• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন

করোনার স্থবির অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটাব : প্রধানমন্ত্রী

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ২৭ জানুয়ারি ২০২১  

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিশ্বের অনেক দেশ এখনও করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি। আমরা এই ঘনবসতিপূর্ণ দেশে শুরু করেছি। এটা ঐতিহাসিক দিন। ইনশাআল্লাহ আমরা করোনার এ স্থবির অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটাব। বুধবার (২৭ জানুয়ারি) প্রধানমন্ত্রী কুর্মিটোলা হাসপাতালে ভ্যাকসিন কার্যক্রম উদ্বোধনকালে এসব কথা বলেন। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, করোনায় সব স্থবির হয়ে গেছে। এই করোনা চরম আতঙ্ক ছড়িয়েছে। ছেলে পর্যন্ত মায়ের লাশ স্পর্শ করেনি। আত্মীয়স্বজনরা কেউ এগিয়ে আসেনি। এমন সংকটে আমরা মানুষের পাশে ছিলাম। আর্থসামাজিক গতিশীলতা রক্ষায় বিশেষ প্রণোদনা দিয়েছি। স্বাস্থ্য সুরক্ষায় যাবতীয় উদ্যোগ নিয়েছি। ভ্যাকসিনও অনেক দেশের আগে আমরা দিচ্ছি।

তিনি বলেন, মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষার মতো মৌলিক অধিকার নিশ্চিতে আমরা দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। চিকিৎসক, নার্স, টেকনোলজিস্ট, প্রশাসন, পুলিশ এবং আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠন কমিটি করে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। সেনাবাহিনী, বিজিবি ও আনসার ভিডিপিও মানুষের পাশে ছিল। যারা এগিয়ে এসেছিল, সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।

সরকারপ্রধান আরও বলেন, অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনও আমরা দ্রুততার সঙ্গে নিয়ে এসেছি। ত্রিপক্ষীয় চুক্তিতে আমরা তিন কোটি ৪০ লাখ টিকা পাব। ইতোমধ্যে ৭০ লাখ প্রস্তুত। এক্ষেত্রে অর্থ বরাদ্দেও কার্পণ্য করিনি। এক হাজার কোটি টাকা আগেই বরাদ্দ দিয়ে রেখেছিলাম।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারা জানেন, যেকোনো ভ্যাকসিন আসলে টেস্ট করার পর দেয়া হয়। আমাদের দুর্ভাগ্য, কিছু লোক থাকে নেতিবাচক সমালোচনা করে। তারা নিজেরা কাউকে সাহায্য করে না, অন্যের কাজের বিরূপ সমালোচনা করে। মানুষকে ভয়ভীতি দেখায়। পত্রিকা খুললেই দেখবেন, তারা সবকিছুতে দোষ খোঁজে। ভ্যাকসিন আসবে কিনা, আসলে এত দাম কেন? কাজ করবে কিনা? তাদের ‘কিছুই ভালো লাগে না’ রোগ। অবশ্য এ রোগের ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয়েছে কিনা আমার জানা নেই। আমরা তাদেরও করোনা টিকা দেব। তাদের বলব, তারা যেন সাহস করে আসে। কারণ তাদের কিছু হলে আমাদের সমালোচনা করবে কে? তাদের সমালোচনা যতই হয়েছে, ততই কাজে আমরা উৎসাহ পেয়েছি।’

দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যদি করোনায় বেশি আক্রান্ত হয়, সে জন্য আমরা ব্যবস্থা রেখেছি। ভ্যাকসিন ডিসপোজালসহ সব প্রস্তুতিও আছে। আপনারা আল্লাহর কাছে দোয়া করবেন, যেন করোনায় আমরা সবাইকে সুরক্ষা দিতে পারি। যেন আমাদের এই যাত্রায় সফল হতে পারি, সবাই মিলে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানাচ্ছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতামত ও অনুশাসন মেনেই আমরা ভ্যাকসিন কার্যক্রম করছি। আমার আকাঙ্ক্ষা ছিল খুব কাছে থেকে এ কাজের উদ্বোধন করব। কিন্তু তা হলো না। কারোনার কারণেই আমাকে বন্দি জীবনযাপন করতে হচ্ছে।’

প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের সঙ্গে সঙ্গে কুর্মিটোলা হাসপাতালে পাঁচজনকে টিকা দেয়া হয়। প্রথম টিকা গ্রহণকারী রুনু বেরুনিকা কস্তা টিকা গ্রহণের আগে প্রধানমন্ত্রীকে সালাম দিলে শেখ হাসিনা তাকে জিজ্ঞেস করেন, ‘তোমার ভয় লাগছে না তো?’ উত্তরে রুনু বলেন, ‘না।’ এরপর প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খুব সাহসী তুমি। তোমার জন্য শুভকামনা। তুমি আরও বেশি করে রোগীদের সেবা করো।’

এরপর একে একে আরও চারজন টিকা নেন। তারা হলেন— কুর্মিটোলা হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. আহমেদ লুৎফুল মোবেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ডা. নাসিমা সুলতানা, ট্রাফিক সার্জেন্ট দিদারুল আলম ও সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম ইমরান হামিদ।

এ সময় টিকা কার্যক্রম দেখে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি তার কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের বলেন, ‘আমার তো মন চাইছে, আমরাও গিয়ে টিকা নিয়ে আসি। না থাক। শেষে আগে আগে নিলে (সমালোচকরা) বলবে, নিজেরাই আগে নিয়ে নিছে। সবাইকে না দিয়ে। সবাইকে দিয়ে নিই, তারপর নেব।’

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সচিব তোফাজ্জল হোসেন। উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্যসেবা সচিব আবদুল মান্নান, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক এবিএম খুরশিদ আলম প্রমুখ।