• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন

রাগ দমনের কৌশল

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ২৩ নভেম্বর ২০২২  

ক্রোধ বা রাগ, একটি স্বাভাবিক তীব্র মানসিক অবস্থা যা অনুভূতিতে আঘাত প্রাপ্তির ফলে একটি শক্তিশালী অস্বস্তিকর এবং অসহযোগী প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। ক্রোধের কারণে মানসিক অবস্থার পাশাপাশি প্রায়ই শারীরিক চাপ অনুভব করে মানুষ। যেমন হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি, উচ্চ রক্তচাপ, অ্যাড্রেনালিন এবং নোরাড্রেনালিনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়।

কেউ কেউ রাগকে একটি আবেগ হিসেবে দেখেন যা অস্বস্তিকর উত্তেজনার সৃষ্টি করে এবং শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। অনিয়ন্ত্রিত রাগ ব্যক্তিগত বা সামাজিক সুস্থতার ওপর নেতিবাচকভাবে প্রভাব ফেলতে পারে। তাই ক্রোধ নিয়ন্ত্রণে কিছু পরামর্শ দিয়ে থাকেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞনা। যেগুলোতে অভ্যস্ততা তৈরি করলে ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া যায়।

ক্রোধের সময় কী ঘটে দেহে :
ব্রেন সিগন্যাল পাঠায়। ঝড়োগতিতে নিঃসরণ ঘটে সক্রিয় হরমোন নর-এড্রিনালিন। নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত হয়, গভীর হয়। রক্তচাপ বেড়ে যায়। দেহের অন্যান্য অংশ থেকে রক্তপ্রবাহ দ্রুত ছুটে আসে হৃপিণ্ডে, ব্রেন ও পেশির দিকে।  হজমক্রিয়া থেমে যায়। রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায়। হাতের মুঠি বন্ধ হয়ে আসে, দাঁতে দাঁত খিঁচিয়ে আসে, পরিপাকতন্ত্র খামছে ধরে। মূলত ক্রোধের সময় দেহমনে জেগে ওঠে ডেঞ্জার সিগন্যাল বা লালবাতি।  রাগ হচ্ছে দেহের স্বাভাবিক আবেগীয় ও দৈহিক প্রতিক্রিয়া।

ক্রোধ প্রশমন:
সাম্প্রতিক মনোগবেষণা থেকে জানা যায়, ক্রোধ পোষ মানানোর যেসব সনাতন পদ্ধতি চলে আসছিল তা সমালোচনার ঊর্ধ্বে নয়। দৈহিক ভঙ্গিমা যেমন বালিশে বা নরম কিছুতে পাঞ্চ করে রাগ ঝাড়ার যে কৌশলের প্রচলন আছে, সাময়িকভাবে পজেটিভ ফলাফল থাকলেও এসব পদ্ধতি মূলত পরিস্থিতি থেকে নিজেকে আড়াল করে রাখার প্রবণতাই আমাদের বৈশিষ্ট্যে গেঁথে দেয়। রাগ প্রশমনের এ ধরনের কৌশলের উল্টা পিঠে এভাবেই আগ্রাসী আচরণের বীজ রোপিত হয়ে যেতে পারে আমাদের মাঝে। একটি বিষয় খোলাসা হওয়া দরকার। নতুন কৌশল বর্ণনায় রাগ অবদমিত করে রাখার বিষয়টিকে উৎসাহিত করা হচ্ছে না। বরং রাগ পোষ মানানোর জন্য পরীক্ষিত নতুন এ গবেষণার বৈজ্ঞানিক কৌশলগুলো যথেষ্ট কার্যকর। বিশ্বে মানসিক স্বাস্থ্যসেবার অংশ হিসেবে ডিপ্রেশন, অ্যাংজাইটি ইত্যাদি চিকিৎসায় সাফল্যের সঙ্গে কগনেটিভ বিহেভিয়ার থেরাপির সুনির্দিষ্ট প্রটোকল ব্যবহার করা হয়। ক্রোধের ক্ষেত্রেও একই কৌশলে রাগ শাসন করার কৌশল রপ্ত করা যায়।

ক্রোধ দমনে নতুন কিছু কৌশল: অধৈর্য বা বিরক্তি সৃষ্টি করে এমন ঘটনাগুলো প্রথমে নিখুঁতভাবে শনাক্ত করুন। নোট করে রাখুন। পরবর্তীতে শান্ত থেকে দৃঢ়তার সঙ্গে নিজেকে এক্সপ্রেস করুন। তাড়াহুড়া বা সজোরে পরিস্থিতির ভিতর নিজেকে ছুড়ে দেওয়া নয়, অপরকে দোষারোপ করাও নয়, এমনকি বিতর্কিত শব্দ ব্যবহার করা থেকেও নিজের জিহ্বাকে শাসন করতে হবে এ সময়। মনে রাখুন, ক্রোধের সময় ছুড়ে দেওয়া শব্দগুলো আপনার দেহ ও মনে স্ট্রেস রিএকশন ঘটায়। এ রিঅ্যাকশন মানেই দেহের ক্ষতি, মনের ক্ষতি, ব্রেনের ক্ষতি, হার্টের ক্ষতি। ধীরে ধীরে উচ্চারণ করুন রিলাক্স। রিলাক্স।

দশ পর্যন্ত গণনা : উন্মত্ততার সময় এ প্রক্রিয়াটি চর্চা করার কৌশল রপ্ত করে নিন। ধীরে ধীরে চর্চা করতে হবে। গভীর টানে প্রশ্বাস নিন। ছাড়ুন নিঃশ্বাস। অথবা রাগ উতরে ওঠার ঘটনা থেকে মুহৃর্তের জন্য দূরে সরিয়ে নিন নিজেকে। এর অর্থ এই নয়, পরিস্থিতি থেকে পালিয়ে গেলেন। শান্ত হলেই আবার ফিরে আসুন।

হাস্যরসের উপাদান : রসবোধই মানসিক চাপ সৃষ্টিকারী ঘটনা থেকে আপনাকে খানিকটা দূরে সরিয়ে রাখতে পারবে। ঘটনার ভিতরই ঘুরপাক খেয়ে দেখুন কৌতুকের কিছু উপাদান পাওয়া যায় কিনা। রাগ তরল করার জন্য রসবোধ পরিস্থিতি থেকেই খুঁজে বের করা যায়।

চিন্তার গণ্ডি বাড়ান: কোনো চিন্তা ক্ষোভ জাগাতে পারে। বিক্ষুব্ধ করতে পারে। প্রথমে চিন্তাগুলোর জটিল গিঁট থেকে বিকল্প চিন্তার পথ বের করে নিতে হবে। এরপর পাল্টা এগ্রেশন জাগে এমন পরিস্থিতিগুলো পরিবর্তনের চেষ্টা চালাতে হবে।

ক্রোধবিষয়ক বই রাখুন : যখন নিজের মাঝে ক্রোধের উন্মত্ততা জাগবে, ১০ ডিগ্রি রাগের স্কেলে, তা মেপে নিন। যদি স্কোর ৪ বা ততোধিক হয়, পরিস্থিতি বিষয়ক চিন্তা এবং দৃশ্যমান ইমেজগুলো নোট করে রাখুন। ক্রোধের মেয়াদকাল, স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিণতি কী কী, বিস্তারিত লিখে রাখুন। কী পদ্ধতিতে, কী পরিস্থিতিতে, কী প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন, পুরো বিষয়টি তখন আপনার কাছে খোলাসা হয়ে যাবে।