• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন

করোনা ঠেকাতে ভিটামিন ডি’র প্রভাব কতটুকু?

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ৮ এপ্রিল ২০২১  

অনেকগুলো জরিপে দেখা গেছে যে, ভিটামিন-ডি এবং কোভিড সংক্রমণের পরিণাম- এ দুয়ের মধ্যে একটা সম্পর্ক আছে। কিন্তু এগুলো হচ্ছে পর্যবেক্ষণ থেকে পাওয়া প্রমাণ। এর অর্থ হলো, এখানে কোভিড আক্রান্ত হবার পর ভিটামিন-ডি ঘাটতি আছে এমন লোকদের ক্ষেত্রে কি ঘটেছে, যার দেহে উচ্চতর মাত্রার ভিটামিন ডি আছে এমন লোকদের কি ঘটেছে- তারই একটা তুলনা করা হয়েছে মাত্র।

তবে ভিটামিন ডি-কে কোভিড চিকিৎসা বা প্রতিরোধের ক্ষেত্রে কার্যকরভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে- এমন মনে করার স্বপক্ষে কিছু কারণ অবশ্যই আছে। কারণ, ভিটামিন ডি মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় একটা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে।

যুক্তরাজ্যে শীতকালে সবাইকে ভিটামিন-ডি সাপ্লিমেন্ট ব্যবহার করতে সুপারিশ করা হয়। যাদের দেহে এই ভিটামিনের ঘাটতি আছে তাদের সারা বছর ধরেই এটা খেতে বলা হয়। কিন্তু, উচ্চমাত্রায় ভিটামিন ডি খেলে কোন কোন রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব- আজ পর্যন্ত কোন গবেষণাতেই তা প্রতীয়মান হয়নি।

তবে এটা ঠিক যে পর্যবেক্ষণভিত্তিক জরিপে দেয়া যায়, যাদের দেহে ভিটামিন ডি’র ঘাটতি রয়েছে তাদের কোভিডে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বেশি।

যেমন- যারা বয়স্ক মানুষ, যারা মোটা হয়ে গেছেন, বা কৃষ্ণাঙ্গ বা দক্ষিণ এশিয়ান জনগোষ্ঠীর যাদের ত্বকের রঙ অপেক্ষাকৃত কালো বা বাদামী।

এমন হতে পারে যে ভিটামিন ডি কম থাকাটাই এই জনগোষ্ঠীর করেনাভাইরাস সংক্রমণের বেশি ঝুঁকির কারণ। অথবা এর পেছনে কোন পরিবেশ বা স্বাস্থ্যগত কারণও থাকতে পারে।

ব্রিটেনের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থায় কৃষ্ণাঙ্গ ও দক্ষিণ এশিয়ান বংশোদ্ভূতদের সারা বছর ধরে ভিটামিন ডি খেতে বলা হয়। কিন্তু ভিটামিন-ডির ঘাটতির সাথে করোনাভাইরাস সংক্রমণের কোন সম্পর্ক আছে কিনা তা শুধু যথাযথ গবেষণার পরই বলা সম্ভব।

তবে বার্সেলোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জরিপের প্রতি সম্প্রতি অনেকের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়। এতে আভাস দেয়া হয়, ভিটামিন-ডি নেয়ার ফলে করোনাভাইরাস সংক্রমিতদের ইনটেনসিভ কেয়ারে ভর্তি হবার প্রয়োজন ৮০ শতাংশ কমে গেছে এবং কোভিডে মৃত্যু কমেছে ৬০ শতাংশ।

অনলাইনে এ জরিপটি ব্যাপকভাবে শেয়ার হয়। কিন্তু এ জরিপটি এখন ‘গবেষণার বর্ণনা নিয়ে উদ্বেগের কারণে’ অনলাইন থেকে তুলে নেয়া হয়েছে। অবশ্য এই জরিপটি অনলাইনে যত প্রচার পেয়েছিল, এটি প্রত্যাহারের খবর ততটা পায়নি।

স্পেনের একজন জরুরি সেবা সংক্রান্ত ডাক্তার অরোরা বালুজা বার্সেলোনার জরিপটি রিভিউ করেছিলেন। তিনি বলছেন, ‘ইনটেনসিভ কেয়ারে থাকা যেসব কোভিড রোগী মারা যায়, তাদের ক্ষেত্রে ভিটামিন ডি-র ঘাটতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। কিন্তু শুধু ভিটামিন-ডি সাপ্লিমেন্ট দিয়ে তাদের মৃত্যুর ঝুঁকি কমানোর চেষ্টা সব সময়ই ব্যর্থ হয়েছে।’

অনলাইনে অনেকেই ভিটামিন-ডির সাথে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার সম্পর্ককে একটি ডাক্তারি পরামর্শ হিসেবে ধরে নিয়েছেন। কেউ কেউ বলেছেন, অনেক দেশের সরকারই ভিটামিন-ডির কার্যকারিতার কথা ‘নামমাত্র’ উল্লেখ করছে এবং তারা জোর দিচ্ছে ভ্যাকসিনের ওপর। 

ভিটামিন ডি খেলে ক্ষতি কী?
অনলাইনে যে লোকেরা আদর্শগতভাবে টিকা বিরোধী, তারা অনেকে নানা রকমের ‘প্রাকৃতিক’ চিকিৎসা, বিকল্প ওষুধ, বা ভেষজ চিকিৎসা ধর্ম ইত্যাদি নানারকম অন্যান্য গোষ্ঠীর সাথে সম্পর্কিত। ভিটামিন-ডির ব্যাপারটা তাদের বিশ্বাসের সাথে মিলে যায়। তারা লোককে বলতে চান যে ‘টিকা নেবার দরকার নেই, ভিটামিন-ডি নিলেই যথেষ্ট।’

ভিটামিন ডি তুলনামূলকভাবে ঝুঁকিমুক্ত, তাই ভুয়া তথ্য হিসেবেও একে খুব একটা ক্ষতিকর বলে আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় না। কিন্তু কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক মনোবিজ্ঞানী অধ্যাপক ভ্যান ডার লিন্ডেন বলছেন, বিপদটা হয় তখনই- যখন লোকে ধরে নেয় যে এটা একটা জাদুকরী চিকিৎসা এবং ভ্যাকসিন, মাস্ক বা সামাজিক দূরত্ব রক্ষা না করে তার বদলে ভিটামিন-ডি খেলেই যথেষ্ট।
সূত্র : বিবিসি বাংলা