• বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন

স্ত্রীকে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিলেন স্বামী

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ৬ এপ্রিল ২০২২  

মাদারীপুর প্রতিনিধি:
মাদারীপুরের শিবচরে স্ত্রী আয়শা বেগমকে হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত স্বামী রাজ্জাক তালুকদার (৪২) দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

মঙ্গলবার বিকেল ৫টার দিকে জেলার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এ কে এম আলমগীর হোসেনের আদালতে তাঁর জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়।

শিবচর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিদ্ধার্থ ব্রত কুন্ডু স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এর আগে মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে আসামি রাজ্জাক তালুকদারকে উপজেলার চরশ্যামাইল এলাকায় থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। রাজ্জাক একই এলাকার আব্দুল খালেক তালুকদারের ছেলে।

মামলার এজাহার ও আদালত সূত্র জানায়, প্রায় দশ বছর আগে কালকিনি উপজেলার আব্দুল মান্নান খানের মেয়ে আয়শার সঙ্গে শিবচরের চরশ্যামাইল এলাকার আব্দুল খালেক তালুকদারের ছেলে ইজিবাইকচালক রাজ্জাক তালুকদারের বিয়ে হয়। এটি ছিল রাজ্জাকের দ্বিতীয় বিয়ে। প্রথম স্ত্রী থাকেন ঢাকায়। রাজ্জাক ও আয়শা দম্পতির ৭ বছর বয়সী এক ছেলে ও ৫ বছর বয়সী এক মেয়ে রয়েছে। দুই সন্তান নিয়ে তাঁরা শিবচরের চরশ্যামাইল গ্রামে থাকতেন। পারিবারিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গত দুই বছর ধরে প্রায়ই তাঁদের মধ্যে ঝগড়া হতো। সোমবার ইফতারের পর সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে রাজ্জাক তালুকদার কাজ শেষে বাড়িতে ফেরেন। এ সময় তিনি তার স্ত্রী আয়শা বেগমকে ঘরের মধ্যে মুঠোফোনে কথা বলতে দেখতে পান। আয়শা মুঠোফোনে কার সঙ্গে কথা বলছে, বিষয়টি জানতে চাইলে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে তুমুল ঝগড়া শুরু হয়। একপর্যায়ে রাজ্জাক তা স্ত্রীর হাতে থাকা মুঠোফোনটি জোরপূর্বক কেড়ে নিতে চায়। এ সময় আয়শা তার স্বামীকে মুঠোফোনটি না দিলে রাজ্জাক ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। পরে তিনি ঘরের সেলাই মেশিনের পাশে থাকা কেঁচি দিয়ে স্ত্রীর বুকের বাম পাশে এবং ডান চোখের নিচে আঘাত করে। তাদের চিৎকার চেঁচামেচিতে প্রতিবেশীরা এগিয়ে এলে গুরুতর আহত আয়শাকে নিয়ে তার স্বামীসহ পরিবারের লোকজন শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন। তবে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে হাসপাতালে আনার আগেই আয়শার মৃত্যু হয়। পরে আয়শার লাশ রেখেই দ্রুত পালিয়ে যায় তার স্বামী রাজ্জাক। এ ঘটনায় ওই রাতেই আয়শার বাবা আব্দুল মান্নান খান শিবচর থানায় বাদী হয়ে রাজ্জাক তালুকদারকে একমাত্র আসামি করে হত্যা মামলা করেন। 

এ মামলায় মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে চরশ্যামাইল এলাকায় অভিযান চালিয়ে রাজ্জাককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে বিকেল ৪টার দিকে তাকে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এ কে এম আলমগীর হোসেনের আদালতে হাজির করা হয়। পরে আদালতের কাছে আসামি তার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

আসামির জবানবন্দির বরাত দিয়ে এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও শিবচর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সিদ্ধার্থ ব্রত কুন্ডু বলেন, ‘অভিযুক্ত আসামি রাজ্জাক আদালতের কাছে তার স্ত্রীকে হত্যার দায় স্বীকার করেছেন। তিনি আদালতকে বলেছেন, তার স্ত্রী মুঠোফোনে বাহিরের একজনের সঙ্গে কথা বলাকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়। পরে তিনি তার স্ত্রীর কাছে ফোন চান, কিন্তু তার স্ত্রী ফোন না দেওয়ায় স্বামী রাগের মাথায় শেলাই মেশিনের পাশে থাকা একটি কেঁচি দিয়ে তাকে দুটি কোপ দেয়। এতেই রক্তক্ষরণ হলে মারা যায় তার স্ত্রী আয়শা।’

জানতে চাইলে আদালত পুলিশের পরিদর্শক রমেশ চন্দ্র দাশ বলেন, ‘হত্যা মামলার আসামি রাজ্জাক তালুকদারকে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এ কে এম আলমগীর হোসেনের আদালতে হাজির করা হয়। পরে তিনি আদালতের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। আদালত তার জবানবন্দি গ্রহণ করে এবং আসামিকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।’