• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন

চীন কখনো অন্যকে আক্রমণ করবে না: শি জিন পিং

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ৩ অক্টোবর ২০২১  

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং বলেছেন, চীনের জনগণ শান্তি, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির ধারণা অন্বেষণের জন্য সর্বদাই সুপ্রসিদ্ধ এবং সংগ্রামী। চীন কখনো অন্যকে আক্রমণ বা পীড়ন করেনি এবং করবেও না বা আধিপত্য চাইবে না।

চীন সর্বদাই বিশ্ব শান্তির নির্মাতা, বৈশ্বিক উন্নয়নে অবদানকারী, আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলার রক্ষক ও জনপণ্য সরবরাহকারী। চীন নিজেদের নতুন উন্নয়নের মাধ্যমে বিশ্বকে নতুন সুযোগ এনে দিতে থাকবে, যোগ করেন শি জিন পিং।

সম্প্রতি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৬তম অধিবেশনের সাধারণ বিতর্কে দেওয়া ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।

চীনা প্রেসিডেন্ট বলেন, এক বছর আগে, জাতিসংঘের ৭৫তম বার্ষিকী উপলক্ষে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ ধারাবাহিক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন এবং সংঘবদ্ধভাবে কোভিড-১৯ মোকাবিলা, চ্যালেঞ্জ ঠেকানো, বহুপাক্ষিকতাবাদ সমুন্নত রাখা, জাতিসংঘের ভূমিকা জোরদার করা এবং বর্তমান ও আগামী প্রজন্মের সমন্বিত ভবিষ্যতের জন্য কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে একটি ঘোষণা জারি করেছিলেন। এক বছর পর আমাদের বিশ্ব এক শতাব্দীতে প্রত্যক্ষ করেনি এমন পরিবর্তন এবং কোভিড-১৯ মহামারির সম্মিলিত প্রভাবের মুখোমুখি হয়েছে। সব দেশে শান্তি ও উন্নয়নের জন্য মানুষ আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে অধিক উন্মুখ হয়ে আছে। সমতা ও ন্যায্যতার জন্য তাদের আহ্বান শক্তিশালী হচ্ছে এবং সহযোগিতার মাধ্যমে পরস্পরের কল্যাণ সাধনে তারা অধিকতর দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

চীনা প্রেসিডেন্ট বলেন, এ মুহূর্তে কোভিড-১৯ বিশ্বে তাণ্ডব চালাচ্ছে এবং মানব সমাজে গভীর পরিবর্তন ঘটছে। বিশ্ব এক নতুন বিশৃঙ্খলা এবং রূপান্তরের সময়ে প্রবেশ করেছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রত্যেক দায়িত্বশীল রাষ্ট্রনায়কের ওপর বর্তায় আমাদের সময়ের প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়া এবং আত্মবিশ্বাস, সাহস ও লক্ষ্য অর্জনের প্রত্যয় নিয়ে ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নেওয়া।

প্রথমত আমাদের অবশ্যই কোভিড-১৯-কে পরাজিত করতে হবে এবং এ চূড়ান্ত লড়াইয়ে জয়ী হওয়া মানবজাতির ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ব সভ্যতার ইতিহাস মহামারির বিরুদ্ধে লড়াইয়েরও ইতিহাস। বাধা অতিক্রম করে মানবজাতি সর্বদা বিজয়ী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে এবং বৃহত্তর উন্নয়ন ও অগ্রগতি অর্জন করেছে। বর্তমান মহামারি প্রবল হলেও আমরা নিশ্চিতভাবে এটি কাটিয়ে উঠবো এবং জয়ী হবো, যোগ করেন চীনা প্রেসিডেন্ট।

জাতিসংঘে দেওয়া ভাষণে তিনি উল্লেখ করেন, আমাদের উচিত সর্বদা মানুষ ও তাদের জীবনকে প্রাধান্য দেওয়া এবং প্রত্যেক ব্যক্তির প্রাণ ও মর্যাদার মূল্য দেওয়া। আমাদের প্রয়োজন বিজ্ঞানকে সম্মান করা, বিজ্ঞানভিত্তিক পন্থা অবলম্বন করা এবং বিজ্ঞানের আইন মেনে চলা। আমাদের নিয়মতান্ত্রিক ও লক্ষ্যযুক্ত কোভিড-১৯ নীতিমালা অনুসরণ এবং জরুরি সাড়াদান ব্যবস্থা উভয়ই দরকার। আর মহামারি নিয়ন্ত্রণ এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রসার উভয় চালিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। আমাদের কোভিড-১৯ মোকাবিলায় সমন্বিত বৈশ্বিক সাড়াদান বৃদ্ধি এবং ভাইরাসের আন্তসীমান্ত সংক্রমণের ঝুঁকি কমিয়ে আনা দরকার।

তিনি বলেন, কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমাদের সবচেয়ে কার্যকর অস্ত্র টিকাদান। টিকাকে বিশ্বের জনসাধারণের পণ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোতে টিকার সহজলভ্যতা ও টিকা যাতে সাশ্রয়ী হয়, সেটা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তার ওপর আমি অনেকবার জোর দিয়েছি। বিশ্বব্যাপী টিকার অবাধ ও ন্যায্য বিতরণ নিশ্চিত করায় অগ্রাধিকার দিচ্ছি। চলতি বছরের শেষ নাগাদ বিশ্বকে মোট ২০০ কোটি ডোজ টিকা সরবরাহ করতে চীন প্রচেষ্টা চালাবে। কোভ্যাক্সে ১০ কোটি মার্কিন ডলার অনুদানের পাশাপাশি চীন এ বছরজুড়ে অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশে ১০ কোটি ডোজ টিকা অনুদান দেবে। ভাইরাসের উৎপত্তির বিষয়ে বৈশ্বিক বিজ্ঞান ভিত্তিক অনুসন্ধানে চীন সমর্থন দিয়ে যাবে ও যুক্ত থাকবে এবং যে কোনো প্রকার রাজনৈতিক চক্রান্তের বিরোধিতা করবে কঠোরভাবে।

আমাদের অবশ্যই অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত এবং আরও শক্তিশালী, সবুজতর ও অধিক সুষম বৈশ্বিক উন্নয়ন করতে হবে। মানুষের কল্যাণের চাবিকাঠিই হলো উন্নয়ন। কোভিড-১৯ এর মারাত্মক ধাক্কার সম্মুখীন হয়ে বৈশ্বিক উন্নয়নকে ভারসাম্যপূর্ণ, সমন্বিত এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির এক নতুন পর্যায়ে নিয়ে যেতে আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে। এ লক্ষ্যে আমি একটি বৈশ্বিক উন্নয়ন উদ্যোগ প্রস্তাব করতে চাই। তা হলো অগ্রাধিকার হিসেবে উন্নয়নের ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকা, আমাদের বৈশ্বিক সামষ্টিক নীতিতে উন্নয়নকে উচ্চে রাখা, প্রধান অর্থনীতির মধ্যে নীতি সমন্বয় জোরদার করা এবং নীতির নিরবচ্ছিন্নতা, ধারাবাহিকতা ও স্থায়িত্ব নিশ্চিত করা প্রয়োজন। আমাদের দরকার অধিকতর সম ও ভারসাম্যপূর্ণ বৈশ্বিক উন্নয়ন অংশীদারত্ব লালন, বহুপাক্ষিক উন্নয়ন সহযোগিতা প্রক্রিয়ার মধ্যে বৃহত্তর সমন্বয় সাধন এবং টেকসই উন্নয়নের জন্য জাতিসংঘ ২০৩০ এজেন্ডার বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করা, যোগ করেন তিনি।

আমাদের অবশ্যই বৈশ্বিক শাসন ব্যবস্থা উন্নত এবং সত্যিকারের বহুপাক্ষিকতার চর্চা করতে হবে। বিশ্বে শুধুমাত্র একটি আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা আছে, যা জাতিসংঘ কেন্দ্রিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা। একটি মাত্র আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা আছে, যেমন আন্তর্জাতিক আইন সমর্থিত আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা এবং একমাত্র একগুচ্ছ বিধি রয়েছে, যেমন জাতিসংঘ সনদের উদ্দেশ্য এবং নীতি দ্বারা পরিচালিত আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পরিচালনার মৌলিক নিয়ম।

জাতিসংঘের উচিত সত্যিকারের বহুপাক্ষিকতাবাদের নিশানকে উঁচু করে তুলে ধরা এবং সর্বজনীন নিরাপত্তাকে সম্মিলিতভাবে সুরক্ষা প্রদান ও উন্নয়নের অর্জন ভাগাভাগির জন্য দেশগুলোর কেন্দ্রীয় প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করা এবং পৃথিবীর ভবিষ্যতের জন্য গতিপথ নির্ণয় করা। জাতিসংঘের উচিত স্থিতিশীল আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা, আন্তর্জাতিক ব্যাপারে উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রতিনিধিত্ব ও সংলাপ বাড়ানো এবং গণতন্ত্র ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কে আইনের শাসন এগিয়ে নিতে নেতৃত্ব দেওয়া। জাতিসংঘের উচিত নিরাপত্তা, উন্নয়ন ও মানবাধিকারের তিন ক্ষেত্রের সবগুলোতে ভারসাম্যপূর্ণভাবে কাজ করা। এটির উচিত অভিন্ন এজেন্ডা ঠিক করা, গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো তুলে ধরা ও সত্যিকারের কার্যকলাপে নজর দেওয়া এবং বহুপাক্ষিকতাবাদের প্রতি সব পক্ষের করা প্রতিশ্রুতি সত্যিকারভাবে পালন করা হচ্ছে কি না তা দেখা।  

চীনের প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, বিশ্ব আবার এক ঐতিহাসিক যুগসন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। আমি নিশ্চিত যে মানবতার জন্য শান্তি, উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারা অনিবার্য। আসুন আমরা আত্মবিশ্বাস বাড়াই এবং সম্মিলিতভাবে বৈশ্বিক হুমকি ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করি এবং মানবজাতির জন্য অভিন্ন লক্ষ্যের সম্প্রদায় ও সবার জন্য উন্নতর পৃথিবী গড়ে তুলতে একসঙ্গে কাজ করি।