান্তির শিকার হতেন। অনেক সময় উৎকোচ দিতে হতো। দুর্নীতি করায় অনেকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) মামলাও হয়েছে। সম্প্রতি একজনের নামে মামলাও হয়েছে। এখন আর সেই সুযোগটি নেই। মেয়রের নির্দেশে এই সেক্টরটি অনলাইন সেবার আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। সিস্টেমটাও অনেক সহজ। ঘরে বসে পরিশোধ করা যায়।
পৌর কর মেলা

তিনি আরও বলেন, আগে হাতে লেখা ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু হতো। অনেকে ভুয়া লাইন্সেস বানিয়ে ব্যবসা করতেন। এই লাইসেন্সকে ঘিরে একটি অসাধু চক্র গড়ে উঠেছিল। এরা যোগসাজশ করে ভুয়া লাইসেন্স বানিয়ে দিতো বা বানাতো। করপোরেশনেরও অনেকে এতে জড়িত ছিল। ফলে লাইসেন্সের ফি করপোরেশনের তহবিলে জমা হতো না। এখন সেই সুযোগ আর নেই। পুরনো লাইসেন্স নবায়ন বা নতুন করে লাইসেন্স করতে গেলে সেগুলোকে অনলাইনে কনভার্ট করে দেওয়া হচ্ছে। আমরাই প্রথম ব্যবসায়ীদের ই-ট্রেড লাইসেন্স দিচ্ছি। লাইসেন্স মালিকের মোবাইল ফোনে তার লাইসেন্স সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য চলে যাচ্ছে। তারা পরবর্তী সময়ে ঘরে বসেই লাইসেন্স নবায়ন করে নিতে পারবেন।

সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা বলছেন, এমনিতেই হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধে করদাতাদের অনীহা দীর্ঘদিনের। তার ওপর অনিয়ম ও দুর্নীতি তো হতোই। ভুয়া ভাউচার ও চালান ফরমের মাধ্যমেও সংশ্লিষ্ট অনেক কর্মকর্তা টাকা হাতিয়ে নিতেন। ঘুষ ছাড়া নতুন ট্রেড লাইসেন্স পাওয়া অস্বাভাবিক ছিল। এ কারণে এই সেক্টরটি নিয়ে মহা দুর্নামে ছিল ডিএসসিসি। এসব কারণে অনলাইন বা ই-ট্রেড লাইসেন্স ইস্যুর সিদ্ধান্ত নেয় ডিএসসিসি। ২০১৭ সালের ১৬ নভেম্বর এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। বর্তমানে সফটওয়্যারের মাধ্যমে ই-ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু করা হচ্ছে।
পৌর কর মেলা

এছাড়া জন্ম-মৃত্যু ও ওয়ারিশ সনদও অনলাইন পদ্ধতিতে চালু করা হয়েছে। জন্ম সনদ চালু হলেও মৃত্যু ও ওয়ারিশ সনদ এখন পর্যন্ত কোনও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান চালু করতে পারেনি বলে দাবি ডিএসসিসির। এছাড়া হোল্ডিং ট্যাক্স ও ট্রেড লাইসেন্সও অনলাইন পদ্ধতিতে আনতে পারেনি দেশের অন্য সিটি করপোরেশনগুলো।

এ প্রসঙ্গে ডিএসসিসির প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ইউসুফ আলী সরদার  বলেন, ‘এখন আর কাউকে আমাদের কাছে আসতে হচ্ছে না। ঘরে বসেই ট্যাক্স পরিশোধের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। আর ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করতে এলে সেটাও অনলাইনে যুক্ত করে দিচ্ছি। আগামী বছর থেকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে টাকা পরিশোধ করে অনলাইন থেকে লাইসেন্স প্রিন্ট করে নেওয়া যাবে।

তিনি আরও বলেন, এ পদ্ধতি অনেক সহজ। এতে একটি বারকোড থাকে। সেটা স্ক্যান করলেই গ্রাহকের সব তথ্য মোবাইল ফোনে ভেসে ওঠে। ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু বা নবায়নে দীর্ঘদিন ধরে রাজস্ব শাখার কর্মচারীদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ ছিল সেই অভিযোগ থেকে এখন মুক্তি মিলেছে।

এক সময় রাজস্ব বিভাগে বদলি বা চাকরি হওয়া মানেই ছিল আলাদিনের চেরাগ পাওয়ার মতো। এ বিভাগে কাজ করলেই অল্প সময়েই বাড়ি-গাড়িসহ কোটি টাকার মালিক বনে যেতেন অনেকেই। এই অনলাইন পদ্ধতি চালুর বিষয়েও অনীহা ছিল এ বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। উদ্বোধনের প্রথম বছর তারা এ বিষয়টি নিয়ে তেমন কোনও কাজই করেনি। পরে মেয়রের কঠোর অবস্থানের কারণে পদ্ধতিটি চালু হয়।

যেভাবে অনলাইন সেবা

অনলাইনে হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধ করতে হলে প্রথমে erevenue.dscc.gov.bd অথবা erevenue.gov.bd লিংকে গিয়ে প্রবেশ করতে হবে। প্রবেশ করার পর গ্রাহকের রেজিস্ট্রেশন ফরম আসবে। গ্রাহকের মোবাইল নম্বর, ইমেইলসহ প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে ফরমটি রেজিস্টার্ড করতে হবে। এরপরই হোল্ডিং নম্বর সম্পর্কিত ফরম আসবে। সেখানে হোল্ডিংয়ের যাবতীয় তথ্য যুক্ত করার পর কী পরিমাণ হোল্ডিং ট্যাক্স বকেয়া আছে সে বিষয়ে তথ্যাদি চলে আসবে। পরিশোধ করতে চাইলে পরিশোধ অপশনে গিয়ে গ্রাহক তার ডেবিট কার্ড বা ক্রেডিট কার্ডের তথ্য যুক্ত করবেন। এরপরই মোবাইলে মেসেজ চলে আসবে কার্ড থেকে তার কত টাকা হোল্ডিং ট্যাক্স বাবদ কাটা হয়েছে। এ ছাড়া বিকাশসহ অন্যান্য মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমেও ফি পরিশোধ করা যাবে।

অনলাইনে ট্রেড লাইসেন্সের আবেদন করতে হলে প্রথমেই অনলাইনে etradelicemce.gov.bd ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হবে। সেখানে ঢুকলেই একটি নিবন্ধন ফরম পাওয়া যাবে। সেখানে নাম, মোবাইল ফোন নম্বর, ই-মেইল, ব্যবসার ধরনসহ কিছু তথ্য দিয়ে নিবন্ধন করতে হবে। একটি নিবন্ধন নম্বরও পাওয়া যাবে। সেটা সাবমিট করলে আরেকটি ফরম আসবে। সেখানেও চাহিদা অনুযায়ী জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট বা জন্ম নিবন্ধন সনদের নম্বর যুক্ত করতে হবে। এ ছাড়া চাহিদা অনুযায়ী কাগজপত্র স্ক্যান করে যুক্ত করতে হবে। এরপর সেটা সাবমিট করলে একটি মেসেজ যাবে গ্রাহক ও সংশ্নিষ্ট এলাকার রাজস্ব ইন্সপেক্টরের (রাজস্ব পরিদর্শক) মোবাইলে।


রাজস্ব পরিদর্শক কাগজপত্র যাচাই করার পর একটি ফিরতি মেসেজ যাবে সেবা গ্রহীতার মোবাইল ফোন ও ই-মেইলে। ফিরতি মেসেজে ফির পরিমাণ ও জমা দেওয়ার বিষয়ে অবহিত করা হবে। সেখানে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর জানিয়ে দেওয়া হবে। এরপর ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড বা নগদে ব্যাংকে গিয়ে ফি পরিশোধ করা যাবে। এছাড়া বিকাশ, রকেট বা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমেও টাকা পরিশোধ করা যাবে। ফি জমার পরপরই সংশ্নিষ্ট লাইসেন্স সুপারভাইজারের মোবাইল ফোনে মেসেজ যাবে।

লাইসেন্স সুপারভাইজার দ্রুততম সময়ের মধ্যে সরেজমিন পরিদর্শন করবেন। সবকিছু ঠিক থাকলে সঙ্গে সঙ্গে একটি ই-ট্রেড লাইসেন্স চলে যাবে সেবা গ্রহীতার ই-মেইলে। একটি মেসেজও যাবে তার মোবাইল ফোনে। পুরো প্রক্রিয়া শেষ হতে সময় লাগবে সর্বোচ্চ তিন দিন। গ্রাহক একদিনের মধ্যে সবকিছু শেষ করতে পারলে দু'দিনের মধ্যেও তা হয়ে যেতে পারে। এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে কোথাও কোনও তথ্য বা কাগজপত্রের ঘাটতি বা কোনও ভুল থাকলে সঙ্গে সঙ্গে সেবা গ্রহীতার মোবাইল ফোন ও ই-মেইলে মেসেজ যাবে। তিনি সেটা সংশোধন করে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একইভাবে কার্যক্রম সম্পন্ন হবে।

জানতে চাইলে ডিএসসিসি মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বলেন, দায়িত্ব নেওয়ার পর নগর সেবায় অনিয়ম রোধ করার উদ্যোগ গ্রহণ করি। এ জন্য করপোরেশনের প্রায় সব কাজ ডিজিটালাইজেশন এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার কাজ শুরু করি। তারই অংশ হিসেবে ই-ট্রেড লাইসেন্স ও হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধের কার্যক্রম চালু করি। এখন ডিএসসিসির নাগরিকরা ঘরে বসেই এ সেবা নিতে পারছেন। পারবেন। এর আগে দেখে গেছে, হোল্ডিং ট্যাক্স দিতে এসে নাগরিকদের ব্যাংকে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। এখন থেকে তারা স্বাচ্ছন্দ্যে রেভিনিউ অটোমেশন সেবা ও  ই-ট্রেড লাইসেন্স সেবা নিতে পারবেন।

ডিএসসিসি সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ২৫ জুলাই থেকে চলতি মাসের ২০ তারিখ পর্যন্ত ডিএসসিসিতে ট্রেড লাইসেন্সের আবেদন পড়েছে এক লাখ ৬২ হাজার ৮২টি। এর মধ্যে সঠিক কাগজপত্র যাচাই-বাছাইয়ের পর এক লাখ ৪২  হাজার ৩৯১টি ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু করা হয়েছে। এ থেকে সিটি করপোরেশনের আয় হয়েছে ৪৮ কোটি ৬৬ লাখ ৬৭ হাজার ২২৯ টাকা।

অপরদিকে এক লাখ ৪৩ হাজার ৬০১ টি হোল্ডিং মালিক অনলাইনের মাধ্যমে তাদের ট্যাক্স পরিশোধ করেছেন। এছাড়া আরও বিপুল সংখ্যক হোল্ডিং মালিক ব্যাংকে পে-অর্ডারের মাধ্যমে হোল্ডিং কর দিয়েছেন।