• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন

ইনসমনিয়া বা অনিদ্রার প্রতিকার

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯  

আসলে ঘুম ঠিকমতো না হলে বা কম হলে তাকেই আমরা অনিদ্রা রোগ বা ইনসমনিয়া বলি। ইনসমনিয়া হয় বংশগত অথবা নানা শারীরিক ও মানসিক কারণে। প্রয়োজনে ডাক্তার দেখান এবং পরামর্শ নিন। কিছু অনিদ্রা আছে অল্পস্থায়ী, নিয়ম মেনে চললে দূর হয়ে যায়। তবে দীর্ঘদিনের অনিয়মের ফলে হতে পারে ক্রনিক ইনসমনিয়া বা দীর্ঘস্থায়ী অনিদ্রা।

বাঁচতে হলে ঘুমোতেই হবে! যদিও বলা হয় ঘুম হচ্ছে মৃত্যুর সমতুল্য, তবুও এই ঘুমই হচ্ছে সুষ্ঠুভাবে বেঁচে থাকার চাবিকাঠি। ঘুম আপনার মস্তিষ্ক ও শরীরকে দেয় পূর্ণাঙ্গ বিশ্রাম, যার কারণে আপনি কর্মক্ষম থাকতে পারেন। কিন্তু যাদের রয়েছে ঘুমসংক্রান্ত সমস্যা? বিশেষ করে অনিদ্রার মতো ভয়াবহ যন্ত্রণা যাদের রয়েছে, তারাই বুঝতে পারেন ঘুমের মূল্য! 
ল্যাটিন শব্দ 'সমনাস'-এর অর্থ 'স্লিপ' বা ঘুম। আর 'ইন'-এর অর্থ 'নট' বা না। এই দুই মিলিয়ে 'ইনসমনিয়া' বা অনিদ্রা। ইনসমনিয়া হয় বংশগত অথবা নানা শারীরিক ও মানসিক কারণে।
ধরন অনুযায়ী অনিদ্রাকে ভাগ করা হয় তিন ভাগে - 
১. ইনিশিয়াল ইনসমনিয়া : ঘুম আসি আসি করেও আসতে চায় না। কেউ বার বার বিছানা ছেড়ে উঠে পড়েন, এপাশ ওপাশ করতে থাকেন, কেউ বার বার বাথরুমে যান, বিছানা-বালিশ ঠিকঠাক করেন। এমন করতে করতেই হঠাত্‍ করে ঘুমিয়ে পড়েন। 
২. মিডল বা ইন্টারমিটেন্ট ইনসমনিয়া : বারে বারে ঘুম ভাঙে। ছেঁড়া ছেঁড়া ঘুম হয়। স্নায়বিক উত্তেজনার কারণেই এমনটা হয়।
৩. টার্মিনাল ইনসমনিয়া : শেষ রাতে ঘুম ভেঙে যায়। হঠাত্‍ ঘুম ভেঙে গেলে আর আসতে চায় না। বিশেষ করে বয়স্কদের ক্ষেত্রে এ সমস্যাটা বেশি দেখা যায়।

অনিদ্রা বুঝবেন কী করে- 
১. অনেকক্ষণ শুয়ে থাকার পরে ঘুম আসা বা দেরিতে ঘুম আসা।
২. রাতে বারবার ঘুম ভেঙে যাওয়া।
৩. দু-তিন রাত পর পর ঘুম না হওয়া।
৪. রাতে একবার ঘুম ভেঙে গেলে আর ঘুম না আসা।
৫. শেষ রাতে বা সকাল হওয়ার অনেক আগে ঘুম ভেঙে যাওয়া।

নিদ্রাহীনতা যে কারনে হয়

বিভিন্ন কারণেই এই নিদ্রাহীনতার সমস্যা হতে পারে। কখনো কখনো নিদ্রাহীনতা হয় ক্ষণিক সময়ের জন্য, কখনো আবার বেশ অনেকদিন ধরে। আবার ব্যক্তিভেদেও নিদ্রাহীনতার কারণ ভিন্ন হতে পারে। তবে পূর্বের তুলনায় এখনকার সময়ে নিদ্রাহীনতার সমস্যা আশংকাজনক ভাবে বেড়ে গেছে। তবে সবচেয়ে বেশি এই সমস্যায় পড়েন তরুণ তরুণীরাই। সাধারণত  বিভিন্ন রকমের দুশ্চিন্তা, অনিশ্চয়তা, ভয় এসব থেকেই ইনসমনিয়ার শুরু। এছাড়া খাবারে অনিয়ম, অতিরিক্ত সময় ধরে টিভি দেখা, কম্পিউটারের পর্দার সামনে বসে থাকা, শারীরিক অন্য কোন সমস্যা থেকেও নিদ্রাহীনতা দেখা দিতে পারে। আবার সারাদিনের মাত্রাতিরিক্ত পরিশ্রম, মনোযোগের সমস্যা, ঘুমানোর স্থান পরিবর্তন এসব কিছুর উপর ভিত্তি করেও নিদ্রাহীনতার সমস্যা হতে পারে।

ইনসমনিয়ার প্রভাবে শরীরে যে ক্ষতি হয়-
১. ঘুম থেকে জাগার পর শরীর-মনে সতেজ অনুভূতি না আসা।
২. মাথাব্যথা।
৩. অল্পতেই রেগে যাওয়া, মেজাজ খিটখিটে থাকা।
৪. অল্প পরিশ্রমে ক্লান্তিবোধ, পড়াশোনা ও যেকোনো কাজে মনোযোগের অভাব।
৫. উচ্চ রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া।

বিশেষ কিছু নিয়ম মেনে চললে এবং জীবনযাত্রায় সামান্য কিছু পরিবর্তন আনলেই রাতের ঘুম আরামদায়ক হয়ে উঠবে।

ঘুমের ওষুধ না খেয়ে অনিদ্রাকে জয় করবেন যেভাবে 

১. ঘুমানোর দু’ঘণ্টা আগে গরম পানি স্নান করার অভ্যাস করতে পারেন। গরম পানি শরীরের কোষগুলির ক্লান্তি সরায় ও স্নায়ুকে শান্ত করে। দেহের তাপমাত্রাও নিয়ন্ত্রিত হয় এই স্নানের মাধ্যমে। ফলে ঘুম আসবে সহজেই।

২. মন ও শরীরকে শান্ত রাখার অন্যতম উপায় বডি-ম্যাসেজ। উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তা সরিয়ে ঘুম আনতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে এটি। তাই ঘুমের ঘণ্টাখানেক আগে ম্যাসেজ নিলে তা ঘুমের জন্য উপযোগী হতে পারে।

৩. গরম দুধে মধু মিশিয়ে সেই পানীয় খেলেও ঘুমের সমস্যা মেটে। দুধে থাকা ট্রাইটোফ্যান স্নায়ু ও কোষকে শিথিল করে ঘুম আসতে সাহায্য করে। এর সঙ্গে মধু যোগ হওয়ায় ঘুমের ঘনত্বও বাড়ে।

৪. ঘুমের ঘণ্টা চারেক আগে কফি, সিগারেট ও মদ্যপানের অভ্যাস আজই ত্যাগ করুন। এসবে শরীরে পানির চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে  স্নায়ু উদ্দীপ্ত হয় ও ঘুমের আমেজ নষ্ট হয়ে যায়।

৫. ম্যাগনেশিয়াম উদ্বেগ কমাতে বিশেষ কার্যকর। তাই ডায়েটে ম্যাগনেশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার রাখার পাশাপাশি, স্নানের পানিতেও এক কাপ ম্যাগনেশিয়াম পাউডার যোগ করতে পারেন। এতে ক্লান্তি কাটে ও ঘুম আসে দ্রুত।

৬. ঘুমানোর আগে আলো নিভিয়ে সুগন্ধি স্প্রে করে ঘরকে ঘুমের উপযুক্ত করে তুলুন। 

৭. নিশ্ছিদ্র ঘুম আনতে ঘুমের আগে যথেচ্ছ মোবাইল ব্যবহার ও টিভি দেখার অভ্যাসেও রাশ টানুন।

৮. ঘুমানোর জন্যে প্রথমে মানসিক প্রস্তুতি গ্রহণ করুন। ঢিলেঢালা আরামদায়ক পোষাক পরুন। ঘরে হালকা আলো জ্বেলে রাখুন।

৯.  হালকা তাজা বাতাস ও ঘরের তাপমাত্রা ২০ ও ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে ঘুমের জন্য আরামদায়ক। 

১০. প্রতিদিন ১৫ মিনিট হালকা ব্যায়াম আপনার শরীরে যথেষ্ট অক্সিজেন সরবরাহ করবে,শরীরকে রিলাক্স করতে সাহায্য করবে। 

১১. প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যান এবং একই সময়ে জেগে উঠুন।