• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন
ব্রেকিং:
স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পশুপালন ও মাংস প্রক্রিয়াকরণের তাগিদ জাতির পিতা বেঁচে থাকলে বহু আগেই বাংলাদেশ আরও উন্নত হতো মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতার প্রতি নজর রাখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর প্রধানমন্ত্রী আজ প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ উদ্বোধন করবেন মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব না খাটানোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর দলের নেতাদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানায় শেখ হাসিনা মুজিবনগর দিবসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা বর্তমান প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানতে পারবে মুজিবনগর দিবস বাঙালির ইতিহাসে অবিস্মরণীয় দিন: প্রধানমন্ত্রী ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস আজ

এই রেল স্টেশনে রাত বাড়লেই শোনা যায় ‘‌আত্মা’‌দের ফিসফিসানি

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ৭ নভেম্বর ২০১৯  

সুবিশাল এক রেলওয়ে স্টেশন। পাকা ইমারতের স্টেশন বিল্ডিং, রেল কোয়ার্টার্স। একসময় নাকি স্টেশন লাগোয়া বড় বাজারও ছিল। এখন সে সবই অতীত। গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের বুকে কালিমা একে দিয়েছে নানান ভুতুড়ে কর্মকাণ্ড আর ব্যাখ্যাহীন ঘটনা। 

হরর সিনেমাগুলোতে প্রায়ই ভুতুড়ে বাস স্টেশন কিংবা রেল স্টেশন দেখানো হয়ে থাকে। আমাদের কাছে সেগুলোকে অবাস্তব মনে হলেও, অনেক ক্ষেত্রেই এই বিষয়গুলো মূলত বিভিন্ন হন্টেড প্লেস সম্পর্কে লোকমুখে প্রচলিত ঘটনার উপর ভিত্তি করে বানানো হয়ে থাকে। তেমনই এক ভুতুড়ে স্থান হলো পশ্চিম বঙ্গের পুরুলিয়া জেলার বেগুনকোদর রেল ষ্টেশন।

 

প্রতিদিন সন্ধ্যার পর অন্ধকারের মধ্যে একাকী দাঁড়িয়ে থাকে ভুতের স্টেশন বেগুনকোদর। ট্রেন আসে ট্রেন যায়, কিন্তু রেল স্টেশন হওয়া সত্ত্বেও বেগুনকোদরে কোনো ট্রেন থামে না। রেললাইনের ধারে তাই সারা রাত হানাবাড়ির মত পড়ে থাকে পুরুলিয়ার জেলার এই অতি প্রাচীন বেগুনকোদর স্টেশন।

 

বেগুনকোদর রেল স্টেশন

বেগুনকোদর রেল স্টেশন

স্থানীয় মানুষের কাছে যা ভুত স্টেশন নামেই বেশি পরিচিত। এই স্থানটিকে ঘিরে প্রচুর ভুতুড়ে ঘটনার কথা শোনা যায়। এই সব ঘটনার সত্যতা যাচাই করার তেমন সুযোগ নেই। তবে যা কিছু রটে, তার কিছু তো বটে! তবে স্থানীয় মানুষ থেকে রেলকর্তারা কেউই বিস্তারিত বলতে চান না। সন্ধ্যা নামলেই ওই স্টেশনের ত্রিসীমানায় দেখতে পাওয়া যায় না কাউকে। 

 

স্থানীয় ও রেল সূত্রে জানা গেছে, বিকেল ৫টা ৫০ নাগাদ বোকারো শাখার রাঁচি-চন্দ্রপুরা-ধানবাদ প্যাসেঞ্জার থামে। তারপর আর কোনো ট্রেন থামে না। কারণ রেল থেকেই কোনো ট্রেনের স্টপেজ দেয়া হয়নি এখানে। একসময় পুরুলিয়ার এই স্টেশনে থামত প্রচুর ট্রেন। সারা দিন মানুষের ভিড়ে গমগম করত স্টেশন। তবে আজ সব অতীত। দিনের বেলাতেও ট্রেন চলে যাওয়ার পর স্টেশনের চারদিক শুনশান। শুধু দাঁড়িয়ে থাকে শতাব্দী প্রাচীন স্টেশনের পাকাবাড়িটি।

জানা যায়, একসময় বড় স্টেশন অফিস, কোয়ার্টার, এমনকি জমজমাট বাজার ছিল। থামত সব প্যাসেঞ্জার ট্রেন। তারপর হঠাৎ কী যে হয়ে গেল! লোকমুখে শোনা যায়, ১৯৬০ সালের কোনো একদিন স্টেশনমাস্টার ও তার স্ত্রী খুন হন। স্টেশনের কুয়োর মধ্যে পাওয়া যায় লাশ। তারপর থেকেই গুজব রটল, স্টেশনে নাকি ভূতেদের আড্ডা। আবার কেউ কেউ বলেন, এখানে ট্রেনে চাপতে গিয়ে এক নববধূ ট্রেনের তলায় চাপা পড়েন। তারপর থেকেই সন্ধ্যার পর নাকি ওই বধূর চিৎকার শোনা যায় ও রেললাইন বরাবর দৌড়তে দেখা যায়। 

 

বেগুনকোদর স্টেশন অফিস

বেগুনকোদর স্টেশন অফিস

এই দুই ভূতের ভয়েই আজও মানুষ আতঙ্কিত। বারবার নতুন নতুন স্টেশন মাস্টার এলেও ভূতের ভয়ে আজ পর্যন্ত কেউ থাকেননি। ওই ভূতের আতঙ্কেই পালিয়ে যান সব রেলকর্মী থেকে দোকানদার। ধীরে ধীরে গোটা এলাকা ফাঁকা হয়ে যায়। শুধু মূর্তিমান বিভীষিকার মতো দাঁড়িয়ে থাকে বড় পাকা স্টেশন বাড়িটি। স্থানীয় মানুষের কথায়, রাতে নাকি রঙ-বেরঙের আলো দেখা যায়। শোনা যায় ‘‌আত্মা’‌দের ফিসফিসানি। নানা আতঙ্কের মধ্যে স্টেশন ফের শুরু করার দাবিতে শুরু হয় আন্দোলন। 

তৎকালীন রেলওয়ে স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান বাসুদেব আচারিয়ার উদ্যোগে ২০১০ সালে আবার খোলে বেগুনকোদর স্টেশন, তবে তা শুধু হল্ট হিসেবেই। পুরনো স্টেশন বিল্ডিংটাকেই রঙ করে খুলে দেয়া হয়। স্টপেজ দেয়া হয় তিনটি প্যাসেঞ্জার ট্রেনের। তারপর থেকে বেগুনকোদর স্টেশন রেলের খাতায় খোলা হলেও বাস্তব অবস্থা সেই একই। ভুতুড়ে স্টেশনের দুর্নামটা কিন্তু যায়নি। 

পুরুলিয়ায় ঘুরতে আসা পর্যটকরা একবার হলেও এই স্টেশনে আসেন দেখতে আর স্টেশনের ছবি তুলতে। মুরি-বোকারো শাখার রাজধানী, শতাব্দী, জনশতাব্দী, এক্সপ্রেস ট্রেনসহ প্রচুর প্যাসেঞ্জার ট্রেন যাতাযাত করে এই স্টেশনের ওপর দিয়ে। কয়েকটি লোকাল ট্রেন ছাড়া আর কিছুই এখানে দাঁড়ায় না। আর অন্ধকার নামতেই পুরো শুনশান গোটা এলাকা। 

 

অনেকেই স্টেশনে রঙ বেরঙের আলো ও ছায়া মূর্তির অস্তিত্ব টের পেয়েছেন

অনেকেই স্টেশনে রঙ বেরঙের আলো ও ছায়া মূর্তির অস্তিত্ব টের পেয়েছেন

থাকেন না রেলের কোনো কর্মীও। রাঁচি ডিভিশনের এক রেলকর্তা বলেন, সন্ধ্যার পর একটিও টিকিট বিক্রি হয় না ওখানে। কেউ যায় না ট্রেন ধরতে। ট্রেনের স্টপেজ দিয়ে রেভেনিউ পাবে না রেল। এক টিকিট বিক্রেতার মতে, সারা দিন টিকিট বিক্রি হলেও সন্ধ্যার পর আর কেউ স্টেশনে আসে না। তবে কেন ভূতের ভয়, সে ব্যাপারে কিছু বলতে চাননি তিনি।

সম্প্রতি, একটি এডভেঞ্চার প্রিয় টিম গিয়ে ঘুরে এসেছে বেগুনকোদর স্টেশন। তাদের ভাষ্যমতে, এখনও সন্ধ্যার পর স্টেশন বিল্ডিংয়ের ত্রিসীমানায় দেখতে পাওয়া যায় না কোনো গ্রামবাসীকে। বিকেল ৫টা ৫০ মিনিট নাগাদ এই স্টেশনে থামে রাঁচি-চন্দ্রপুরা-ধানবাদ প্যাসেঞ্জার। এটাই দিনের শেষ ট্রেন যা এখানে থামে। এরপর আর কোনো ট্রেনের স্টপেজই দেয়া হয়নি এখানে। এমনকি এই ষ্টেশনে নেই কোনো রেলের স্থায়ী কর্মী। মোটকথা, সন্ধ্যার পরে আর কেউ আসেন না এখানে।

যদি ভুতুড়ে ঘটনা বন্ধই হয়ে গিয়ে থাকে তাহলে কেন আজও মানুষ এই স্টেশনটি এড়িয়ে চলে? আজও প্রতিদিন সন্ধ্যা নামতেই শুনশান হয়ে যায় পুরুলিয়া জেলার সীমান্তবর্তী বেগুনকোদর স্টেশন। একটাও আলো জ্বলে না প্লাটফর্মে। দেখা মেলেনা এক জন যাত্রীরও। শুধু আপ ও ডাউন লাইন দিয়ে একের পর এক ট্রেন চলে যায়। তাদের হর্ন ছিন্ন ভিন্ন করে দেয় স্টেশনের নিস্তব্ধতা।