• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন

প্রকৃতির সান্নিধ্য পেতে হরিণঘাটায়

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ৩১ মার্চ ২০২২  

ধুলোময় শহুরের বদলে প্রকৃতির সান্নিধ্যে নিশ্বাস নেওয়ার সুযোগ আছে এখানে। এখানেও শব্দ আসবে কানে, তবে তা বিরক্তিকর নয়। বরং দূর থেকে ভেসে আসা সাগরের মায়াবী গর্জন শোনা যাবে। হাজারো প্রজাতির বৃক্ষসমৃদ্ধ চিরসবুজ বনভূমিতে পাখিদের অবাধ বিচরণ মন আর চোখ দুটোকেই শীতল করে দেবে। সবুজ বনের মাঝ থেকে এঁকেবেঁকে এগিয়েছে হাঁটার পথ। সেই পথে হেঁটে যেতে যেতে অনুভূত হবে এ যেন প্রকৃতির এক মায়াবী সান্নিধ্য। এই প্রকৃতি প্রশান্তির সন্ধান দেবে হরিণঘাটা বন।

উপকূলীয় জেলা বরগুনার পাথরঘাটায় সীমাহীন সাগরের কোল ঘেঁষে জন্ম নিয়েছে হরিণঘাটা বন। ছোট থেকে এখানের গাছগুলো প্রাকৃতিকভাবেই বেড়ে উঠেছে সম্মুখ সমুদ্রের বাতাসকে গায়ে মেখে। নানা প্রজাতির সেই গাছগুলো বড় হয়ে ডালপালা ছড়িয়ে বাড়িয়েছে এ বনের সবুজ সৌন্দর্যকে। নয়নাভিরাম এ বনের মধ্য দিয়ে এঁকেবেঁকে জালের মতো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে একাধিক খাল। দর্শনার্থীরা চাইলেই ইঞ্জিনচালিত একটি নৌকা ভাড়া করে বনের মধ্যে খালে ভেসে বেড়াতে পারছেন।

যারা খুব অল্পতেই ক্লান্ত হওয়ার নন, তারা হেঁটে হেঁটে বন দেখতে পছন্দ করেন। আর তেমন কিছু পর্যটক আসেন এখানে, যারা বনের শুরু থেকে হেঁটে চলেন শেষ সীমানা অবধি। অবশ্য সমুদ্রের যে গর্জন বনের মধ্য থেকে শোনা যায়, সেই সমুদ্রকে নিজ চোখে দেখতে হলে পৌঁছাতে হবে বনের শেষ প্রান্তে। বনের শেষ সীমানায় দাঁড়ালেই চোখে পড়বে বাংলাদেশের তটরেখায় ঢেউ খেলে যাওয়া সমুদ্রের শোভা।

প্রায় সাত হাজার একর জায়গা দখল করে দাঁড়িয়ে থাকা বনাঞ্চলটি উপকূলীয় পর্যটন সম্ভাবনার নাম। মায়াবী প্রকৃতির সান্নিধ্যে একটুখানি সময় কাটাতে এখানে প্রতিদিন বাড়ছে পর্যটকদের আগমন। ছুটে আসছে শিশু, যুবক, নারীসহ সব বয়সের মানুষ। এসব বিষয় বিবেচনা করেই হরিণঘাটা বনাঞ্চলকে ইকো টুরিজমের আওতায় আনা হয়েছে। বনটিকে দর্শনার্থী-মুখর করতে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় জলবায়ু ট্রাস্টের তহবিলে বনের ভেতর একটি ঝুলন্ত সেতুসহ আঁকাবাঁকা দুই হাজার ৯৫০ মিটার দৈর্ঘ্য এক ফুট ট্রেইল (হাঁটার পথ) তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি চারটি গোলঘর (বিশ্রামাগার) ও একটি ওয়াচ টাওয়ার রয়েছে বনটিতে।

এই বনে হিংস্র প্রাণী নেই। তবে রয়েছে কিছু বানর, শূকর, হরিণ, গুইসাপসহ প্রায় ৩০ প্রজাতির বন্যপ্রাণী। বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, এখানে রয়েছে প্রায় ৮০ থেকে ৯০ প্রজাতির পাখি। শীতমৌসুমে অতিথি পাখির আগমনে মুখরিত হয় এ বনের সম্মুখ পানের দক্ষিণা সৈকত। পাশাপাশি দেখা মেলে একাধিক শ্রেণির জলজ প্রাণীর।

 

হরিণঘাটা বনাঞ্চলকে ইকো টুরিজমের আওতায় আনা হয়েছে।

হরিণঘাটা বনাঞ্চলকে ইকো টুরিজমের আওতায় আনা হয়েছে।

বনে দেখা যাবে কেওড়া, গেওয়া, পশুর, ছৈলা, বাইন, করমজা, খলিসা, সুন্দরীসহ নানা প্রজাতির গাছ। বনের মধ্যে খালগুলোর দুই ধারে দেখা মিলবে গোলপাতার সারিবদ্ধ সমাবেশ। এ ছাড়া সাগর-মোহনার ঝাউবন বনটিকে করে তুলেছে আরো স্নিগ্ধ।

বনের ঠিক দক্ষিণ সীমানায় সাগর-মোহনার চরে শীতমৌসুম এলেই শুঁটকি উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত পরিবারগুলোর আগমন ঘটে। তখন এখানকার চরের বুকেই সৃষ্টি হয় একটি অস্থায়ী শুঁটকিপল্লি। আগত দর্শনার্থীদের সঙ্গে কথোপকথন হয় শুঁটকিপল্লিতে কর্মরত শ্রমিকদের। আর তখন শুঁটকিপল্লি দেখতে পারার উপলব্ধি যেন উপরি পাওনা হিসেবে মন ভরিয়ে দেয় দর্শনার্থীদের।

সাগরের সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকা এ এলাকার মানুষ সম্ভাবনার আশা খুঁজতে শুরু করেছে নানাভাবে। পর্যটকের আশায় বুক বেঁধে বনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে স্থানীয় মানুষ।

যাতায়াত

ঢাকার সায়েদাবাদ ও গাবতলী থেকে সরাসরি বাসে করে যাওয়া যাবে পাথরঘাটা সদর পর্যন্ত। বাস ভাড়া গাবতলী থেকে জনপ্রতি ৬০০ টাকা এবং সায়েদাবাদ থেকে ৫০০ টাকা।

এ ছাড়া ঢাকা-বরগুনা লঞ্চে করেও যাওয়া যাবে। সেক্ষেত্রে সহজে পাথরঘাটা পৌঁছাতে, বরগুনা লঞ্চঘাট পর্যন্ত না গিয়েই কাকচিড়া লঞ্চঘাটে নেমে যেতে হবে। সেখান থেকে স্থানীয় বাহনযোগে পৌঁছানো যাবে পাথরঘাটা সদর কিংবা হরিণঘাটা পর্যন্ত। লঞ্চে সিঙ্গেল কেবিন এক হাজার ২০০ টাকা ও ডাবল কেবিন দুই হাজার ২০০ টাকা। ডেক ভাড়া ২৫০-৩০০ টাকা। বরগুনা পাথরঘাটা উপজেলা সদর থেকে আট কিলোমিটার দক্ষিণে হরিণঘাটা বাজার ভেদ করে একটু সামনে এগোলেই হরিণঘাটা বনকেন্দ্র।

রাত্রিযাপন ও খাওয়া

থাকা ও খাওয়ার জন্য পাথরঘাটা সদরে ব্যবস্থা রয়েছে। উপজেলা পরিষদের ডাকবাংলোসহ রয়েছে ছোট-বড় আবাসিক হোটেল। সেক্ষেত্রে থাকার খরচ হতে পারে জনপ্রতি ১০০-৪০০ টাকা। খেতে গেলে পাবেন অনেক হোটেল, যাতে থাকবে নদী কিংবা সমুদ্রের তাজা মাছ। আর সম্ভব হলে সময় করে পাথরঘাটা ইলিশ বন্দরটাও ঘুরে আসতে পারেন।