• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন

কাউকে সহযোগিতা করে খোটা দেয়া কবিরা গুনাহ

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১  

আল্লাহ মানুষকে উঁচু-নীচু করে সৃষ্টি করেছে। সচ্ছলতা ও দরিদ্র্যতা দিয়ে পরীক্ষা করেন। যাতে একে অপরের সহযোগী ও পরিপূরক হয়। ধৈর্য, সহানুভূতি ও মানবতার চর্চা হয়। এসবই স্রষ্টার সৃষ্টি রহস্যের নিদর্শন। ইসলামে পরোপকার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত। এটা ইমানের দাবি এবং আল্লাহর অত্যন্ত পছন্দনীয় কাজ। হাদিসে আছে, যে ব্যক্তি মানুষের বেশি উপকার করে, সেই শ্রেষ্ঠ মানুষ। 

উপকার করা যায় অর্থ, শক্তি, বুদ্ধি ও বিদ্যা দিয়ে। যে খোদাপ্রদত্ত যোগ্যতা মানব সেবায় নিয়োজিত করে, তার যোগ্যতা সার্থক হয়। সে দুনিয়া ও আখেরাত সাফল্যমন্ডিত হয়। পরোপকার যে পন্থায়ই হোক, আল্লাহর কাছে কবুল এবং মর্যাদাপূর্ণ। পার্থিব যে কোনো উদ্দেশ্য ও স্বার্থহীনভাবে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য করে যাওয়া। অর্থাৎ উপকৃত ব্যক্তির কাছ থেকে বদলা পাওয়া, কিংবা সুনাম-সুখ্যাতি লাভ করা, সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন বা অন্য কোনো রকম সুবিধা ভোগ করা। অথবা দান করে খোটা দিয়ে দমিয়ে রাখা। আল্লাহ বলেন, আমরা তো তোমাদের খাওয়াই আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। আমরা তোমাদের কাছে কোনো প্রতিদান চাই না এবং কৃতজ্ঞতাও না (সুরা দাহার : ৯)। 

প্রিয়নবী (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি কোনো মমিনের দুনিয়াবি সংকটসমূহের একটি বিমোচন করে, দয়াময় আল্লাহ তাঁর আখেরাতের সংকটসমূহ মোচন করে দিবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের দোষ গোপন করবে, আল্লাহ আখেরাতে তার দোষ গোপন করবেন। আল্লাহ বান্দার সাহায্যে থাকেন, যতক্ষণ বান্দা তার ভাইয়ের সাহায্যে থাকেন। (মুসলিম শরিফ-২৬৯৯) তবে তা তখনই, যখন লক্ষ্যবস্তু শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। আল্লাহ বলেন, যারা নিজ সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করে খোটা দেয় না, কষ্ট দেয় না, তারা নিজ প্রতিপালকের কাছে প্রতিদান পাবে। সুতরাং দান করা অনেক বড় নেকির কাজ কিন্তু দানের কথা মানুষের কাছে প্রকাশ করে জাহির করা কবিরা গুনাহ। 

সুতরাং উপকৃত ব্যক্তির থেকে সুবিধা লাভে বঞ্চিত হয়ে তাকে অপমান করা, অকৃতজ্ঞ ও অবাঞ্ছিত বলে গালিগালাজ করাও কবিরা গুনাহ। যে ব্যক্তি কারও কাছ থেকে উপকার নেয় সে এমনিতেই মানসিকভাবে দুর্বল থাকে, তার ওপর যদি খোটা দেয়া হয়, তবে তা অত্যন্ত অপমান ও কষ্টের কারণ হয় এবং অন্তরে রীতিমতো রক্তক্ষরণ ঘটায়। নবীজি বলেন, তিন ব্যক্তির সঙ্গে কেয়ামতের দিন আল্লাহ কথা বলবেন না, তাদের দিকে রহমতের দৃষ্টিতে তাকাবেন না, তাদের পরিশুদ্ধ করবেন না এবং তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। হজরত আবু যর বলেন, রাসূল (সা.) এ কথাটি তিন তিনবার বলেছেন। আমি বললাম ইয়া রসুলাল্লাহ! তারা কারা? তারা তো সর্বস্বান্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেল। তিনি বললেন ১. যে ব্যক্তি পরিধেয় কাপড় টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে রাখে, ২. যে ব্যক্তি উপকার করার পর খোটা দেয়, ৩. যে ব্যক্তি মিথ্যা শপথের মাধ্যমে পণ্য বিক্রয় করে।

দান করে খোটা দেয়া কত বড় যে অপরাধ, তা উপরোক্ত হাদিস দ্বারা অনুমান করা যায়। আল্লাহ আমাদের এ গর্হিত গুনাহের কাজ থেকে হেফাজত করুন।