• বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৫ ১৪৩১

  • || ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন
ব্রেকিং:
মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতার প্রতি নজর রাখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর প্রধানমন্ত্রী আজ প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ উদ্বোধন করবেন মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব না খাটানোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর দলের নেতাদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানায় শেখ হাসিনা মুজিবনগর দিবসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা বর্তমান প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানতে পারবে মুজিবনগর দিবস বাঙালির ইতিহাসে অবিস্মরণীয় দিন: প্রধানমন্ত্রী ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস আজ নতুন বছর মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রেরণা জোগাবে : প্রধানমন্ত্রী আ.লীগ ক্ষমতায় আসে জনগণকে দিতে, আর বিএনপি আসে নিতে: প্রধানমন্ত্রী

আ.লীগ দলীয়ভাবে বিএনপির আন্দোলন মোকাবিলার কৌশল নিচ্ছে

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২২  

রাজনৈতিক কর্মসূচিতে ছাড় দিলেও বিরোধী দলের আন্দোলনকে বাড়তে দেবে না সরকারি দল। পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে রাজনীতির মাঠ দখলে রাখতে চাচ্ছে তারা। এক্ষেত্রে আইনি ব্যবস্থার পাশাপাশি দলীয়ভাবে মোকাবিলা করতে কৌশল গ্রহণ করা হচ্ছে। অবশ্য সরকারি দলের পক্ষ থেকে কর্মসূচি দিয়ে মাঠে থাকার পাশাপাশি দলের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে না জড়াতে সতর্কও করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ ও সরকারের একাধিক সূত্রের সঙ্গে আলাপ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে এ বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে বিরোধী দলের রাজনৈতিক কর্মসূচির বিষয়ে কিছুটা নমনীয় অবস্থানে রয়েছে আওয়ামী লীগ। গত ৭ মে অনুষ্ঠিত দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে দলীয়-প্রধান বিরোধী দল বিএনপির কর্মসূচিতে বাধা না দেওয়ার নির্দেশ দেন। ওই বৈঠক শেষে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিরোধী দলের কর্মসূচিতে বাধা না দেওয়ারও আহ্বান জানান। পরে জাতীয় সংসদের বৈঠকসহ একাধিক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বিরোধী দলের নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচিতে বাধা না দেওয়ার কথা জানান। গত ১৪ আগস্ট সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘চলমান পরিস্থিতিতে আমাদের বিরোধী দল একটু সুযোগ পাচ্ছে। তারা আন্দোলন করবে করুক। তাই আমি আজকেও নির্দেশ দিয়েছি—খবরদার, যারা আন্দোলন করছেন, তাদের কাউকে যেন গ্রেফতার বা ডিস্টার্ব না করা হয়।’ এর আগে ২৩ জুলাই অপর এক অনুষ্ঠানে বিএনপিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘তারা যদি প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় ঘেরাও করতে আসে, তাও বাধা দেওয়া হবে না। বরং তারা অফিস পর্যন্ত হেঁটে আসতে পারলে সসম্মানে বসিয়ে চা খাওয়ানো হবে। তাদের কথা শুনতেও আপত্তি নেই।’

সরকারি দলের নমনীয় অবস্থানের প্রেক্ষাপটে গত ৫ মাস ধরে বিএনপি মাঠের রাজনীতি বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই ঢাকা ও ঢাকার বাইরে রাজনৈতিক কর্মসূচি দিয়ে তাদের অবস্থান জানান দিচ্ছে। আন্দোলন কর্মসূচির নামে দলটি রাজধানীতে বড় ধরনের শোডাউনও করেছে। অবশ্য বিএনপির শোডাউনের পাল্টা হিসেবে সরকারি দলও তাদের দিবসকেন্দ্রিক কর্মসূচি সামনে রেখে শোডাউন করেছে রাজধানীতে।

বিএনপির অভিযোগ,  প্রথম দিকে নির্বিঘ্নে কর্মসূচি পালন করলেও সম্প্রতি তারা বাধার সম্মুখীন হচ্ছে। বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারি দলের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনাও হয়েছে। এতে হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে। বিএনপি দাবি করেছে, সরকারি দল তাদের আন্দোলনকে উপলক্ষ করে হামলা চালিয়ে তাদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করছে। অপরদিকে সরকারি দলের দাবি, আন্দোলনে জনগণের সাড়া না পেয়ে নিজেরাই সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে চাচ্ছে বিএনপি। তবে তাদের অপচেষ্টা সফল হবে না।

বিএনপির দাবি, তাদের নেতাকর্মীদের মাঝে আতঙ্ক তৈরি করতে সম্প্রতি কয়েকটি স্থানে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটনা হয়েছে। অবশ্য সরকারি দল কোনও হামলার কথা স্বীকার করছে না। তাদের দাবি, কিছু ক্ষেত্রে তারা নিজেরা সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে। আবার কোথাও কোথাও পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে বিনা উসকানিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর আক্রমণ করছে।

এরইমধ্যে যুবলীগ ঘোষণা দিয়েছে, বিএনপি-জামায়াত জোট দেশের স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে যেখানেই অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করবে, সেখানেই প্রতিরোধ করবে যুবলীগ। সংগঠনের নেতারা বলেছেন—‘নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে খেলা হবে।’

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) এক অনুষ্ঠানে বিএনপিকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আন্দোলন করতে চাইলে শান্তিপূর্ণভাবে রাজপথে আন্দোলন করুন। আন্দোলনের নামে কোনও ধরনের নৈরাজ্য সৃষ্টি করবেন না। রাজপথ কাউকে ইজারা দেওয়া হয়নি। আপনারা ফাঁকা মাঠে আন্দোলন করবেন, আর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বসে বসে আঙুল চুষবেন, তা তো হবে না।’

তিনি বলেন, ‘বিএনপি আন্দোলন করার জন্য মাঠে কিছু লোক নামিয়েছে। কারা কত দিন থাকেন আমরাও দেখবো। এখন তাদের অবস্থা আষাঢ়ের তর্জন-গর্জনের মতো।’

এর আগে সেতুমন্ত্রী সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) অপর এক অনুষ্ঠানে প্রকারান্তরে কুমিল্লা ও মিরপুরের হামলার কথা স্বীকার করলেও বরিশাল ও চট্টগ্রামে বিএনপি নিজেরা নিজেরা মারামারি করেছে বলে দাবি করেন। ওই অনুষ্ঠানে তিনি দলীয় নেতাকর্মীকে সংঘর্ষে না জড়াতে নির্দেশ দেন।

এদিকে গত রবিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘বিএনপিকে হঠাৎ করেই মাঠে-ময়দানে দেখা যাচ্ছে। তাদের রাজনৈতিক স্বাধীনতা রয়েছে। তারা গণতান্ত্রিকভাবে কর্মসূচি করলে সরকারের কিছু বলার নেই। কিন্তু যখনই জ্বালাও- পোড়াও ও ভাঙচুর হবে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা নেবে। নির্বাচনকে সামনে রেখে কেউ যদি আগের মতো অরাজকতা করতে চায় দেশে, তাদের উপযুক্ত জবাব দেবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।’

কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘বিভিন্ন ইস্যুকে কেন্দ্র করে বিএনপি রাজপথে উসকানিমূলক কর্মসূচি দিচ্ছে। সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে আন্দোলনের নামে তারা পুলিশের ওপর হামলা চালাচ্ছে। আন্দোলনের নামে বিএনপি রাজপথ দখল করতে এলে মোকাবিলার জন্য আওয়ামী লীগ প্রস্তুত রয়েছে।’

এদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, আওয়ামী লীগের রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করার অবস্থান নেই বিধায় আক্রমণাত্মক রাজনীতি করছে। ভয়ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি করে টিকে থাকার চেষ্টা করছে। আমাদের আন্দোলনের জোয়ার মাত্র শুরু হয়েছে। এরমধ্যে তাদের এই অবস্থা। এই জোয়ার আরও বাড়লে কী হবে। তাদের সঙ্গে দেশের জনগণ নেই। এজন্য হামলা-মামলা দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করে টিকে থাকতে চাইছে। তবে তারা সফল হবে  না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মুহম্মদ ফারুক খান বলেন, ‘বিএনপি চরিত্রগতভাবেই দেশের মানুষের সঙ্গে ভাঁওতাভাজি করে আন্দোলন করার চেষ্টা করে আসছে। অতীতেও এটা করে তারা সফল হয়নি। এবারও তারা সফল হবে না। তাদের এই আন্দোলন দেশের মানুষ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় গ্রহণ করছে না।’

তিনি বলেন, ‘বিএনপি তাদের নিষ্ক্রীয় কর্মীদের চাঙা করতে আন্দোলন-আন্দোলন খেলছে। আসলে আন্দোলন তাদের ‍মূল লক্ষ্য নয়, তাদের লক্ষ্য নির্বাচন। আমি মনে করি তারা নির্বাচনে যাবে। আর রাজনীতি করতে হলে বা সরকার গঠন করতে হলে তাদের নির্বাচনের মাধ্যমেই আসতে হবে।’

এই নেতা বলেন, ‘তাদের আন্দোলনে জোয়ার আসছে—এটা মোটেও সত্য নয়। আন্দোলনের লাগাম টানার কোনও বিষয় নেই। বরং জনগণের সাড়া না পেয়ে ভিন্ন স্বার্থ হাসিলে আন্দোলনের নামে তারা সহিংসতা করতে চাচ্ছে। আমরা কোনও গণতান্ত্রিক আন্দোলন নিবৃত্ত করতে চাই না। আমরা তাদের আন্দোলনে বাধা দেইনি। তারা আন্দোলনের নামে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নষ্ট করে। আর এটা হলে তো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা নেবে। তাদের ধ্বংসাত্মক রাজনীতির বিরুদ্ধে দেশের জনগণকে সচেতন করবো।