• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন

করোনাভাইরাসের সংকট কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে মোংলা বন্দর

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ১৪ মে ২০২০  

করোনাভাইরাসের সংকট কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে মোংলা বন্দর। প্রথম দিকে জাহাজ আগমণ ও পণ্য লোডিং-আনলোডিং কাজ কিছুটা কমে গেলেও এখন সব ধকল সামলে নিয়েছে বন্দরটি। তাই বেড়েছে কর্মচাঞ্চল্যতা। কর্তৃপক্ষ মনে করছেন, এবার বন্দরে তাদের আয় সাড়ে ৩০০ কোটি টাকার কাছাকাছি পৌঁছাবে।

একাধিক সূত্র জানায়, করোনার প্রভাব মোকাবিলায় গত ২৬ মার্চ থেকে সরকারিভাবে দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা ও ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিধি সীমিত করায় নানা শংকার মধ্যে পড়েন মোংলা বন্দর ব্যবহারকারীরা। দেশে করোনার প্রাদুর্ভাবের প্রথম দিকে এ বন্দরে জাহাজ আগমণ ও পণ্য খালাস-বোঝাই কাজে কিছুটা প্রভাব পড়লেও ধীরে ধীরে তা কেটে গিয়ে বন্দর বর্তমানে কর্মচঞ্চল হয়ে পড়েছে। বন্দরে এখন গড়ে প্রতিদিন ১০/১১টি জাহাজের অবস্থান থাকছে।

বন্দরের ট্রাফিক বিভাগ সূত্র জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ১০০টি জাহাজ ভেড়ে বন্দরে এবং ১২ লাখ ৯৬ হাজার মেট্রিক টন আমদানি ও ১৪ হাজার ২৩৬ টন পণ্য এ বন্দর থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রফতানি হয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসে ৭০টি জাহাজ আসে বন্দরে এবং ৯ লাখ ৫১ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি ও রফতানি হয় ১১ হাজার ৫৩৯ মেট্রিক টন পণ্য।

মার্চ মাসে ৭৩টি পণ্যবাহী বাণিজ্যিক জাহাজ ভেড়ে এবং ১০ লাখ ৮৪ হাজার ৬৪৪ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি ও ৭ হাজার ৬২১ মেট্রিক টন পণ্য বিদেশে রফতানি হয়েছে। এপ্রিল মাসেও ৭১টি দেশি-বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজের আগমন ও নির্গমনসহ ৮ লাখ ৬৯ হাজার মেট্রিক টন সার, গম, কয়লা, কিংকার, সিরামিকসহ কনটেইনারজাত নানা পণ্য আমাদানি হয় এ বন্দরে।

একই সঙ্গে হিমায়িত চিংড়ি ও পাটজাতসহ বিভিন্ন পণ্য বিশ্ব বাজারে রফতানি হয়েছে ৭১৯ মেট্রিক টন। এছাড়া চলতি অর্থ বছরের এপ্রিল পর্যন্ত বন্দরে রিকন্ডিশন গাড়ি আমদানি হয়েছে ১১ হাজার ৭৪৭টি। কিন্ত আমদানির ক্ষেত্রে কিছুটা হ্রাস পেয়েছে কনটেইনারজাত পণ্য, রিকন্ডিশন গাড়ি ও মেশিনারিজসহ অন্যান্য পণ্য সামগ্রী।

সূত্র আরও জানায়, সব মিলিয়ে চলতি অর্থ বছরের (২০১৯-২০২০) এখন পর্যন্ত মোংলা বন্দরে ৯৯ লাখ ৬১ হাজার মেট্রিক টন পণ্য আমদানি ও রফতানি হয়েছে। এ পর্যন্ত বন্দরের আয় হয়েছে ২৮৩ কোটি টাকা। ২০১৮-২০০৯ অর্থবছর আমদানি-রফতানির পরিমান ছিল ১ কোটি ১৩ লাখ মেট্রিক টন পণ্য। রিকন্ডিশন গাড়ি আমদানি হয়েছিল ১২ হাজার ৬৯৫টি।

মোংলা বন্দর ব্যবহারকারী ও মেসার্স নুরু এন্ড সন্সের মালিক এইচ এম দুলাল জানান, কর্তৃপক্ষ সঠিক ভাবে বন্দর পরিচালনা করার জন্য বন্দরে বিরূপ প্রভাব পড়েনি। বন্দর ব্যবহারে তিনি সন্তুষ্ট।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক (ট্রাফিক) মো. মোস্তফা কামাল বলেন, ‘বর্তমানে বন্দর জেটিতে আমদানি ও রফতানি পণ্যসহ ৩ হাজার ৯০ একক কনটেইনার রয়েছে। তবে  রিকন্ডিশন গাড়ির ধারণক্ষমতা কাছাকাছি হওয়ায় দ্রুত গাড়ি ছাড়িয়ে নিতে বলা হয়েছে।’

তিনি আরও জানান, গত অর্থবছরে এ বন্দরের আয় হয়েছিল ৩২৯ কোটি টাকা। তবে করোনা সংকটের পরও চলতি অর্থবছরও আয় এর কাছাকাছি পৌঁছাবে বলে আশাবাদি তিনি।

মোংলা বন্দর ব্যবহারকারী ও কনটেইনারের মাধ্যমে পণ্য আমদানিকারক মো. কবির জানান, করোনা পরিস্থিতিতে বিদেশ থেকে কনটেইনারে পণ্য আমদানিতে কিছু সংকট মোকাবিলা করতে হচ্ছে তাদের। তবে সংকটের মধ্যেও তারা পণ্যবাহী কনটেইনার আমদানি অব্যাহত রেখেছেন। করোনার প্রভাব আরও দীর্ঘায়িত হলে তাদের ক্ষতির পরিমান ৩ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম শাহজাহান বলেন, ‘মোংলা বন্দরে ৭ দিন কোন রেন্ট নেই, কিন্তু চট্টগ্রাম বন্দরের ক্ষেত্রে যা মাত্র ৪ দিন। অপরদিকে ২০ ফিট ও ৪০ ফিট কনটেইনার মংলা বন্দরে প্রতিদিন রেন্ট ৩ ও ৬ ডলার কিন্তু চট্টগ্রাম বন্দরে প্রতিদিন রেন্ট ৬ ও ১২ ডলার। এ বন্দরে জাহাজ ও কনটেইনার জট কোনটাই নেই। ধারণক্ষমতার ৪০ ভাগ জায়গা ফাঁকা রয়েছে। তাই বন্দর কর্তৃপক্ষ কনটেইনারের ভাড়া মওকুফের বিষয়টি ভাবছে না।’