• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন

যোগাযোগের নতুন দিগন্ত খুলবে পদ্মাসেতুর রেল পথ

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ১১ ডিসেম্বর ২০২২  

শিবচর প্রতিনিধিঃ বহুল পরিচিত শিবচরের বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌরুটের বাংলাবাজার ঘাট কেন্দ্রিক শ্রমজীবিদের নতুন কর্মসংস্থানের স্বপ্ন দেখাচ্ছে পদ্মাসেতুর রেলপথ। ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে পদ্মাসেতুর জাজিরা প্রান্তের টোলপ্লাজা পর্যন্ত রেলপথ ইতোমধ্যে নির্মান শেষ হয়েছে। ট্রেনে চড়ে রাজধানী ঢাকা যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে মাদারীপুরের শিবচরের মানুষ। আর ট্রেন চালু হলে ঘাটকেন্দ্রিক বেকার হয়ে যাওয়া শ্রমজীবিরা নতুন করে তাদের উপার্জনের নতুন পথ খুঁজে পাবে। ট্রেন চালু হলে স্টেশন/জংশন কেন্দ্রিক ভাসমান কেনাবেঁচা বাড়বে। লোক সমাগম হলে আয়ের পথ তৈরি হবে। তাই রেললাইন নতুন করে স্বপ্ন দেখাচ্ছে পদ্মাপাড়ের অসংখ্য শ্রমজীবি মানুষকে। আলাপ- চারিতায় এমনটাই জানান তারা।

জানা গেছে,মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলাটি ভৌগলিক দিক দিয়ে রাজধানী ঢাকার বেশ কাছে। পদ্মাসেতুকে ঘিরে নানা উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড হচ্ছে এই শিবচরে। পদ্মাসেতু চালুর পর শিবচর উপজেলার মানুষ রাজধানীর সাথে দ্রুততম সময়ে যোগাযোগ করতে পারছে। তাতে করে এ এলাকার মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডেও গতি এসেছে। অন্যদিকে পদ্মানদীর বাংলাবাজার-শিমুলিয়া ঘাটের উপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করা অসংখ্য শ্রমজীবি মানুষও তাদের দীর্ঘদিনের পেশা হারিয়েছে। তবে
পদ্মাসেতুর রেলসংযোগ ঘিরে নতুন করে স্বপ্ন দেখছে শ্রমজীবি এসকল মানুষেরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটারের মধ্যে ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে মাওয়া পর্যন্ত ৪২ কিলোমিটার এবং ঢাকা থেকে মাওয়া পর্যন্ত ৩৯ কিলোমিটার অংশের কাজের অগ্রগতি শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকা-পদ্মা সেতু হয়ে নতুন চার জেলা (মুন্সিগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও নড়াইল) অতিক্রম করে যশোরের সঙ্গে রেল যোগাযোগ স্থাপিত হবে। ২০২৪ সালের জুনে প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।  ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে পদ্মাসেতুর জাজিরা টোলপ্লাজা পর্যন্ত রেল পথের ভাঙ্গা উপজেলার মালিগ্রাম, শিবচরের বাঁচামারা ও জাজিরার নাওডোবা সংলগ্ন এলাকায় নির্মানাধীন রয়েছে জংশন। এর আগে গত ১ নভেম্বর ভাঙ্গা থেকে পদ্মাসেতুর জাজিরা পর্যন্ত ৩১ কিলোমিটার রেলপথে পরীক্ষামূলক ‘ট্র্যাক কার’ চালানো হয়েছে।

রেলপথ সংলগ্ন শিবচরের দত্তপাড়া, পাঁচ্চর, কুতুবপুর, কাঁঠালবাড়ী এলাকার স্থানীয়রা বলেন,'পদ্মাসেতুর পর ট্রেন চালু হলে যোগাযোগের আরেক দিগন্ত উন্মোচিত হবে। এই রেললাইন ঘিরে এই এলাকার মানুষ নতুন কর্মসংস্থানের স্বপ্ন দেখছে। তাছাড়া ব্যবসায়-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে রেল চালু হলে। দেশের বিভিন্ন স্থানে কম খরচে মালামাল পরিবহস করা যাবে। এই এলাকার কৃষিজ পন্য সহজেই বিভিন্ন স্থানে পৌছে দেয়া যাবে। তাছাড়া স্বল্প আয়ের মানুষ, শ্রমজীবিরা রেল কেন্দ্রিক নতুন কাজের সন্ধান পাবে। জংশন এলাকায় ক্ষুদ্র ব্যবসায় বা হকারি করেও জীবিকা নির্বাহ করতে পারবে। পদ্মার ঘাট বন্ধ হবার পর ঘাটের শতশত মানুষ তাদের দীর্ঘদিনের পেশা হারিয়েছে। অসংখ্য হকারশ্রেনির মানুষ আজ বেকার। তারাও রেল নিয়ে আশায় আছে। নতুন করে জীবিকা নির্বাহের জায়গা তৈরি হবে এই রেল ঘিরে।'

পাঁচ্চর এলাকার ঝালমুড়ি বিক্রেতা আল-অামিন জানান,'আগে ঘাটে ঝালমুড়ি বিক্রি করতাম। ঘাট বন্ধ হবার পর আয়-রোজগার কমে গেছে। এখন রেল লাইনে ঝালমুড়ি বিক্রি করি। বিকেলে রেললাইনে অসংখ্য লোকজন ঘুরতে আসে। ভালো বিক্রি হয়। রেল চালু হলে জংশনে, ট্রেনে ঝালমুড়ি বিক্রি করা যাবে। তখন আরও বাড়বে বেঁচা কেনা।'

আরেক বিক্রেতা ইস্কান্দার হাওলাদার বলেন,'রেললাইন আমাদের এলাকার উপর দিয়ে পদ্মাসেতুতে গিয়ে মিশেছে। রেল চালু হলে আমরা অল্প খরচে সহজেই ঢাকা যেতে পারবো। মানুষের আয়-রোজগারের নানা পথ চালু হবে। এই এলাকার মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটবে।'

কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহসেন উদ্দিন সোহেল বেপারী জানান,'রেল চালু হলে এই এলাকার আরো পরিবর্তন আসবে। মানুষের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি বাড়বে। নতুন কাজের ক্ষেত্র তৈরি হবে। তাছাড়া যোগাযোগের অভাবনীয় পরিবর্তন আসবে।'

দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ স্বপ্নের পদ্মাসেতুর সুফল ভোগ করছে এখন। রাজধানী ঢাকা চলে এসেছে ঘরের নিকটে। রেল চালু হলে নতুন দিগন্ত খুলবে যোগাযোগের। রেল ঘিরেও স্বপ্ন এই অঞ্চলের মানুষের। আর শ্রমজীবিদের স্বপ্ন বেঁচে থাকার নতুন কাজের জায়গা তৈরির।'