• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন

২৪০০ আফগান আশ্রয়প্রার্থীকে নির্বিচারে আটকে রেখেছে আরব আমিরাত

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ১৬ মার্চ ২০২৩  

সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) কমপক্ষে ২ হাজার ৪০০ আফগান আশ্রয়প্রার্থীকে নির্বিচারে আটক করে রেখেছে বলে জানিয়েছে নিউইয়র্কভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। আটকে রাখা এসব আশ্রয়প্রার্থীর মধ্যে শিশুও রয়েছে।

মূলত ২০২১ সালের আগস্টে আফগানিস্তান তালেবানের দখলে চলে গেলে কাবুল থেকে তাদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল এবং এরপর থেকে প্রাপ্তবয়স্ক ও শিশুদের আবুধাবির একটি অস্থায়ী স্থাপনায় বন্দি রাখা হয়েছে। বুধবার (১৫ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আফগান এসব আশ্রয়প্রার্থী পুনর্বাসিত হওয়ার কোনও আশা ছাড়াই ‘আবদ্ধ, দুর্বিষহ পরিস্থিতিতে’ এবং ‘অচলাবস্থায় আটকা থেকে’ বসবাস করছে বলে এইচআরডব্লিউ বলেছে।

তবে সংযুক্ত আরব আমিরাত সেখানকার খারাপ পরিস্থিতির কথা অস্বীকার করেছে। দেশটির দাবি, পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শেষ করতে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে কাজ করছে তারা।

বিবিসি বলছে, ১০ হাজারেরও বেশি আফগানকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল এবং তাদেরকে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও অন্য স্থানে পুনর্বাসিত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়া আমেরিকান সৈন্যরা কাবুল ত্যাগ করার আগে আরও ৭০ হাজার আফগানকে সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, তালেবান কাবুলের ক্ষমতা দখলের পর আবুধাবিতে যাওয়া আফগানদের দু’টি রূপান্তরিত অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সে রাখা হয়েছে। এই দু’টি অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্স এমিরেটস হিউম্যানিটারিয়ান সিটি এবং তাসামীম ওয়ার্কার্স সিটি নামে পরিচিত।

এইচআরডব্লিউ বুধবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলেছে, তারা এমিরেটস হিউম্যানিটারিয়ান সিটিতে আটক ১৬ জন আফগানের সাথে কথা বলেছে। তাদের মধ্যে আটজন আগে আফগানিস্তানে মার্কিন সরকার-সংশ্লিষ্ট সংস্থা বা প্রোগ্রামে কাজ করেছিল।

এসব আফগান আশ্রয়প্রার্থী তাদের চলাফেরার স্বাধীনতা, ন্যায্য ও কার্যকর শরণার্থী মর্যাদা না পাওয়া, আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ না থাকা, শিশুদের জন্য অপর্যাপ্ত শিক্ষা এবং কোনও ধরনের মনোসামাজিক সহায়তা না পাওয়ার বিষয়ে অভিযোগ করেছেন।

নিউইয়র্কভিত্তিক এই আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার কাছে কোনও সুবিধা না পাওয়া আটক এই ব্যক্তিরা অতিরিক্ত ভিড়, ক্ষয়প্রাপ্ত অবকাঠামো এবং সেখানে পোকামাকড়ের উপদ্রবের কথা সামনে এনেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আফগানকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, এমিরেটস হিউম্যানিটারিয়ান সিটি হচ্ছে ‘ঠিক একটি কারাগারের মতো’। অন্য একজন সেখানে ‘বসবাসকারীদের মধ্যে ব্যাপক মানসিক স্বাস্থ্য সংকটের’ বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।

আন্তর্জাতিক আইন এবং জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী, আশ্রয়প্রার্থী এবং অভিবাসীদের প্রশাসনিক উদ্দেশ্যে আটক করা উচিত নয়। আর তাই এইচআরডব্লিউ সংযুক্ত আরব আমিরাতকে বন্দিদের মুক্তি দেওয়ার এবং তাদের সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ইউএই গবেষক জোই শিয়া বলেছেন, ‘আরব আমিরাতে আটকা পড়া এই আফগানদের মর্মান্তিক দুর্দশাকে উপেক্ষা করা উচিত নয় সরকারের।

আমিরাতের একজন কর্মকর্তা বার্তাসংস্থা এএফপিকে বলেছেন, এমিরেটস হিউম্যানিটারিয়ান সিটিতে আফগানদের জন্য ‘উচ্চ মানের আবাসন, স্যানিটেশন, স্বাস্থ্য, ক্লিনিকাল, কাউন্সেলিং, শিক্ষা এবং খাদ্য পরিষেবা’ প্রদান করছে সংযুক্ত আরব আমিরাত’।

তিনি আরও বলেছেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত মার্কিন কর্তৃপক্ষের সাথে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে যাতে ‘বাকী আশ্রয়প্রার্থীদের সময়মতো পুনর্বাসন করা যায়’।

অন্যদিকে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট বলেছে, এমিরেটস হিউম্যানিটারিয়ান সিটিতে থাকা আফগানদেরসহ সকল যোগ্য আফগানদের পুনর্বাসনের জন্য ‘স্থায়ী’ মার্কিন প্রতিশ্রুতি রয়েছে।