• বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন

অভিনেতা আলমগীরের জন্মদিন আজ

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ৩ এপ্রিল ২০২২  

আশি ও নব্বইয়ের দশকে দাপটের সঙ্গে কাজ করে বাংলাদেশের জনপ্রিয় চলচ্চিত্র অভিনেতা হয়ে উঠেছেন আলমগীর। তার পুরো নাম মহিউদ্দিন আহমেদ আলমগীর। তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেতা ও শ্রেষ্ঠ পার্শ্বচরিত্রে অভিনেতা বিভাগে ৯ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছেন।

আলমগীর ১৯৫০ সালের ৩ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা কলিম উদ্দিন আহম্মেদ ওরফে দুদু মিয়া ঢালিউডের প্রথম সবাক চলচ্চিত্র মুখ ও মুখোশ এর একজন অন্যতম প্রযোজক। গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবী-নগর উপজেলায়।

পারিবারিক টানাপোড়েন, সামাজিক অ্যাকশন, রোমান্টিক অ্যাকশন, ফোক ফ্যান্টাসিসহ সব ধরনের চলচ্চিত্রে আলমগীর ছিলেন সফল। অভিনয়ের পাশাপাশি প্রযোজক, গায়ক ও পরিচালক হিসেবে সুনাম কুড়িয়েছেন।

আলমগীরের চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় ১৯৭৩ সালে আমার জন্মভূমি দিয়ে। জিঞ্জীর (১৯৭৮) চলচ্চিত্রে রাজ্জাক ও সোহেল রানার সঙ্গে অভিনয় করে তিনি পরিচিতি লাভ করেন। ১৯৮৫ সালে নিষ্পাপ চলচ্চিত্র দিয়ে তার পরিচালনায় অভিষেক হয়। মা ও ছেলে (১৯৮৫) ছবিতে দীপক চৌধুরী চরিত্রে অভিনয় করে তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে তার প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। পরবর্তীতে অপেক্ষা (১৯৮৭), ক্ষতিপূরণ (১৯৮৯), মরণের পরে (১৯৯০), পিতা মাতা সন্তান (১৯৯১), অন্ধ বিশ্বাস (১৯৯২), দেশপ্রেমিক (১৯৯৪) চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে আরও ছয়টি জাতীয় পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৯৬ সালে তিনি নির্মাণ করেন নির্মম।

২০১০-এর দশকে তিনি জীবন মরণের সাথী (২০১০) ও কে আপন কে পর (২০১১) চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য টানা দু’বার শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। ২০১৮ সালে তার পরিচালিত তৃতীয় চলচ্চিত্র ‘একটি সিনেমার গল্প’ মুক্তি পায়।

আলমগীর অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র আলমগীর কুমকুম পরিচালিত যুদ্ধভিত্তিক ‘আমার জন্মভূমি’ ১৯৭৩ সালে মুক্তি পায়। তার অভিনীত দ্বিতীয় চলচ্চিত্র ছিল দস্যুরাণী (১৯৭৪)। ১৯৭৫ সালে তিনি শাবানার বিপরীতে চাষীর মেয়ে ও কবরীর বিপরীতে লাভ ইন শিমলা চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। পরের বছর তিনি আলমগীর কুমকুম পরিচালিত গুন্ডা চলচ্চিত্রে রাজ্জাক ও কবরীর সঙ্গে একটি ছোট চরিত্রে এবং তাহের চৌধুরী পরিচালিত মাটির মায়া চলচ্চিত্রে ফারুক ও রোজিনার সঙ্গে পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করেন। ১৯৭৮ সালে দিলীপ বিশ্বাস পরিচালিত জিঞ্জীর চলচ্চিত্রে রাজ্জাক ও সোহেল রানার সঙ্গে অভিনয় করেন। তিনি আসাদ চরিত্রে কামাল আহমেদ পরিচালিত রজনীগন্ধা (১৯৮২) চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। এতে তার সহশিল্পী ছিল রাজ্জাক, শাবানা ও অঞ্জনা। ১৯৮৪ সালে তিনি আমজাদ হোসেন পরিচালিত ভাত দে ও সখিনার যুদ্ধ চলচ্চিত্রে কাজ করেন। দুটি ছবিতে তার বিপরীতে অভিনয় করেন শাবানা এবং এর মধ্য দিয়ে শাবানার সঙ্গে তার জুটি গড়ে ওঠে, যা পরবর্তী এক দশক বাংলা চলচ্চিত্রে রাজত্ব করে। ভাত দে ছবিতে তিনি একজন দরিদ্র বাউলের শিষ্য গহর চরিত্রে অভিনয় করেন।

কামাল আহমেদ পরিচালিত মা ও ছেলে (১৯৮৫) চলচ্চিত্রে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন আলমগীর। এই ছবিতে দীপক চৌধুরী চরিত্রে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে তিনি তার প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৮৫ সালে তিনি পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। তার পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র নিষ্পাপ। ১৯৮৭ সালে তিনি শাবানার বিপরীতে অভিনয় করেন মায়ের দোয়া, দিলীপ বিশ্বাস পরিচালিত অপেক্ষা ও সুভাষ দত্ত পরিচালিত স্বামী স্ত্রী চলচ্চিত্রে। অপেক্ষা চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি দ্বিতীয়বার শ্রেষ্ঠ অভিনেতার জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। পরের বছর অভিনয় করেন হাফিজ উদ্দীন পরিচালিত পথে হল দেখা চলচ্চিত্রে। এতে তার বিপরীতে অভিনয় করেন অঞ্জনা রহমান।

পরবর্তীতে ক্ষতিপূরণ (১৯৮৯), মরণের পরে (১৯৯০), পিতা মাতা সন্তান (১৯৯১), ও অন্ধ বিশ্বাস (১৯৯২) চলচ্চিত্রের জন্য টানা চারবার তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেতার জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। এসময়ে তার অভিনীত অন্যান্য উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র হলো- সত্য মিথ্যা (১৯৮৯), রাঙা ভাবী (১৯৮৯), দোলনা (১৯৯০), অচেনা (১৯৯১), সান্ত্বনা (১৯৯১) ও ক্ষমা (১৯৯২)।

১৯৯৪ সালে অভিনয় করেন কাজী হায়াৎ পরিচালিত নাট্যধর্মী দেশপ্রেমিক, শহীদুল ইসলাম খোকন পরিচালিত যুদ্ধ-নাট্যধর্মী ঘাতক, ও গাজী মাজহারুল আনোয়ার পরিচালিত পারিবারিক-নাট্যধর্মী স্নেহ চলচ্চিত্রে। দেশপ্রেমিক-এ একজন চলচ্চিত্র পরিচালকের ভূমিকায় অভিনয় করে তিনি সপ্তমবারের মত শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। এই বছর তিনি নির্মাণ করেন নির্মম। এতে তার সঙ্গে অভিনয় করেন শাবানা, শাবনাজ ও বাপ্পারাজ। ছবিটি সমাদৃত হয় এবং শাবনাজ শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।

তিনি কণ্ঠশিল্পী হিসেবে চলচ্চিত্রে গান গেয়েছেন। আগুনের আলো চলচ্চিত্রে তিনি প্রথম কণ্ঠ দেন। এরপর তিনি কার পাপে, ঝুমকা ও নির্দোষ চলচ্চিত্রেও গান গেয়েছেন।

আলমগীরের প্রথম স্ত্রী ছিলেন গীতিকার খোশনুর আলমগীর। তাকে বিয়ে করেন ১৯৭৩ সালে। গায়িকা আঁখি আলমগীর তাদের কন্যা। খোশনুরের সাথে বিবাহ বিচ্ছেদের পর আলমগীর ১৯৯৯ সালে গায়িকা রুনা লায়লাকে বিয়ে করেন।

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন আলমগীর।