• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন

আজ মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলা মুক্ত দিবস

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ৪ ডিসেম্বর ২০১৯  


নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে সাড়ে তিন শত মুক্তিযোদ্ধাসহ শহীদের আত্মত্যাগের মধ্যে দিয়ে আজ ৪ ডিসেম্বর মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলা হানাদার মুক্ত হয়। ১৯৭১ সালের এই দিনে রাজৈর থানার মুক্তিযোদ্ধাদের হামলায় পর্যুদস্ত পাক হানদার বাহিনী মাদারীপুরের রাজৈর থানা থেকে পালিয়ে পাশের গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের ছাগলছিড়া এলাকায় চলে যায় এবং সেখানে ১৩৫ জন পাক হানাদার বন্দী হয়। মুক্ত হয় রাজৈর উপজেলা। 
যুদ্ধে অংশ নেয়া মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে দীর্ঘ ৯ মাস মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার কমলাপুর, পাখুল্লা, লাউসর, কদমবাড়ি, মহিষমারী, ইশিবপুর ও কবিরাজপুরসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ১৭টি অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করে মুক্তিযোদ্ধারা পাকবাহিনীর সাথে লড়াই শুরু করে। রাজৈর উপজেলার বাজিতপুর ইউনিয়নের কমলাপুর সর্বেস্বর বৈদ্যের বাড়ি খলিল বাহিনীর প্রধান খলিলুর রহমান খানের নেতৃত্বে অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করে যুদ্ধ পরিচালনা করেন। এখানকার মুক্তিযোদ্ধারা মাদারীপুর জেলার বিভিন্ন এলাকায় পাকবাহিনী ও তাদের দোসরদের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ধ্বংস করে দেয় এবং মুক্তিযোদ্ধারা একের পর এক পাকবাহিনীকে পরাস্ত করে দেশ মাতৃকাকে পুনরুদ্ধারের দিকে এগিয়ে যায়।
রাজৈরে অবস্থান নেওয়া মুক্তিযোদ্ধারা পাকবাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার, আলবদরদের সাথে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয় ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের মাদারীপুরের রাজৈর বড় ব্রীজ, আমগ্রাম ব্রীজ ও টেকেরহাট এলাকায়। এর মধ্যে, বৌলগ্রাম, রাজৈর থানা ও পাখুল্লায় মুখোমুখি যুদ্ধ হয়। এখানে অংশগ্রহণ করেন সাবেক রক্ষীবাহিনীর ডেপুটি ডিরেক্টর মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল (অব.) সরোয়ার হোসেন মোল্যা। সকাল ৭টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত  একটানা যুদ্ধ চলে। মুক্তিযোদ্ধাদের মরণপণ লড়াইয়ে পরাস্ত হয়ে সর্বশেষ ৩ ডিসেম্বর মধ্য রাতে পাকবাহিনী রাজৈর ছেড়ে ফরিদপুরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলে মুক্তিযোদ্ধারা টেকেরহাট বন্দরে তাদের আক্রমণ করেন। পাকবাহিনী  এ সময় পালিয়ে গোপালগঞ্জের ছাগলছিড়া নামক স্থানে পৌছলে মুক্তিযোদ্ধারা ও  স্থানীয় গ্রামবাসী দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে  পাকবাহিনীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। গ্রামবাসীর সহায়তায় ১৩৫ জন পাক হানাদারকে বন্দী করেন মুক্তিযোদ্ধারা। রাজৈর হানাদার মুক্ত হয়। 
স্বাধীনতার র্দীঘ সময় কেটে গেলেও মানবতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ শুরু হওয়ায় দেশ আজ কলঙ্কমুক্ত হচ্ছে। দেশ কলঙ্কমুক্তের পথে এগুলেও রাজৈরের কুখ্যাত রাজাকার ও আলবদররা এখনও বিচারের আওতায় না আসায় ক্ষুব্ধ মুক্তিযোদ্ধারা। বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ইউসুফ আলী মিয়া বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে আলবদর রাজাকারদের বিচার কাজ শুরু করেছে। কিন্তু মাদারীপুরের রাজৈরে যারা কুখ্যাত রাজাকার, যারা আমাদের মা বোনের ইজ্জত হরণ করেছে, ঘর বাড়ি লুট তরাজ করছে, তাদের অদ্যাবধি বিচার শুরু করা হয়নি। তাদের বিচার করার জন্য সরকারের প্রতি উদাত্ত আহবান জানান।
বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হান্নান মিয়া বলেন, দেশকে কলঙ্কমুক্ত করার জন্য সাকা চৌধুরী, মুজাহিদ এদেরকে যেমন ফাঁসি দেওয়া হয়েছে, রাজৈরবাসীও দাবি করেছে রাজৈরের চিহ্নিত রাজাকারদেরকে ফাঁসি দিয়ে রাজৈরকে কলঙ্কমুক্ত করার।
রাজৈর উপজেলা সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো. সেকান্দার আলী সেখ বলেন, রাজৈরের মুক্তিযোদ্ধারা দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করে পাকহানাদার বাহিনীকে পরাস্ত করে রাজৈর থানা হানাদারমুক্ত করা হয়। পাক আর্মিরা মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমনে টিকতে না পেরে টেকেরহাট থেকে ৩ ডিসেম্বর রাতে পালিয়ে ফরিদপুর যাওয়ার পথে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের ছাগলছিড়া নামক স্থানে ১৩৫জন পাক আর্মি ধরা পড়ে। নয় মাসের যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাসহ প্রায় সাড়ে তিন শত মানুষ শহীদ হন।