• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন

কাউ ফলের যত পুষ্টিগুণ

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ২১ জুন ২০২০  

নামটা কাউ হলেও, টক-মিষ্টি স্বাদের ফল এটি। উপকূলীয় অঞ্চলে বর্ষা মৌসুমে শিশুদের অনেক প্রিয় এই ফল। ভিটামিন-সি তে ভরপুর কাউ ফলে আছে সর্দি-জ্বর ও ঠাণ্ডা সারাবার মতো ভেষজ গুণাগুণ। দিন দিন তাই বেশ জনপ্রিয় হচ্ছে এই কাউ ফল।

কাউয়ের বৈজ্ঞানিক নাম- Gracinia cowa Roxb বা Gracinia idia Roxb. ইংরেজিতে- Cowa (mangosteen) বলা হয়। মাঝারি বৃক্ষ জাতীয় ঝুলন্ত শাখার ঝুপড়ি গাছ। উচু হয় ৩-৬ মিটার। পূর্ণমোচী। গাঢ় সবুজ ও চকচকে সরল পত্র। ফুল ছোট লালাভ-হলুদ ও চতুরাংশক। চারটি বৃত্তাংশ ও চারটি পাপড়ি হলুদ, বেগুনী কিংবা লাল আভাযুক্ত। পাকলে কমলা-হলুদ হয়। আকারে ছোট কমলা লেবুর মতো মোটা বাকলযুক্ত ফলের ভেতর চুষে খাওয়ার মতো রসালো দানা থাকে চার-পাঁচটি। পাকা ফলের টক-মিষ্টি দানায় কিছুটা কসভাব থাকে। জানুয়ারী-জুলাই ফুল ও ফল ধারণ করে। 

চিরহরিৎ অঞ্চল, উষ্ণমন্ডলীয় মালয়েশিয়া, ভারত, চীন, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, লাওস, কম্বোডিয়া ও ভিয়েতনামে এই ফল দেখা যায়। জলাবদ্ধতা ও লবনাক্ততা সহনীয় হওয়ায় দেশের সিলেট, মৌলভীবাজার, কুমিল্লা, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, চট্টগ্রামের মতো উপকূলীয় পিরোজপুর, বরিশাল, বাগেরহাট, পটুয়াখালী অঞ্চলের জঙ্গলে, খালের পাড়ে দেখা মেলে কাউ গাছের। 

কাঁচা ফলের রঙ সবুজ। তবে অনেকটাই সুস্বাদু বেগুনী রঙের শক্ত বাকলের mangosteen নামে পরিচিত থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় কাউয়ের আরেকটি প্রজাতি দেখা যায়। দেশের কোন কোন এলাকায় কাউগোলা, তাহগোলা নামেও পরিচিত ফলটি। 

পুষ্টিগুণে ভরা ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ এই কাউ ফল মুখের অরুচি দূর করে। পরিমিত ক্যালরী সমৃদ্ধ চর্বি, ফাইবার ও এ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকায় শরীরের স্বাভাবিক বৃদ্ধি-বিকাশে ও রোগ প্রতিরোধে এই ফলের প্রয়োজনীয়তা অনেক। সর্দি-জ্বর ও ঠাণ্ডা সারায়। গাছের ছাল আমাশয়, খিচুনি ও মাথা ব্যাথায় উপকারী। 

এই ফলে কপার, ফাইবার, ম্যাঙ্গানিজ ও প্রচুর পটাশিয়াম থাকায় হাড় মজবুত রাখে হৃদস্পন্দনে সাহায্য করে। এতে থিয়ামিন, নিয়াসিন ও ভিটামিন বি-কমপ্লেক্সসহ আরো প্রয়োজনীয় উপাদান থাকায় রক্তচাপ, স্ট্রোক ও করোনারি হার্ট রোগের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয়। অপুষ্টিজনিত সমস্যায় উপকারী কাউ ফল। অনেকে পাতার রস চুলের খুসকি দূর করতে ব্যবহার করেন।

লবন, মরিচের গুঁড়া দিয়ে পাকা ফলের ভর্তা খেতে দারুণ স্বাদ। অনেকে আবার ছোট মাছের তরকারিতে কাউ ফল ব্যবহার করেন। আদিবাসীরা সবজি হিসেবে কাউয়ের পাতা খেয়ে থাকেন। অপরিপক্ক ফল দিয়ে চাটনি তৈরী করেন। বৌদ্ধরা কাপড়ে রঙ করতে বাকল ব্যবহার করেন। কষ দ্বারা রঙ, রজন ও বার্ণিশ তৈরী হয়। ইঁদুর ও পাখির অতি প্রিয় এই কাউ ফল।