• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন

পোকামাকড় হয়েও অর্থনীতিতে অবদান রাখে ওরা

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ৫ ডিসেম্বর ২০২১  

পোকামাকড় মাত্রই যে ক্ষতিকর কিছু তা কিন্তু নয়। পোকাদের মাধ্যমে মানব সমাজের অনেক উপকারও হয়। কৃষিক্ষেত্রে অনেক পোকা ফসলের জন্যে বেশ উপকারী। পৃথিবীর অনেক দেশেই খাদ্য হিসেবে পোকাজাতীয় প্রাণীদের বেশ কদর রয়েছে। প্রচুর প্রোটিনের উৎসও পোকামাকড়। খাবারের বাইরেও পোকামাকড়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এসব ক্ষেত্র ছাড়াও সরাসরি মানব অর্থনীতিতেও রয়েছে পোকামাকড়ের ভূমিকা।

চলুন আজ জেনে নেই অর্থনীতিতেও অবদান রাখে এমন কয়েকটি পোকামাকড়ের কথা।

রেশম

রেশম চাষ হলো এমন এক প্রক্রিয়া যেখানে শুঁয়োপোকা (লার্ভা) পালনের মাধ্যমে কাঁচা রেশম উৎপাদন করা হয়। যে রেশম দিয়ে তৈরি হয় মূল্যবান সুতা। ফলে প্রাচীনকাল থেকেই রেশম একটি মূল্যবান পণ্য। এটি অসাধারণ কোমলতা, শক্তি, স্থায়িত্ব, স্থিতিস্থাপকতা এবং শোষণ ক্ষমতাযুক্ত একটি বহুমুখী উপাদান। পোশাক, গৃহসজ্জার সামগ্রী, অস্ত্রোপচারের সেলাই, বিছানাপত্র, প্যারাসুট ইত্যাদিতে রেশম সুতা ব্যবহৃত হয়।

 

রেশম চাষে ব্যবহৃত লার্ভা। ছবি : সংগৃহীত

রেশম চাষে ব্যবহৃত লার্ভা। ছবি : সংগৃহীত

আমাদের দেশের জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে রেশম। অল্প পুঁজি, সময় ও শ্রম এবং কম জায়গায় রেশম চাষ করা যায়। রেশম চাষে পরিশ্রমের চেয়ে লভ্যাংশের পরিমাণ বেশি। এসব কারণে দেশের অনেক অঞ্চলের কৃষকরা দিন দিন রেশম চাষের দিকে ঝুঁকছেন। এভাবেই রেশম পোকা জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলছে।

মৌমাছি
মৌমাছি পৃথিবীর বেশ কিছু পোকামাকড়ের মধ্যে একটি। ওরা সৃষ্টি সবকিছুই মানুষের জন্য উপকারী। মৌমাছি থেকে সংগৃহীত মধু মানুষের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য। প্রাচীনকাল থেকে মধু বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হচ্ছে।

 

উপকারী পোকা মৌমাছি। ছবি : সংগৃহীত

উপকারী পোকা মৌমাছি। ছবি : সংগৃহীত

মোম উৎপাদনের জন্য মৌমাছি গুরুত্বপূর্ণ। মৌমাছির উৎপাদিত মোমের বাণিজ্যিক গুরুত্বও অনেক। এটি প্রসাধনী, চিকিৎসাশিল্পে,পনিরের আবরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। মোমবাতি তৈরি, জুতা, আসবাবপত্র ইত্যাদির জন্য পলিশ প্রস্তুতিতে প্রধান উপাদান হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। তাই পোকা হয়েও মৌমাছি মানব অর্থনীতিতে বেশ অবদান রেখে চলেছে।  

লাক্ষা
‘ল্যাক কালচার’ হলো ল্যাক পোকার বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনা, যার মাধ্যমে উচ্চমানের লাক্ষা পাওয়া যায়। লাক্ষা এক ধরণের ক্ষুদ্র পোকা। এ পোকার ত্বকের নিচে সর্বত্র ছড়িয়ে থাকা এক প্রকার গ্রন্থি থেকে আঠালো রস নিঃসৃত হয়, যা ক্রমশ শক্ত ও পুরু হয়ে পোষক গাছের ডালকে আচ্ছাদিত করে ফেলে।

 

গাছের ডালে আটকে থাকা লাক্ষা। ছবি : সংগৃহীত

গাছের ডালে আটকে থাকা লাক্ষা। ছবি : সংগৃহীত

কাঠের আসবাবপত্র ও পিতল বার্নিশ করা, স্বর্ণালংকারের ফাঁপা অংশ পূরণ, ঔষধের ক্যাপসুলের কোটিং, চকলেট ও চুইংগামের কোটিং, ডাকঘরের চিঠি বা পার্সেল সিলমোহরের কাজ, লবণাক্ত পানি থেকে জাহাজের তলদেশ রক্ষা বা লবণাক্ততায় নষ্ট হওয়া লৌহ ঠিক করার কাজে, অস্ত্র ও রেল কারখানার কাজে, পুতুল, খেলনা ও টিস্যু পেপার তৈরির কাজে লাক্ষা ব্যবহার হয়। তাই পোকা হিসেবে লাক্ষা কম কিছু নয়, বরং উপকারী একটি পোকা। যা প্রতিনিয়ত অবদান রেখে চলেছে আমাদের অর্থনীতিতে।