• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন

আইএসআই’র সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতের ১১ বৈঠক: গোয়েন্দা তথ্য ফাঁস

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ২০ ডিসেম্বর ২০১৮  

নিউজ ডেস্ক: সম্প্রতি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে মেহমুদ নামের আইএসআই’র এক কর্মকর্তার ফাঁস হওয়া কথোপকথনের সূত্র ধরে চালানো তদন্তে আইএসআই’র সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতের যোগাযোগ সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর বেশকিছু তথ্য উঠে এসেছে।
গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জাতীয় দৈনিক ‘বাংলাদেশ প্রতিদিন’- এর একটি সংবাদের বরাতে জানা যায়, আইএসআই’য়ের শীর্ষকর্তা জাভেদ মেহেদিই বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগের কাজ করছেন। তিনি মূলত যোগাযোগ করেন তারেক রহমান ও খন্দকার মোশাররফের সঙ্গে। এ ক্ষেত্রে এজেন্ট শহীদ মেহমুদ লিং’কে মাধ্যম হিসেবে কাজ করেন আমিরাত বিএনপির নেতা জাকির হোসেন। জুলাই থেকে সর্বশেষ ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত মেহমুদ ও জাকিরের মধ্যে হওয়া ১১ বৈঠকে বিএনপি-জামায়াত নেতাদের আইএসআই’য়ের কানেকশনের তথ্যও উঠে এসেছে বিস্তারিতভাবে।

জানা যায়, সম্প্রতি বিএনপি নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ফাঁস হওয়া কথোপকথনের সেই মেহমুদের পুরো নাম ‘শহীদ মেহমুদ মুহাম্মদ শরিফ’। তিনি দুবাইয়ে অবস্থান করা আইএসআই এজেন্ট। তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ৫৪তম লং কোর্সে কমিশন্ডপ্রাপ্ত হন। পরে তিনি আইএসআই’য়ে পোস্টেড হন। লেফটেন্যান্ট কর্নেল হিসেবে ২০০৪ সালে অবসরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি আইএসআই’তেই নিয়োজিত ছিলেন। অবসরে যাওয়ার পরও আইএসআই’র এজেন্ট হিসেবে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি বর্তমানে দুবাইয়ে আল মারজান আল কাবের জেনারেল ট্রেডিং কোম্পানির সেলস ম্যানেজার হিসেবে চাকরিরত আছেন। আইএসআই’র কাছ থেকে তিনি প্রতি মাসে হাজার ডলার বেতন পান। সম্প্রতি বাংলাদেশি নেতৃবৃন্দের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধির স্বীকৃতি হিসেবে তার বেতন বেড়ে মাসে চার হাজার ডলার করা হয়েছে। তিনি বাংলাদেশের কয়েকটি দলের নেতাদের সঙ্গে আইএসআই’র শীর্ষ কর্মকর্তাদের যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে কাজ করেন।

এছাড়া, শহীদ মেহমুদ আইএসআই’র নীতিনির্ধারণী কর্মকর্তা জাভেদ মেহেদির সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন। তিনি মূলত জাভেদ মেহেদির সঙ্গে বিএনপি ও জামায়াত নেতাদের যোগসূত্র হিসেবে কাজ করেন। শহীদ মেহমুদ তার যোগাযোগের ক্ষেত্রে দুবাইয়ে বিএনপির সংযুক্ত আরব আমিরাত শাখার সভাপতি জাকির হোসেনকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেন। এই জাকির হোসেনের মাধ্যমেই মেহমুদ লন্ডনে বসবাসরত তারেক রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।

জাকির হোসেনের ব্যক্তিগত তথ্য সম্বন্ধে জানা গেছে, জাকির হোসেন বর্তমানে সংযুক্ত আরব আমিরাত বিএনপির সভাপতি। জন্ম ও বেড়ে ওঠা সিলেটের জকিগঞ্জে। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবসা প্রশাসনে অনার্স করেছেন। দুবাইয়ের রয়েল প্যাকেজিং ইন্ডাস্ট্রিজে চাকরিরত জাকির হোসেন আসন্ন নির্বাচনে জকিগঞ্জ থেকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীও ছিলেন।

তদন্তে পাওয়া তথ্যানুসারে, আইএসআই এজেন্ট শহীদ মেহমুদ ও আমিরাত বিএনপির জাকির হোসেনের যোগাযোগ নিয়মিত এবং প্রায় নিরবচ্ছিন্ন। এ বছরের জুলাই থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ১১ বার জাকির হোসেনের সঙ্গে শহীদ মেহমুদের সাক্ষাৎ হয়েছে। তাদের মধ্যে সর্বশেষ যোগাযোগ হয়েছে চলতি মাসের (ডিসেম্বর ২০১৮) ৭ তারিখে।

জাকির হোসেন ও শহীদ মেহমুদের একাধিক কথোপকথন থেকে জানা যায়, ৪ জুলাই সৌদি আরবে তারেক রহমানের সঙ্গে আইএসআই’র নীতিনির্ধারণী কর্মকর্তা জাভেদ মেহেদির একটি বৈঠক হয়েছে। শহীদ মেহমুদের সঙ্গে কথোপকথনে তারেক রহমানকে জাকির ‘বস’ হিসেবে উল্লেখ করেন। জানা যায়, নির্বাচন সামনে রেখে দেশে নানামুখী তৎপরতা চালানোর জন্য আইএসআই সক্রিয় উদ্যোগ নিয়েছে। এমনকি আগামী নির্বাচনে ৩০০ আসনে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য আইএসআই’র পক্ষ থেকে তৈরি করা তালিকা বিএনপির কাছে দেওয়া হয়েছে। এ তালিকা তারেক রহমানের কাছে পৌঁছানোর ব্যাপারটিও নিশ্চিত করা হয়েছে ওই বৈঠকে।

সম্প্রতি ফাঁস হওয়া খন্দকার মোশাররফের সঙ্গে আইএসআই’র বেতনভুক্ত এজেন্ট শহীদ মেহমুদের অডিও কথোপকথন অনুসারে, বিএনপির এই নেতা বাংলাদেশে তাদের দলের কর্মকাণ্ডের জন্য পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার সরাসরি সহায়তা চেয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমরা এখন ভীষণ সমস্যার মধ্যে আছি। এ বিপদ থেকে আপনারাই উদ্ধার করতে পারেন।’ কথোপকথনে খন্দকার মোশাররফ আগামী নির্বাচনে চীনকে ম্যানেজ করার জন্য শহীদ মেহমুদকে অনুরোধও করছেন। প্রত্যুত্তরে শহীদ মেহমুদ আইএসআই’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা এবং এ ব্যাপারে কাজ করার আশ্বাস দেন। খন্দকার মোশাররফ ঢাকায় আইএসআই’র কোন দায়িত্বপ্রাপ্ত এজেন্টের সঙ্গেও দেখা করার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। এর জবাবে মেহমুদ জানান, তাদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন এজেন্ট বিএনপি নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবে।