• বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১০ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন

ইমান ও মাদক একসঙ্গে থাকতে পারে না

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ২২ জানুয়ারি ২০২০  

 

‘ইন্নামাল খামরু ওয়াল মাইসিরু ওয়াল আনসাবু ওয়াল আযলামু রিজসুম মিন আমালিশ শাইত্বান। আল্লাহ বলেন, নিশ্চয়ই মদ বা নেশাদ্রব্য জুয়া পূজার বেদি লটারির শরসমূহের ব্যবহার শয়তানি কাজ, ফাজতানিবুহু। তা থেকে তোমরা দূরে থাক। লা’আল্লাকুম তুফলিহুন। তবেই তোমরা সাফল্য লাভ করবে’।


জুয়ার আড্ডার আধুনিক নাম ‘ক্যাসিনো’। মদের আধুনিক নাম হার্ড ড্রিংস। জুয়া অলসদের বিনোদনের সহজ পথ। জুয়ায় মানুষ সম্পদের সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্থ্যও হারায়। ইসলাম মানুষের সহজাত ধর্ম, তাই মানব জীবনের শুরুতেই সুন্দর জীবনযাপনের জন্য ইসলাম কিছু বিধিনিষেধ দিয়েছে। মদ জুয়া অস্বাস্থ্যকর খেলাধুলা ইসলামে নিষিদ্ধ। ইসলামসহ বিভিন্ন ধর্মে বা ধর্মাশ্রিত রাষ্ট্রে এগুলোর রাষ্ট্রীয় অনুমোদন নেই। তারপরও কিছু লোক এগুলোর সঙ্গে জড়িয়ে যায় সহজ আয়ের পথ খুঁজতে গিয়ে। আমরা শৈশবে দেখতাম পাড়া-মহল্লায় বিভিন্ন মেলা উপলক্ষে হাউজি খেলা হতো। এগুলোও এক ধরনের জুয়া।

ক্যাসিনো হল মদ জুয়া আর যৌনতার স্বর্গরাজ্য। মানে একই ছাদের নিচে সব পাওয়া যায়। এ সুবিধাটি এই দেশে ক্লাব বা রিক্রিয়েশন সেন্টারের নামে প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় গড়ে উঠেছে।
মদ এবং জুয়ায় মানুষ সর্বস্বান্ত হয়ে যায়, এ বিষয়টি উপলব্ধি করে ইসলামী মূল্যবোধের আলোকে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার পরপরই রেসকোর্সের ঘোড়দৌড়ে জুয়া এবং মদ নিষিদ্ধ করে দিয়েছিলেন।
মদকে রাসূলুল্লাহ (সা.) ‘উম্মুল ফাওয়াহেশ’ বা ‘সকল নির্লজ্জতার শিকড়’ বলেছেন। আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রা.) বলেন, ‘আলখামরু উম্মুল ফাওয়াহেশ ওয়া আকবারুল কাবায়ের মান শারিবাহা ওক্বায়া আলা উম্মিহি ওয়া আম্মাতিহি ওয়া খালাতিহি। আমি নবীজিকে বলতে শুনেছি মদ হল সব নির্লজ্জতার উৎস এবং সব পাপের মধ্যে সবচেয়ে বড় পাপ। যে ব্যক্তি মদ পান করে, সে তার মা, খালা, ফুফু সবার ওপর পতিত হয়’

এই মর্মে উসমান গনি (রা.) বলেন ‘তোমরা মদ থেকে বেঁচে থাক। কেননা এটি সব মন্দ কাজের উৎস’। মনে রেখ, তোমাদের আগের জামানার একজন সজ্জন ব্যক্তি লোকালয় থেকে সব সময়ই ইবাদতে রত থাকত। একদা এক বেশ্যা মহিলা নিজ পরিচয় গোপন করে কোনো কাজের সাক্ষ্য দেয়ার জন্য প্রলুব্ধ করে দাসীকে দিয়ে তাকে ডেকে নেয়। তিনি না ভেবে সরল মনে দাসীর সঙ্গে তার বাড়ি গেলে সদর দরজা বন্ধ করে এক রূপসী সুন্দরী মহিলার কক্ষে নিয়ে যাওয়া হল, যার কাছে একজন ফুটফুটে বালক এক পাত্র মদ ছিল।

তখন ওই মহিলা দরবেশকে বলল, আমি আপনাকে কোনো সাক্ষ্য দেয়ার জন্য ডাকিনি। বরং ডেকেছি আমার অনেক দিনের আশা আপনার সঙ্গে জেনা করার। আপনি আমার সঙ্গে জেনা করবেন অথবা এই বালককে হত্যা করবেন অথবা এই এক পেয়ালা মদ পান করবেন, তাহলেই এখান থেকে মুক্তি পাবেন। দরবেশ জেনা এবং নাহক খুনের পাপ কাঁধে না নিয়ে মন্দের ভালো এক পেয়ালা শরাব পান করাই ভালো মনে করলেন। তা খেয়ে মাতাল হয়ে ছেলেটিকে হত্যা করে মহিলার সঙ্গে জেনায় মশগুল হলেন। অতএব, হে ইমানদার তোমরা মদ থেকে বেঁচে থাক। কেননা ঈমান ও মাদক কখনও একত্রে থাকতে পারে না। বরং একটি অপরটিকে ছুড়ে ফেলে’।
আখেরি জামানায় মদ ও মাদকতা
* আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত নবীজি (সা.) বলেন ইন্না মিন আশরাতিস সা’আ ইয়ারফাউল ইলমা ওয়া ইয়াকসুরাল জাহলা ওয়া ইয়াকসুরাজ জিনা, ‘কিয়ামতের আলামতসমূহের মধ্যে অন্যতম হল, ইলম বা জ্ঞান উঠে যাবে, মূর্খতা বৃদ্ধি পাবে, জেনা এবং মদ্যপান বিস্তার লাভ করবে’।

* আবু মালেক আশ’আরী বলেন, তিনি রাসূলুল্লাহ (সা.) কে বলতে শুনেছেন ‘আমার উম্মতের কিছু লোক বেনামে বা ভিন্ন নামে মদ্যপান করবে’।

* আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রা.) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন ‘ইন্না উম্মাতি ইয়াশরাবুনাল খামরা ফী আখিরিজ জামানি ইয়্যু সাম্মাউনাহা বিগাইরি ইসমিহা। ‘আমার উম্মত আখেরি জামানায় মদ্যপান করবে, তারা একে অন্যভাবে নামকরণ করবে।’ আজকাল তো তাই দেখা যায়। মাদকের আগ্রাসী থাবা থেকে সমাজকে বাঁচানোর পথ আমাদেরই বের করতে হবে। নইলে আগামী বংশধর শেষ হয়ে যাবে। এই যে ক্যাসিনোর প্রচলন এর পেছনে কিন্তু আছে এ মাদকতার আহ্বান। সামাজিক অস্থিরতায় ফ্রি এক গেপ মদ খেয়ে অনেকেই সেখানে গিয়ে লোভে পড়ে জুয়ার আসরে বসে পড়ে।

প্রতিরোধের উপায়

নৈতিক ও প্রশাসনিক, বিষয়টিকে দু’ভাগে বিভক্ত করা যায়।

নৈতিক প্রতিরোধ

যা দু’ভাবে হতে পারে-

মানবিক মূল্যবোধ জাগিয়ে তোলা : সুস্বাস্থ্য ও সুন্দর পরিবেশ মানুষের মৌলিক অধিকার মাদকের কারণে স্বাস্থ্য ও সামাজিক পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। এসব কথা পিতা-মাতা, শিক্ষক গুরুজনদের উপদেশের মাধ্যমে দেয়া সম্ভব। বর্তমানে কিছু ব্যক্তি ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান ‘মাদককে না বলুন’ এই ক্যাম্পেইন করে থাকে কিন্তু সদিচ্ছার অভাব এবং কথায় কাজে মিল না থাকার কারণে এর সুফল পাওয়া যায় না। বরং দেখা যায় মাদক কারবারিরাই এদের পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে। বিটিভিতে ধূমপানের বিজ্ঞাপন সরকার বন্ধ করে দিলে বিজ্ঞাপন ব্যবসায়ীরা কিশোরদের কণ্ঠে জিঙ্গেলসহ একটি নতুন মাত্রার বিজ্ঞাপন প্রচার করতে থাকে, সেখানে দেখা যায় একদল কিশোর নেচে নেচে সুর করে বলছে ‘আমরা ধূমপান করি না’ নিচে লেখা থাকত সিগারেট কোম্পানির নাম। এ বিজ্ঞাপন দেখে আমার মনে পড়ে মুষ্টিযোদ্ধা হ্যাভিওয়েট বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন মোহাম্মদ আলীর কথা, তিনি অধূমপায়ী ছিলেন।

তাকে এক বিজ্ঞাপনী সংস্থা প্রস্তাব করে তরুণদের ধূমপানে নিরুৎসাহিত করতে আপনি একটি ভিডিও বার্তায় বলবেন ‘আমি ধূমপান করি না’ এতে তরুণরা আপনার অনুসারী হয়ে ধূমপান থেকে বিরত থাকবে। আর আপনি আমাদের কাছ থেকে পাবেন মোটা অঙ্কের সম্মানী। মি. আলী এক মুহূর্ত দেরি না করে বলেন এটাও সিগারেট পানের বিজ্ঞাপন। সুতরাং আমি তা করব না। এমন সদিচ্ছা নিয়ে আমাদের এখন কাজ করতে হবে।