• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন

মাত্র ১২ বছরেই বিশ্বরেকর্ড

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ২৫ জুলাই ২০২১  

শিশু-কিশোররা সাধারণত যে বয়সে মাঠে-ঘাটে খেলাধুলা-আড্ডা-দুরন্তপনায় মেতে থাকে, সেই বয়সে চুপচাপ নিজের টেবিলে লেখায় ব্যস্ত সৌদি আরবের এক কিশোরী। রিতাজ আল হাজমি নামের এই কিশোরী মাত্র ১২ বছর বয়সেই গিনেস ওয়ার্ল্ড বুকে নাম লিখিয়েছেন দুটি বেস্টসেলার উপন্যাস লিখেই। সৌদির এ মেয়েটিই এখন বিশ্বের সবচেয়ে কম বয়সী বেস্টসেলার ঔপন্যাসিক।

মাত্র ১১ বছর বয়সেই সৃজনশীল গল্প লিখে অনন্য নজির সৃষ্টি করেছেন রিতাজ। ইতিমধ্যে প্রকাশ পেয়েছে ‘ট্রেজার অব দ্য লস্ট সি’ (২০১৮) ও ‘পোর্টাল অব দ্য হিডেন ওয়ার্ল্ড’ (২০১৯) নামে তাঁর দুটি উপন্যাস ও বিয়ন্ড দ্য ফিউচার ওয়ার্ল্ড (২০২০) নামে শিশু বিষয়ক একটি বই।

মূলত ছোটবেলা থেকেই গল্প-উপন্যাস পড়ে বড় হয়েছেন রিতাজ। তার বাবা তাকে বিভিন্ন ধরনের বই কিনে দিতেন, আর আগ্রহ নিয়ে সেসব পড়ে ফেলতেন রিতাজ। কিন্তু রিতাজের পছন্দ ফ্যান্টাসি গল্প। তার যে তিনটি বই প্রকাশিত হয়েছে, সেগুলোও ওই ফ্যান্টাসি ঘরানারই।

মাত্র ৯ বছর বয়সেই প্রথম বই লিখে শেষ করে প্রকাশককে পাঠিয়েছিলেন রিতাজ। কিন্তু প্রকাশক তাকে আরও বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে লিখতে বলেন। পরে বাবার সহযোগিতায় রিতাজ ভর্তি হন একটি লেখালেখির কর্মশালায়। এর মধ্যে ওই বইটির কাজও শেষ করেন তিনি। প্রকাশক এবার ভীষণ খুশি, খুশি পাঠকও। রীতিমত বেস্টসেলার হলো ২০১৮ সালে বেরোনো রিতাজের প্রথম বই ‘লস্ট সি’। তার অন্য বইদুটিও জনপ্রিয়তা পেল পাঠক হৃদয়ে।

সৌদি সংবাদ মাধ্যম আশ শারক আল আওসাতকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে নিজের লেখক হওয়ার অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করেন কিশোরী রিতাজ। শৈশব থেকেই ছোটগল্প লেখার অভ্যাস ছিল তাঁর। ছোটবেলাতেই লিখনীতে সুপ্ত প্রতিভার পরিচয় খুঁজে পান তার বাবা। বাবা ও পরিবারের সবার উৎসাহ ও আগ্রহে এক সময় উপন্যাস লেখায় হাত দেন রিতাজ। তবে উপন্যাস লিখতে গিয়ে নানামুখী কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয় তাকে।

প্রথম উপন্যাসটি লিখতে গিয়ে পুরো একটি বছর অতিবাহিত হয় রিতাজের। লেখার কাজে পরিবারের সার্বক্ষণিক সমর্থন ও সহায়তা প্রেরণা যুগিয়েছে এগিয়ে যেতে। আর তাই লেখা বিষয়ক বিভিন্ন ওয়ার্কশপে অংশগ্রহণ ও বিভিন্ন উপন্যাস ক্রয় করে পড়তে সহায়তা করে পরিবার।

নিজের উপন্যাস ‘লস্ট সি’ বইয়ের কথা উল্লেখ করে রিতাজ বলেন, ‘এক দ্বীপে অভাবগ্রস্ত এক পরিবারে দুই ভাই বসবাস করত। তাদের জীবন ছিল দুঃখ-কষ্ট ও নানা রকম চ্যালেঞ্জে ভরপুর। হঠাৎ এক সময় তারা নতুন পৃথিবীর সন্ধান লাভ করে। নতুন জগতে রোমাঞ্চকর জীবন শুরু করে সেখানের বীর বনে যায় তারা।’

লেখালেখির শুরুর দিকেই নিজের লক্ষ্য নির্ধারণ করেন রিতাজ। আরবের এই কিশোরী বলেন, আমার বয়সী শিশুদের সীমিত সুযোগ-সুবিধাই আমাকে এ বিষয়ে লিখতে উৎসাহ যোগায়। এই শূন্যতা পূরণে আমি লেখার চেষ্টা করছি। তাছাড়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক জ্ঞানের নতুন নতুন জগত সৃষ্টি করাও আমার উদ্দেশ্য। নিজের লেখায় জেকে রোলিং-এর অনেক প্রভাব অনুভব করেন রিতাজ। রোলিং ছাড়াও জেসিকা ব্রডির ওয়ার্কশপ তার লেখার গুণগত মান বৃদ্ধিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখে।

গিনেস রেকর্ড বুকে নাম লেখানো এই কম বয়সী লেখক বলেন, এ বিষয়টি নিয়মিত লিখতে আমাকে উৎসাহিত করবে। সর্বকনিষ্ঠ উপন্যাস লেখকের তালিকায় নাম অন্তর্ভূক্ত হওয়ায় বিশ্বের অন্যান্য রেকর্ড ও কৃতিত্ব অর্জনেও আমাকে অনুপ্রেরণা যোগাবে। তাছাড়া সমবয়সী শিশুদের কাছে আমি আদর্শ হিসেবে কাজ করে যেতে চাই। যেন তারা উপলব্ধি করতে পারে যে, তাদের অনেক কিছু করার সামর্থ্য আছে। সূত্র: আশ শারাক আল আওসাত।