• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন

অযাচিত চিন্তা থেকে মুক্তির উপায়

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ৩১ অক্টোবর ২০১৯  

আপনার মনে কি সারাদিন অযাচিত বা উল্টাপাল্টা চিন্তা ভর করতে থাকে? যেগুলো আপনার কোন কাজে আসে না বরং এগুলো আপনার মূল্যবান সময় নষ্ট করতে থাকে এবং মন খারাপ করে দেয়।

আমাদের মনে প্রতিদিন ৬০ হাজারেরও বেশী চিন্তা (thought’s) আসে। এর  কিছু ভালো কিছু খারাপ। আমরা চাই বা না চাই চিন্তা মনে আসবেই। কিন্তু কারো কারো মনে প্রতিদিন এমন সব চিন্তা চলতে থাকে যেগুলো সে আদৌ ভাবতে চায় না বা এগুলো তার কোন কাজেও আসে না। বরং তারা এসব চিন্তা ভাবনাকে সঠিক ভেবে নিজেরাই টেনশনে পড়ে যায়। এসব চিন্তাভাবনাকে বলে ওভার থিংকিং।
এসব অযাচিত চিন্তা ভাবনা থেকে মুক্তি পেতে পাঁচটি বাস্তব টিপস চর্চা করুন।

আপনার মনে ভালো চিন্তার বীজ বপন করুন
 
আপনি রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় দেখবেন কোথাও খুব সুন্দর ফুলের বাগান রয়েছে, কোথাওবা কৃষকরা জমিতে চাষ করছে এবং সেখানে ফসল হয়েছে আবার কোন কোন জায়গায় প্রচুর আগাছা জন্মেছে। সুন্দর ফুলের বাগান তৈরী করতে অথবা শস্যের ক্ষেত শস্যে ভরে তুলতে মালী এবং কৃষককে প্রথমে ফুল ও শস্যের বীজ বপন করতে হয়। তারপর চারাগাছকে যত্ন করতে হয় এবং প্রতিদিন তাতে পানি দিতে হয়। পরিবর্তে বাগান একদিন সুন্দর ফুল এবং ক্ষেতে শস্যে ভরে উঠে। 

অন্যদিকে একটি ক্ষেত আগাছায় ভরে তুলতে মালী বা কৃষককে কোনরকম পরিশ্রম করতে হয় না। জমি নিজে নিজে আগাছায় ভরে উঠে। উক্ত জমি কোন ফুল বা ফল তো দেয়ই না বরং জমিকে আরো অনুর্ভর করে তোলে। একইভাবে আমাদের মনও জমির মতো। আর ওভার থিংকিং হলো সেই আগাছা যা মনে এমনি এমনি আসে। যার জন্য কোন পরিশ্রম করতে হয় না। কিন্তু এরকম চিন্তাগুলো আমাদের কোন ভলো ফলতো দেয়ই না বরং উল্টো মনকে দুশ্চিন্তাগ্রস্থ করে তোলে। তাই আমাদের নিজের মনের মালী হতে হবে। মনে ভালো ভালো চিন্তার বীজ বপন করতে হবে। তাতে প্রতিদিন পানি দিতে হবে। এবং নিশ্চিতভাবে সেই বীজই একদিন সুগন্ধময় ফুল ও ফল উপহার দিবে। এর সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে ভালো বই পড়া, সফল মানুষের জীবনী ও আত্ম উন্নয়নমূলক বই পড়া। 

এছাড়াও সফল ব্যাক্তিত্বদের কথা শোনা, পজেটিভ চিন্তাভাবনার মানুষদের চারপাশে থাকা। এ কাজগুলো আমাদের মনে ভালো চিন্তার বীজ বপন করে এবং প্রতিদিন রুটিনমাফিক এগুলো করা। কারণ শুধু বীজ বপন করলেই হবে না প্রতিদিন এগুলোতে পানিও  দিতে হবে। আপনি কিছুদিন এগুলো অনুশীলন করলে নিজেই অনুভব করবেন আপনার মনে আসা অযাচিত চিন্তাভাবনাগুলো ধীরে ধীরে ক্রিয়েটিভ এবং ভালো চিন্তায় পরিবর্তিত হচ্ছে।

প্রকৃতির সাথে কিছুটা সময় কাটান

যত দিন যাচ্ছে তত আমরা প্রকৃতি থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। রীতিমত চার দেয়ালের মাঝে বন্দী হয়ে পড়ছি। সবসময় আমরা অতীত নিয়ে নয়ত ভবিষ্যত নিয়ে ভাবছি। আমাদের মন বর্তমানে থাকে না। লক্ষ্য করে দেখবেন ওভার থিংকিং-এর মূল বিষয়বস্তু হয় অতীত নিয়ে নয়তো ভবিষ্যত নিয়ে। আমরা যদি নিজেদের মনকে বর্তমানে কেন্দ্রীভূত করতে পারি তাহলে অযাচিত চিন্তাভাবনা কমে যাবে। প্রকৃতির সাথে আমাদের মনের সম্পর্কটা খুব ভালো। প্রকৃতির সংস্পর্শে থাকলে মন শান্ত থাকে। মনে দুশ্চিন্তা কম আসে। এজন্য আমাদের উচিৎ প্রতিদিন কিছু সময় প্রকিৃতির সাথে একাত্ম থাকা।

নিজেকে এবং অন্যান্যদের ক্ষমা করতে শিখুন

আমরা বেশীরভাগ সময় অতীতে আমাদের সাথে কী হয়েছে সেটা নিয়ে ভেবে অস্থির হয়ে থাকি। সেটা আমাদের দোষে হলে নিজেকে ক্ষমা করতে পারি না আর অন্য কারো দোষে হলে তাকেও ক্ষমা করতে পারি না। কিন্তু অতীতের কথা ভেবে বা আপসোস করলে অথবা মনে রাগ জমিয়ে রাখলে আমাদের কি কোন লাভ হয়? একদমই হয় না বরং সেটা আমাদের বর্তমানকে নষ্ট করে দেয়। আমরা বর্তমানে ফোকাস করতে পারি না। প্রচুর সময় নষ্ট হয়। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না। আর এ থেকে বাঁচার সবচেয়ে সুন্দর উপায় হলো নিজেকে এবং অন্যকে ক্ষমা করতে শুরু করা।

মেডিটেশন করুন

প্রতিদিন সময় নিয়ে মেডিটেশন করুন। আমরা সবাই জানি মেডিটেশন দেহ মনকে প্রশান্ত করতে এবং মনকে বর্তমানে রাখতে সহায়তা করে। মেডিটেশন হচ্ছে ব্রেনের কুলিং সিস্টেম এবং মনের ক্লিনিং সিস্টেম। পৃথিবীর প্রায় সকল সফল মানুষরাই তাদের প্রতিদিনের রুটিনে মেডিটেশন রাখে। মেডিটেশনে বসে আপনি যখন সচেতন হয়ে দেখতে চেষ্টা করবেন এই মুহুর্তে আপনার মনে কী কী চিন্তাভাবনা চলছে। দেখবেন চিন্তা আসার পরিমাণ অনেক কমে গেছে এবং এক সময় দৃঢ় হয়ে গেছে। এর দ্বারা প্রমাণ হয় আমরা যদি নিজেদের চিন্তাভাবনার প্রতি সচেতন থাকি তখন চিন্তা আসার পরিমাণ কমে যায়। আর তখনি সুযোগ থাকে মনে ভালো চিন্তার বীজ বপন করার।

নতুন কিছু শিখতে শুরু করুন

আমরা যত কর্মহীন হয়ে বসে থাকি আমাদের মনে আজেবাজে চিন্তা তত বেশী আসে। আমাদের যদি এমন কোন কাজ করতে হয় যেখানে গভীর মনোযোগ ও বুদ্ধির প্রয়োজন, সেই কাজ করতে আমাদের মনে অযাচিত চিন্তা আসার সুযোগ কম থাকে। কারণ আমরা একসাথে দু’টি বিষয় নিয়ে চিন্তা করতে পারি না। আর নতুন কিছু শিখার জন্য আগ্রহ ও মনোযোগ বেশী দিতে হয়। তাই যখন দেখবেন আপনার হাতে ফাঁকা সময় আছে সে সময় নতুন কিছু শিখতে শুরু করুন।