• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন

আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের আমল এতেকাফ

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ৩ মে ২০২১  

দেখতে দেখতে আমাদের মাঝ থেকে রহমত ও মাগফিরাতের দিনগুলি শেষ হয়ে প্রবেশ করেছি নাজাতের দশকে। এই দশক হলো পরিপূর্ণভাবে আল্লাহর স্মরণের দশক। 

আল্লাহকে একান্তভাবে লাভ করার জন্য মহানবী (সা.)-এর সুন্নত অনুযায়ী মুমিন-মুত্তাকিরা এই শেষ দশকে এতেকাফ করে থাকেন। 

রমজানকে বিদায় দিতে গিয়ে আমাদের প্রিয় নবী করিম (সা.)-এর এমনটি হয়ে থাকতো যে, আধ্যাত্মিক বসন্ত নিজের চমক দেখিয়ে যখন বিদায় নেয়ার ক্ষণে পৌঁছে যেত তখন তিনি (সা.) কোমর বেঁধে নিতেন আর রমজানের কল্যাণরাজিতে নিজ ডালি ভরে নিতে কোন ত্রুটি করতেন না। 
মহানবী (সা.)-এর শেষ দশকের ইবাদত সম্পর্কে হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণিত একটি হাদিস থেকে আমরা জানতে পারি রমজানের শেষ দশকে প্রবেশ করলে তিনি (সা.) কিভাবে রাতগুলো ইবাদতের মাধ্যমে জীবিত করতেন এবং তাঁর (সা.) পরিবার পরিজনকেও জাগাতেন (বোখারি)।

শেষ দশকে হুজুর (সা.) এতেকাফে বসতেন এবং লাইলাতুল কদরের অন্বেষণে রাতগুলো ইবাদতের মাধ্যমে জাগিয়ে রাখতেন। এতেকাফের আভিধানিক অর্থ হলো কোন স্থানে আবদ্ধ হয়ে যাওয়া বা অবস্থান করা। 

ইসলামী পরিভাষায় ‘ইবাদতের সংকল্প নিয়ে রোজা রেখে মসজিদে অবস্থান করার নাম এতেকাফ’ (হিদায়া, বাবুল এতেকাফ)। রমজান মাসের শেষ দশকে এতেকাফে বসা সুন্নতসম্মত। 

হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিস থেকে জানা যায়, হুজুর (সা.)-এর মৃত্যুর পর তার (সা.)  পবিত্র স্ত্রীগণও এ সুন্নতের অনুসরণ করতেন (সহি মুসলিম, কিতাবুল এতেকাফ)। 

হুজুর (সা.) রমজান মাসে ১০ দিনই এতেকাফে বসতেন। উল্লেখ্য, হজরত নবী করিম (সা.) জীবনের শেষ রমজানে ২০ দিন এতেকাফ করেছিলেন।

রমজানের শেষ দশকে এতেকাফের গুরুত্ব অনেক। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজানের শেষ দশক এতেকাফ করবে, তার জন্য দুই হজ ও দুই ওমরার সওয়াব রয়েছে।’ (বায়হাকি) 

তিনি আরও বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য এক দিনের এতেকাফ করল, তার ও দোজখের মধ্যখানে আল্লাহ এমন তিনটি পরিখা তৈরি করে দেবেন, যার একটি থেকে অপরটির দূরত্ব হবে পূর্ব ও পশ্চিমেরও বেশি।’ (তিরমিজি)

এতেকাফকারী দুনিয়া থেকে সম্পূর্ণ পৃথক হয়ে আল্লাহর দিকে ঝুঁকে পড়ে যেন তিনি তার অভীষ্ট মনোবাসনা পূর্ণ করেই এতেকাফ থেকে উঠতে পারেন। এটা কঠিন সাধানার বিষয়। তাই মুতাকিফকে এমন কোন কাজকর্ম বা আচার আচরণ করা উচিত নয় যাতে তার এ সাধনা ব্যহত হয় বা প্রশ্নবিদ্ধ হয় অথবা ক্রুটিপূর্ণ হয়ে যায় বা তার মনোবাসনা অপূর্ণ থেকে যায়। 

একজন তাপস সাধনের ন্যায় একাগ্রতা ঐকান্তিকতা, শৃঙ্খলা ও পবিত্রতার লাগাম যেন হাত ছাড়া হতে না দেন।

এতেকাফ পালনকালে যেকোনো ধরনের পার্থিব বিষয় থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত থাকতে হবে। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তোমরা স্ত্রীদের সঙ্গে মিলিত হবে না, যখন তোমরা মসজিদে এতেকাফে থাকবে।’ (সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৭) 

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘এতেকাফকারী রোগী দেখতে যাবে না, জানাজায় উপস্থিত হবে না, স্ত্রী স্পর্শ করবে না। বিশেষ জরুরি কাজ ব্যতীত বাইরে যাবে না।’ (বোখারি ও মুসলিম) 
এতেকাফকারীরা এ দশদিন আল্লাহর ধ্যানে একান্তভাবে মগ্ন থাকবেন। রমজানের শেষ দশকে একটি বিশেষ রাতে এসে থাকে, যা লাইলাতুল কদর। লাইলাতুল কদর বা সৌভাগ্য রজনী লাভ বোধ করি মুমিনের সবচেয়ে বড় পাওয়া। 

সারা জীবন কঠোর সাধনা, ত্যাগ ও তিতিক্ষার মাধ্যমে শয়তানী প্রবৃত্তিরূপে দৈত্যকে নিধন করার পর মুমিনের কাছে আসে সেই মুহ‚র্তটি-সেই পাওয়ার মুহ‚র্তটি যা আল কোরআনের সুরা কাদরে ‘লাইলাতুল কদর’ নামে আখ্যায়িত হয়েছে। হাজার মাসের চেয়েও উত্তম এ মুহুর্তটি। 

হাজার মাস অর্থাৎ প্রায় ৮০ বছর। একজন মুমিন সাধারণত ৮০ বছর বেঁচে থাকেন। সুতরাং তার সারা জীবনের সাধনার ফল লাভের মুহূর্তটি তার গোটা জীবনের চেয়েও কদরের তথা কল্যাণের ও মর্যাদার।

আল্লাহতায়ালার কাছে এ দোয়াই করি, তিনি যেন এই পবিত্র রমজানের এই শেষ দশকে আমাদের সবাইকে নাজাত দান করেন এবং তার ক্ষমার চাদরে আবৃত করে নেন, আমিন।