• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন

এক জেলায় ৩ হাজার কোটি টাকার কোরবানির পশু বিক্রির আশা

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ৩০ মে ২০২৩  

দরজায় কড়া নাড়ছে পবিত্র ঈদুল আজহা। এ উপলক্ষে সিরাজগঞ্জের ৯টি উপজেলায় কোরবানির জন্য খামার ও বাড়িতে মোটাতাজা করা হচ্ছে প্রায় চার লাখ পশু। এর মধ্যে গরু এক লাখ ৭১ হাজার ৭১২টি এবং এক লাখ ৫৫ হাজার ছাগল। বাকি পশুগুলোর মধ্যে রয়েছে মহিষ ও ভেড়া। কিছুটা লাভের আশায় খামারিদের পাশাপাশি বাড়িতে পশু পালন করছেন কৃষকরা। জেলার চাহিদার পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন স্থানের চাহিদা পূরণ করবে এখানকার দুই লক্ষাধিক পশু।

এদিকে, দফায় দফায় বাড়ছে গো-খাদ্যের দাম। এতে খরচ বাড়ছে। ফলে ন্যায্যমূল্যে পশু বিক্রি করতে না পারলে লোকসান গুনতে হবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন খামারি ও কৃষকরা। অপরদিকে, গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধিতে কোরবানির পশুর দাম বাড়ার শঙ্কা প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা।

কৃষক ও খামারিরা বলছেন, পশুকে খড়ের পাশাপাশি গমের ভুসি ও বুটের খোসা খাওয়ানো হয়। কিন্তু কয়েক মাসের ব্যবধানে ভুসি ও বুটের খোসার প্রতি বস্তার দাম বেড়েছে ৪০০-৬০০ টাকা। এতে বিপাকে পড়েছেন তারা।

জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, জেলার ৯টি উপজেলায় প্রায় ১৭ হাজার ছোট-বড় খামারি ও কৃষক বিভিন্ন জাতের গরু, মহিষ, ছাগল এবং ভেড়া পালন করছেন। তাদের খামারে তিন লাখ ৮৬ হাজার ৩৯৬টি গবাদিপশু মোটাতাজা করা হচ্ছে। এর মধ্যে ষাঁড় এক লাখ ৭১ হাজার ৭১২টি, মহিষ এক হাজার ৪০৫টি, ছাগল এক লাখ ৫৫ হাজার ও ভেড়া ৬১ হাজার ১৩৩টি।

জেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা এক লাখ ৬০ হাজার। এই চাহিদা মিটিয়ে দুই লাখ ২৬ হাজার ৩৯৬টি পশু সারা দেশে যাবে। এসব পশু মোটাতাজাকরণে খামারি ও কৃষকরা যাতে কোনও ধরনের ক্ষতিকর রাসায়নিক খাবার ব্যবহার না করেন, সেজন্য প্রচারণা চালানো হয়েছে। এ বছর জেলায় প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার পশু কেনাবেচার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতর।

কৃষক ও খামারিরা জানিয়েছেন, কেউ বাড়িতে আবার কেউ খামারে এসব পশু লালনপালন করছেন। প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা সবুজ ঘাস খাইয়ে পশু মোটাতাজা করছেন। খড়ের পাশাপাশি গমের ভুসি ও বুটের খোসা খাওয়ান অনেকে। ছোট-বড় পশুর খামারে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। আসছে কোরবানির ঈদে এসব পশু বিক্রি করে বাড়তি আয়ের আশা করছেন তারা।

গো-খাদ্যের দাম বাড়ার কথা উল্লেখ করে কয়েকজন খামারি জানিয়েছেন, ৩৭ কেজি ওজনের এক বস্তা গমের ভুসির বর্তমান বাজার মূল্য দুই হাজার ২০০ টাকা, যা গত বছর ছিল এক হাজার ৮০০ টাকা। ৭৪ কেজির এক বস্তা খৈল এখন তিন হাজার ৪০০ থেকে তিন হাজার ৬০০ টাকা, গত বছর ছিল দুই হাজার ৮০০ টাকা। ৫০ কেজি ধানের কুঁড়ার বস্তার দাম ৯০০ টাকা, গত বছর ছিল ৭০০ টাকা। প্রতি কেজি খড় এখন ১৫ টাকা, আগে ছিল ১০ টাকা। এ ছাড়া খেসারি ও ছোলার ভুসির দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ টাকা। গত কয়েক মাসে কয়েক দফা গো-খাদ্যের দাম বেড়েছে। খামারের শ্রমিকদের দুই বছর আগে বেতন ছিল আট থেকে ১০ হাজার টাকা, এখন ১৫ হাজারের নিচে কোনও শ্রমিক কাজ করতে চান না। পশু পালনে খরচ বেড়ে যাওয়ায় অধিকাংশ খামার খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। পাশাপাশি ব্যাংক ও এনজিওর ঋণের সুদ পরিশোধ করতে গিয়ে তেমন লাভ হয় না খামারিদের।

এবার কোরবানির জন্য ৪৫টি ষাঁড় প্রস্তুত করেছি উল্লেখ করে সদর উপজেলার কালিয়া কান্দাপাড়ায় তালুকদার ডেইরি ফার্মের ম্যানেজার শফিউর রহমান বলেন, ‘গো-খাদ্যের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধিতে এবার লোকসানে পড়ার আশঙ্কা করছি।’

সদর উপজেলার খামারি সুজন বলেন, ‘এ বছর বিক্রির জন্য ছয়টি ষাঁড় প্রস্তুত করেছি। গো-খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধিতে বিপাকে আছি। গরুগুলোকে যে পরিমাণ খাওয়ানো হচ্ছে, তাতে সঠিক দাম না পেলে লোকসান গুনতে হবে।’

সদর উপজেলার সয়দাবাদ ইউনিয়নের আরাভ অ্যাগ্রো ফার্মের ম্যানেজার মাহমুদুল হাসান সিহাব জানান, তাদের খামারে দেশি-বিদেশি মিলে শতাধিক ষাঁড়, মহিষ, ছাগল ও দুম্বা মোটাতাজা করা হচ্ছে। খামারে এক লাখ থেকে ১৫ লাখ টাকার পশু আছে। যার বেশিরভাগ পশু খামার থেকেই বিক্রি হয়। এ ছাড়া সারা বছরই পশু মোটাতাজা করে বিক্রি করেন তারা।

শাহজাদপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মিজানুর রহমান বলেন, ‘এই উপজেলায় গো-খামারের সংখ্যা প্রায় সাত হাজার। খামারিদের গো-খাদ্যের চাহিদা মেটাতে উন্নতমানের ঘাস আবাদ করতে হবে। এতে গো-খাদ্যের খরচ কমে আসবে। পাশাপাশি ঘাস গরুর স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। যেসব খামারি শুধু ভুসি, খৈল ও খড়ের মতো গো-খাদ্যের ওপর নির্ভরশীল, তাদের গরু পালন করে এবারে লাভবান হওয়া খুব কষ্টসাধ্য হবে।’

এখনও কোরবানির হাট জমেনি বলে জানালেন জেলার শত বছরের ঐতিহ্যবাহী তালগাছি হাটের ইজারাদার সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এখনও বাইরের বেপারিরা আসতে শুরু করেননি। কোরবানির দুই সপ্তাহ আগে থেকে বেপারিরা আসতে শুরু করবেন। তখন হাট জমে উঠবে।’

এবার জেলায় প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার পশু বেচাকেনা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. গৌরাঙ্গ কুমার তালুকদার। তিনি বলেন, ‘প্রতি উপজেলার খামার পরিদর্শন করে খামারিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও ওষুধপত্র দিচ্ছি আমরা।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা মোতাবেক বিভিন্ন ব্যাংকের স্থানীয় শাখার দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি উল্লেখ করে গৌরাঙ্গ কুমার তালুকদার বলেন, ‘প্রতিটি হাটে ব্যাংকের লোকজন থাকবেন। ক্রেতা-বিক্রেতা যেকোনো ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট এবং কিউআর কোড ব্যবহার করে ই-ব্যাংকিংয়ে লেনদেন করতে পারবেন। জেলায় ৩১টি স্থায়ী ও ১৬টি অস্থায়ী পশুর হাটে পশু বিক্রি হবে। এ ছাড়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের মাধ্যমে অনলাইনেও পশু বিক্রি করা হবে।’