• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন

আন্তর্জাতিক পাট সংস্থা স্থাপনের সিদ্ধান্ত

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ১৯ জানুয়ারি ২০২১  

আন্তর্জাতিক সম্মেলনে পাট ও পাটজাত দ্রব্য নিয়ে গবেষণা ও উন্নয়নের জন্য ঢাকায় একটি পাট কারিগরি কেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া সম্মেলনে পাট রফতানিকারক দেশগুলোর নীতি সমন্বয় সাধনের জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থা স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর সদর দফতর থাকবে ভারতে। ঢাকায় অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনের সভাপতি বাংলাদেশ পাট রফতানি করপোরেশনের চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান এই দিনে সাংবাদিক সম্মেলনে সিদ্ধান্তের কথা জানান। উল্লেখ করা যেতে পারে যে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির উদ্যোগে ঢাকায় আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে যোগদানকারী প্রতিনিধি দলের গণভবনে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে লুৎফর রহমান বলেন, ‘গত সাত বছর ধরে বিকল্প কৃত্রিম তন্তুর প্রচলনের কারণে পাট চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। সম্মেলনের সিদ্ধান্তগুলো আন্তরিকতার সঙ্গে কার্যকর করা হলে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে লুৎফর রহমান বলেন, ‘কৃত্রিম তন্তু প্রস্তুতকারীরা আন্তর্জাতিক সংস্থার মোকাবিলার জন্য সম্মিলিতভাবে চেষ্টা করলে এবং পাটজাত দ্রব্যের গবেষণা ও বাজারজাতকরণের মধ্যে সমন্বয় সাধন করা হলে আন্তর্জাতিক বাজারে পাটজাত দ্রব্যের ব্যবহার অক্ষুণ্ন থাকবে।’

দৈনিক বাংলা, ২০ জানুয়ারি ১৯৭৩ যুদ্ধাপরাধের বিচার হবেই

এদিকে ভুট্টোর হুমকিতে যুদ্ধাপরাধের বিচারের সিদ্ধান্ত টলবে না বলে ঘোষণা দেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান। পাকিস্তানে আটক নিরপরাধ অসহায় বাঙালিদের বিচার প্রহসনে প্রেসিডেন্ট ভুট্টোর করা মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ করেন তিনি। অন্যায়ভাবে দীর্ঘদিন ধরে নিরপরাধ বাঙালিদের আটক করে রাখা এবং মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগে তাদের বিচারের নামে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট যে উদ্যোগ নেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান তার কঠোর সমালোচনা করে বলেন, ‘বাংলাদেশে যারা ব্যাপক গণহত্যা, নারী নির্যাতন, লুটতরাজ, অগ্নিসংযোগ ও ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিল, সেসব পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে।’ তাদের বিচার করতে বাংলাদেশ সরকার যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে, জিল্লুর রহমান তার প্রতি দৃঢ় সমর্থন ঘোষণা করেন।

বাংলাদেশ অবজারভার, ২০ জানুয়ারি ১৯৭৩ নতুন রোগের প্রাদুর্ভাব, ৩৭ জনের মৃত্যু

১৯৭৩ সালের শুরুতেই পাবনার গ্রামাঞ্চলে এক নতুন রোগের প্রাদুর্ভাবের খবর পাওয়া যায়। জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে ২০ জন কৃষক ও ১৭ জন তরুণের মারা যাওয়ার খবর পাওয়া যায়। রোগটি সে সময় বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে এবং প্রতিদিন মৃত্যুর খবর আসতে থাকে। প্রাথমিকভাবে জানা যায়, কৃষকরা মাঠে কাজ করার সময় আর জেলেরা নদীতে মাছ ধরার সময় এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। তারা প্রথমে হঠাৎ পেটে, বুকে ও মাথায় ব্যথা অনুভব করেন। এরপর কাঁপুনি শুরু হওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।

আটক বাঙালি সৈন্যদের সীমান্ত থেকে পাঞ্জাবে আনা হচ্ছে

পাকিস্তান থেকে পালিয়ে আসা বাঙালিরা ১৯৭৩ সালের শুরুর দিকে বলছিলেন, পাকিস্তানে আটক শত শত পদস্থ সামরিক-বেসামরিক কর্মচারীকে বিচার করার যে খবর প্রকাশিত হচ্ছে, তা কেবল হুমকি না। গত মাসে (ডিসেম্বর ১৯৭২) ইসলামাবাদে এ খবর প্রকাশ হয়ে পড়ায় বেশ কিছু মাঝারি পর্যায়ের বাঙালি কর্মচারী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাকিস্তানের রাজধানী থেকে পালিয়ে যেতে থাকেন। পাকিস্তানের উগ্রপন্থীরা বাঙালি বেসামরিক কর্মচারীদের বিচার করার জন্য এতদিন যাবৎ যে দাবি জানিয়ে আসছিল, দেশটির সরকার এখন সেই পথ অনুসরণ করেই বাঙালিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তৈরির কাজ শুরু করেছে। পালিয়ে আসা বাঙালিরা জানান যে উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের বিভিন্ন শিবিরে আটক বাঙালি সামরিক কর্মচারীদের পাঞ্জাব এলাকায় আনা হচ্ছে। কারণ, পাকিস্তান সরকার তাদের কড়া পাহারায় রাখতে চায়। পাকিস্তান প্রত্যাগত বাঙালি কর্মচারীরা পাকিস্তানে আটক বাঙালিদের কল্যাণের জন্য সক্রিয়ভাবে কাজ করছিলেন। এখন তাদের পাকিস্তানের ফেলে রেখে চলে আসায় তারা গভীর দুঃখ প্রকাশ করেন। তারা বলেন যে পাকিস্তানে আটক বাঙালিদের ভাগ্য হিটলারের আমলে জার্মানির ইহুদিদের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। বাঙালিদের মর্যাদার সঙ্গে দেশে ফিরিয়ে দেওয়া হবে, গত বছর জানুয়ারি মাসের শেষদিকে প্রেসিডেন্ট ভুট্টোর এই ঘোষণার পর থেকে দেশে ফেরার আশায় দিন গুনছিলেন তারা। এখন তাদের সেই আশা দিনের পর দিন ক্ষীণ হয়ে আসছে। সিমলা চুক্তির পর বাঙালিরা পুনরায় আশায় বুক বেঁধেছিল স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের। ১৯৭২ সালের আগস্ট মাসে বাংলাদেশের জাতিসংঘভুক্তির বিরুদ্ধে চীন ভেটো প্রদান করবে—সেই খবরে ও ভুট্টোর হুমকিতে বাঙালিদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের আশা পুনরায় স্তিমিত করে দেয়।