• মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১০ ১৪৩১

  • || ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন

গ্রাহকের টাকা ফেরত দিয়ে ব্যবসায় ফিরছে কিউকম

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ৭ আগস্ট ২০২২  

দেশে অনলাইন ব্যবসার প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে এ মাধ্যমটিতে বেড়েছে প্রতারণাও। সম্প্রতি ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের প্রতারণায় অনলাইন কেনাকাটায় আস্থা সংকটে ভুগছেন সাধারণ মানুষ। তবে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান কিউকম ডটকমে বিনিয়োগ করা টাকা ফেরত পেয়ে নতুন করে আশার আলো দেখছেন গ্রাহকরা। আটকে থাকা টাকা ফেরত দিয়ে ফের ব্যবসায় ফিরছে প্রতিষ্ঠানটি। এরই মধ্যে ফুডসহ নতুন তিনটি স্টার্টআপ শুরু করেছে। সব বাধা পেরিয়ে গ্রাহককে পূর্ণ সেবা দিতে প্রস্তুত হচ্ছে কিউকম।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জসহ কিছু প্রতিষ্ঠানের প্রতারণায় পড়ে ই-কমার্স ব্যবসায় আস্থা সংকট তৈরি হয়েছে। তবে পেমেন্ট গেটওয়ে ফোস্টারের কাছে আটকে থাকা টাকা থেকে অনেক গ্রাহক তাদের পাওনা ফেরত পেয়েছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৩৮ কোটি টাকা গ্রাহকদের ফেরত দিয়েছে কিউকম। ফোস্টারের কাছে এ কোম্পানিটির ৩৯৭ কোটি টাকা আটকে আছে। এর বিপরীতে গ্রাহককে ফেরত দেওয়ার পরেও শত কোটি টাকার বেশি মূলধন নিয়ে ব্যবসায় ফিরতে পারবে কিউকম। এছাড়া তাদের ওয়্যার হাউজেও রয়েছে প্রায় শত কোটি টাকার পণ্য, নেই মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ। তবে কিউকম ছাড়া অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের আপাতত ব্যবসায় ফেরার সুযোগ নেই। গ্রাহকের পাওনার তুলনায় অর্থের সংস্থান না থাকায় আলেশা মার্টসহ অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসায় ফেরা কঠিন হবে।

জানা যায়, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের ২৩ হাজার ৮১৪টি লেনদেনের বিপরীতে ২১ হাজার ১৮৩ গ্রাহককে এরই মধ্যে ১৯৩ কোটি ৬৪ লাখ ৩ হাজার ৭৮৩ টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে কিউকমের ১৭ হাজার ৬৮৯টি লেনদেনের বিপরীতে ১৭ হাজার ৭৫ জন গ্রাহক ১৩৮ কোটি ৫৯ লাখ ৫৮ হাজার টাকা ফেরত পেয়েছেন। এছাড়া আলেশা মার্টের ২ হাজার ২১৮ জন গ্রাহককে ৩৯ কোটি ১৮ লাখ ৮৩ হাজার টাকা, দালালপ্লাসের ৯২২ জন গ্রাহককে ১২ কোটি ২৩ লাখ ৯৩ হাজার টাকা, বুম বুম’র ২৫৩ জন গ্রাহককে ৮ লাখ ৬৩ হাজার, আনন্দ বাজারের ১০ জন গ্রাহককে ৬ লাখ ৫ হাজার, থলে.কমের ৫৭ জন গ্রাহককে ১২ লাখ ১৩ হাজার, ধামাকার ৪৩৩ জন গ্রাহককে ৩২ লাখ ২৫ হাজার, শ্রেষ্ঠ.কম’র ৭৬ জন গ্রাহককে ৮৫ লাখ ৪২ হাজার, আলিফ ওয়ার্ল্ড’র ২৮ জন গ্রাহককে ৩১ লাখ ৪৭ হাজার, বাংলাদেশ ডিল’র ১১১ জন গ্রাহককে ২৭ লাখ ৯৩ হাজার, শপেটিক’র ১০ জন গ্রাহককে ১০ লাখ ৩৬ হাজার, ৯৯-গ্লোবাল’র ১২ জন গ্রাহককে ৩ লাখ ৬৫ হাজার এবং আদয়ান মার্ট’র ২৩৬ জন গ্রাহককে ১৪ লাখ ১৬ হাজার টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান কিউকমের দুটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এরই মধ্যে তারা বাংলাদেশ ব্যাংককে এ বিষয়ে চিঠি দিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সেই আলোকে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দিলেই উন্মুক্ত হবে কিউকমের লেনদেন।

এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও কেন্দ্রীয় ডিজিটাল কমার্স সেলের প্রধান সমন্বয়ক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, কিউকমের দুটি অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়ার বিষয়টি আগেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। গ্রাহকের টাকা ফেরতে কোনো স্থবিরতা নেই। হয়তো আপনাদের কাছে (গণমাধ্যমে) অতটা প্রকাশ করা হচ্ছে না। কিন্তু গ্রাহক টাকা ফেরত পাচ্ছেন। এছাড়া আমরা গত মিটিংয়ে অনলাইনে মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) ব্যবসা করায় ছয়টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজ সাময়িকভাবে বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম শফিকুজ্জামান বলেন, আমি আমার সময় কাজ করেছি, এখন কাজ ফার্স্ট নাকি স্লো হচ্ছে সে বিষয়ে আমার মন্তব্য করা ঠিক হবে না। তবে, কিউকম কিন্তু কামব্যাক করছে। তাদের অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়া হচ্ছে। তারা কিন্তু এরই মধ্যে গ্রাহককে ১৩৮ কোটি টাকা ফেরত দিয়েছে। ওদেরও কিন্তু একশো কোটি টাকা আটকে আছে। একটা বিজনেস রান করতে হলে তাদেরও সাপোর্ট দিতে হবে। আমি সেটা করেছি, এখন যারা আছে তাদেরও সেটা করা উচিত। আমি চেয়েছিলাম, তারা বিজনেসে কামব্যাক করুক। বিজনেসে কামব্যাক তো বললেই হলো না, তাদের তো বিভিন্নভাবে সাপোর্ট দিতে হবে। তাদের যে টাকা আটকা আছে, যেগুলো ডেলিভারি হয়ে গেছে সেই টাকা তো কিউকমের, সেগুলো ফেরত দিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, তাদের ব্যবসায় ফিরতে ব্যাংকের সাপোর্টসহ সব ধরনের সাপোর্ট লাগবে। কিউকমের বিরুদ্ধে তো মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগ নেই। ই-অরেঞ্জ, ধামাকার বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগ আছে। ওদের অ্যাকাউন্ট তো খুলবে না, কিন্তু কিউকমের তো মানিলন্ডারিংয়ের ইস্যু না। আলিশা মার্টের কিন্তু ১৮০ কোটি টাকার দায় আছে, সেগুলো দিতে পারলে হয়তো তারা কামব্যাক করতে পারবে। কিন্তু তাকে সেই টাকা জোগাড় করতে হবে। আমাদের দরকার হলো তাদের সাপোর্ট দেওয়া। আমাদের ভোক্তা অধিকারে যে অভিযোগগুলো রয়েছে সেখানে বেশিরভাগই ইভ্যালির বিরুদ্ধে। সেটি নিয়ে তো হাইকোর্টের কমিটি কাজ করছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, কিউকমে যারা প্রোডাক্ট অর্ডার করেছে তাদের টাকা জমা হতো ফোস্টারের কাছে, তারা সেই টাকা হ্যান্ডওভার করতো। গত বছরের ৩০ জুন এসক্রো সার্ভিস চালু হয়েছে, কিন্তু এর আগে থেকেই ফোস্টারে কিউকমের টাকা আটকে আছে। ফোস্টারের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগও রয়েছে। পরে চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি কিউকমের ২০ জন গ্রাহকের অর্থ ফেরত দেওয়ার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে অর্থ ফেরত কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর ধাপে ধাপে টাকা ফেরত পাচ্ছেন গ্রাহকরা।

ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান কিউকমের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) রিপন মিয়া বলেন, আমরা ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছি গত ৩০ তারিখ। অফিস চালু করেছি, ওয়েবসাইট চালু করেছি। কোম্পানি চালু থাকলে কাস্টমারের পাওনা থাকে সেটাও শোধ করতে পারবো। পাশাপাশি কোম্পানির পরিসরও বড় করতে পারবো। আমাদের রিফান্ড কার্যক্রম চলছে, আমাদের ডেলিভারিও চলছে। আমাদের সবগুলো অ্যাকাউন্টই বন্ধ ছিল, দুটি খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। যদি ক্যাশ অন ডেলিভারিতে যাই তাহলে সেই অ্যানালগ সিস্টেম হলো। সারা বিশ্ব যেখানে ডিজিটাল হচ্ছে, সবকিছু ক্যাশলেস হয়ে যাচ্ছে সেখানে যদি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা না থাকে তাহলে তো আমি ট্রানজেকশন করতে পারবো না।

গ্রাহকের পাওনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি যখন গ্রেফতার হই তখন বকেয়া ছিল আড়াইশ কোটি টাকা। এর মধ্যে ফোস্টারে ছিল ৩৯৭ কোটি টাকা। আমার ওয়্যার হাউজে ছিল ১০০ কোটি টাকার পণ্য। এটি কিন্তু টেকনিক্যাল কমিটি ভিজিট করেছে। সার্বিক বিবেচনায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আমার জামিনের ব্যবস্থা করেছে। আগের সিস্টেম ছিল সাপ্তাহিক দুদিন আমাদের অ্যাকাউন্টে টাকা সেটেলমেন্ট হয়ে যেত। পরে কিন্তু আমাকে আর টাকা দেওয়া হয়নি ৩ অক্টোবর পর্যন্ত। সাড়ে তিন মাস তারা আমাকে টাকা দেয়নি, অনৈতিকভাবে কাজটি করেছে। ৩ অক্টোবর পর্যন্ত আমরা ডেলিভারি করেছি, জেলে যাওয়ার আগ পর্যন্ত। আমি সবার টাকাই ফেরত দিতে পারবো। আগের যে বকেয়া আছে সেটি আমরা দ্রুত ফেরত দিয়ে দেবো। আমরা আরও তিনটি স্টার্টআপ শুরু করে দিয়েছি। কিউকম শুধু ই-কমার্স নয়, আমরা ফুডপান্ডার মতো কিউফুড শুরু করেছি, ঢাকা শহরের প্রায় সব অঞ্চল কাভার করে ফেলেছি। এছাড়া চাল-ডালের মতো কিউমার্টও শুরু করেছি।