• মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৩ ১৪৩১

  • || ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন
ব্রেকিং:
নতুন বছর মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রেরণা জোগাবে : প্রধানমন্ত্রী আ.লীগ ক্ষমতায় আসে জনগণকে দিতে, আর বিএনপি আসে নিতে: প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা প্রধানমন্ত্রীর ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা রাষ্ট্রপতির দেশবাসী ও মুসলিম উম্মাহকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী কিশোর অপরাধীদের মোকাবেলায় বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ব্রাজিলকে সরাসরি তৈরি পোশাক নেওয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর জুলাইয়ে ব্রাজিল সফর করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী আদর্শ নাগরিক গড়তে প্রশংসনীয় কাজ করেছে স্কাউটস: প্রধানমন্ত্রী স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় স্কাউট আন্দোলনকে বেগবান করার আহ্বান

আজ মাদারীপুর মুক্ত দিবস

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ১০ ডিসেম্বর ২০১৯  

মাদারীপুর প্রতিনিধিঃ
আজ ১০ ডিসেম্বর মাদারীপুর হানাদারমুক্ত দিবস। বাঙালী মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে পাকিস্তানী সেনাদের আত্মসমর্পণ শুধুমাত্র মাদারীপুরেই হয়েছিল। ১৯৭১ সালের এই দিনে একটানা ৩৬ ঘন্টা সম্মুখ যুদ্ধে পরাস্ত হয়ে পাক হানাদার বাহিনীর ৫৩ জন সদস্য মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করলে শত্রু মুক্ত হয় মাদারীপুর। 

জেলার মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে জেলার সব কয়টি থানা মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে চলে আসে। এ কারণেই হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা মাদারীপুর শহরের এ.আর হাওলাদার জুট মিলের অভ্যন্তরে ও নাজিমউদ্দিন কলেজে অবস্থান নেয়। মুক্তিযোদ্ধারা চারদিক থেকে তাদের ঘিরে রাখে।

৮ ডিসেম্বর দুপুরে তৎকালীন মহকুমা প্রশাসক আবদুল মতিনের ড্রাইভার আলাউদ্দিন কলাগাছিয়া মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে সংবাদ পৌঁছে দেয় যে, ৯ ডিসেম্বর ভোর রাতে পাকি বাহিনী মাদারীপুর থেকে ফরিদপুরের উদ্দেশ্যে পালিয়ে যাবে। এ সংবাদ পেয়ে বিভিন্ন অঞ্চলের ৩ শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা বর্তমান সদর উপজেলার ঘটকচর থেকে সমাদ্দার ব্রিজের পশ্চিম পাড় পর্যন্ত মহাসড়কের দু‘পাশে প্রায় ৪ কিলোমিটার ব্যাপী অবস্থান নেয়। ৯ ডিসেম্বর ভোর ৫ টায় হানাদার বাহিনী গোলবারুদ, অস্ত্র ও কনভয়সহ তাদের বাঙালি দোসর রাজাকার, আলবদর, আলসামস ও মুজাহিদ বাহিনী নিয়ে ফরিদপুরের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। ভোর সাড়ে ৫ টার দিকে ঘটকচর ব্রিজ পার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমন শুরু করে। মুক্তিযোদ্ধাদের তাড়া খেয়ে হানাদার বাহিনী দ্রুত গাড়ি চালাতে থাকে। অবস্থা বেগতিক দেখে তারা একটি কনভয় থেকে নেমে কভার ফায়ার করতে করতে আরো দ্রুতত সকল গাড়ি নিয়ে এগুতে থাকে। এ সময় হানাদার বাহিনীর ফেলে যাওয়া কনভয় থেকে মুক্তিযোদ্ধারা বিপুল পরিমান অস্ত্র ও গোলাবারুদ সংগ্রহ করে নেয়।

মুক্তিযোদ্ধাদের গুলি বর্ষণে ভীত হয়ে এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করে হানাদার ও তাদের দোসরদের একটি অংশ সমাদ্দার ব্রিজের দুইপাশে পূর্বে তৈরি করা বাঙ্কারে আশ্রয় নিয়ে পাল্টা গুলি ছুড়তে থাকে। অপর অংশ দুটি কনভয় ও একটি জীপসহ সমাদ্দার ব্রিজ পাড় হয়ে রাজৈর থানার টেকেরহাটের দিকে পালিয়ে যায়। তারা টেকেরহাট ফেরি পাড় হয়ে ফরিদপুর যাওয়ার সময় ছাগলছিড়া নামক স্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধের মুখে পড়ে। উপায়ান্ত না দেখে ৩০ পাকিস্তানি সেনা ও ১২ রাজাকারসহ আত্মসমর্পন করতে বাধ্য হয়। এদিকে সমাদ্দার ব্রিজে ৯ ডিসেম্বর সারা দিন-রাত এবং ১০ ডিসেম্বর সারা দিন সম্মুখ যুদ্ধ চলে মুক্তিযোদ্ধা ও হানাদার বাহিনীর মধ্যে। তুমুল যুদ্ধের এক পর্যায়ে হানাদার বাহিনীর গোলা-বারুদ শেষ হয়ে আসলে ১০ ডিসেম্বর বিকেলে মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে হ্যান্ডমাইকযোগে পাকি বাহিনীকে আত্মসর্পনের আহবান জানানো হয়। এতে সাড়া দিয়ে হানাদার বাহিনী রাইফেলের মাথায় সাদা কাপড় উড়িয়ে বাঙ্কার থেকে বেরিয়ে আসে এবং পাশের খাল থেকে পানি, গাড়ি থেকে শুকনো খাবার ও গোলা-বারুদ নিয়ে পূনরায় বাঙ্কারে ঢুকে গোলাগুলি শুরু করে। মুক্তিযোদ্ধাদের তীব্র প্রতিরোধের মুখে সন্ধ্যার আগেই হানাদার বাহিনীর মেজর আবদুল হামিদ খটক ও ক্যাপ্টেন সাঈদ ৩৭ পাকিসেনা এবং ১৪ মুজাহিদসহ ৫৩ পাকিস্তানি সৈন্য নিয়ে খলিল বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পন করতে বাধ্য হয়। মিত্র বাহিনী ছাড়া মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পাকি বাহিনীর আত্মসমর্পনের মধ্যদিয়ে মাদারীপুর শত্রুমুক্ত হয়। এ সংবাদ মাদারীপুরে পৌঁছালে হাজার হাজার মুক্তিকামী মানুষ বাঁধভাঙ্গা জোয়ারের মত জয়বাংলা শ্লোগান দিয়ে রাস্তয় নেমে আনন্দ উল্লাসে ফেটে পড়ে। এই যুদ্ধে শহীদ হন মাদারীপুরের ১৪ বছর বয়সী সর্ব কনিষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধা সরোয়ার হোসেন বাচ্চু ও যুদ্ধে ২০ হানাদার নিহত হয়।

জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার জাহাঙ্গীর কবির বলেন, ‘দেশের অন্য অন্য স্থানে ভারতীয় মিত্র বাহিনী উপস্থিতে পাক হানাদার বাহিনীর সেনারা আত্মসমর্পন করলেও একমাত্র মাদারীপুরে পাক হানাদার বানীনির সদস্যরা মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পন করে। যা আমাদের কাছে অনেক বড় গৌরবের বিষয়।’

মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, ‘দিনটি উপলক্ষে মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৭ টায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন, বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্প অর্পণ, এরপরে বিজয় র‌্যালী ও সর্ব কনিষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধা সরোয়ার হোসেন বাচ্চুর কবর জিয়ারতসহ নান কর্মসুচী গ্রহন করেছে।’