• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন

চা উৎপাদনে আগের সব রেকর্ড ছাড়াল চট্টগ্রাম

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ২৭ জুন ২০২২  

পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হওয়ায় চট্টগ্রামে এবার অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়েছে চা উৎপাদন। চলতি মৌসুমের পাঁচ মাসে (মে মাস পর্যন্ত) উৎপাদন ছাড়িয়েছে ১৫ লাখ ২০ হাজার ৭০৩ কেজি, গত বছর এ সময়ের মধ্যে যা ছিল ছয় লাখ ৩৫ হাজার ২২ কেজি। সে হিসাবে গত বছরের তুলনায় এবার ১২৫ ভাগ বেশি চা উৎপন্ন হয়েছে।

চলতি বছর চট্টগ্রামের ২২টি চা বাগানে এক কোটি ২৫ লাখ কেজিসহ দেশের ১৬৭টি চা বাগানে ১০০ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে চা বোর্ড। এরই মধ্যে চট্টগ্রামসহ সারা দেশে মে মাস পর্যন্ত উৎপাদন হয়েছে ১৪.৪৭৯ মিলিয়ন কেজি যা গত বছর ছিল ১২.০৬৯ মিলিয়ন কেজি। সে হিসাবে চলতি বছর চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করা হচ্ছে। গত বছর দেশে চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৭.৭৮০ মিলিয়ন কেজি যা ছাড়িয়ে ৯৬.৫০৬ মিলিয়ন কেজি উৎপাদন করে নতুন রেকর্ড গড়ে। এটি ২০১৯ সালের সর্বোচ্চ ৯৬.০৬৯ মিলিয়ন কেজির রেকর্ডকে ছাড়িয়ে যায়।

চলতি বছর শুরুতে বৃষ্টিপাত না হলেও বর্তমানে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হওয়া ছাড়াও বাংলাদেশ চা বোর্ডের সরাসরি তদারকি ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের কারণে এবার চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রত্যাশা করা হচ্ছে। ২০১৯ সালে রেকর্ড পরিমাণ ৯৬.০৬৯ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদন করে রেকর্ড করেছিল দেশ। গত অর্থবছরে ১৬৭টি বাগানে চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৭৭.৭৮০ মিলিয়ন কেজি। যা গতবছর অক্টোবরই ছাড়িয়ে উৎপাদন হয়েছিল ৭৯.৩৩৩ মিলিয়ন কেজি।

চলতি বছর জানুয়ারিতে .৫০৭ মিলিয়ন কেজি, ফেব্রুয়ারিতে .০৩৩ মিলিয়ন কেজি, মার্চে ১.৫৮৫ মিলিয়ন কেজি, এপ্রিলে ৪.৯৩৪ মিলিয়ন কেজি ও মে মাসে উৎপাদন হয়েছে ৭.৪২০ মিলিয়ন কেজি। অন্যদিকে ২০২১ সালে জানুয়ারিতে .২৮৬ মিলিয়ন, ফেব্রুয়ারিতে .০১৯ মিলিয়ন, মার্চে ১.৬৮১ মিলিয়ন, এপ্রিলে ৩.৯৩২ মিলিয়ন, মেতে ৬.১৫১ মিলিয়ন, জুনে ১৩.৩৫৪ মিলিয়ন, জুলাইয়ে ১২.৩৩৮ মিলিয়ন, আগস্টে ১৪.৩৮৭ মিলিয়ন, সেপ্টেম্বরে ১২.৬০৭ মিলিয়ন, অক্টোবরে ১৪.৫৭৮ মিলিয়ন, নভেম্বরে ১০.২৪১ ও ডিসেম্বরে উৎপাদন হয়েছিল ৬.৯৩২ মিলিয়ন কেজি।

২০২১ সালে চা উৎপাদন বছরের শুরুতে নভেম্বর থেকে মে মাস পর্যন্ত অনাবৃষ্টির কারণে চট্টগ্রাম অঞ্চলের বৃহৎ ২২টি চা বাগানে চা উৎপাদনে কিছুটা ঘাটতি হয়। এই সামান্য ঘাটতি না হলে ২০২১ সালে চা উৎপাদন লাখ মিলিয়ন ছাড়িয়ে যেত বলে মনে করা হচ্ছে। অন্যদিকে চট্টগ্রামের ২২টি বাগানে ২০২০ সালে উৎপাদন বছরে ১১ মিলিয়ন কেজির বেশি (এক কোটি ১৩ লাখ ৯৯ হাজার ৭৫৪ কেজি) উৎপাদন হলেও ২০২১ উৎপাদন বছরে প্রায় সাত মাসের অনাবৃষ্টির কারণে উৎপাদন হয়েছে ৯.৬৫ মিলিয়ন কেজি (৯৬ লাখ ৫১ হাজার ৭১১ কেজি)।

গত বছরের নভেম্বর থেকে চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত চট্টগ্রামে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় এ অঞ্চলের ২২টি চা বাগানে উৎপাদনে কিছুটা বিঘ্ন ঘটে। সিটি গ্রুপের বাঁশখালী বেলাগাওয়া চা বাগানের ম্যানেজার আবুল বাসার জানিয়েছেন, পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় তার বাগানে ২০২১ সালে উৎপাদন বছরে চা হয়েছে তিন লাখ ৩ হাজার ১৬০ কেজি। তাদের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল তিন লাখ ৪০ হাজার কেজি। তিনি জানান, চলতি বছর তাদের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তিন লাখ ৬০ হাজার কেজি তার বিপরীতে ২৬ জুন পর্যন্ত উৎপাদন হয়েছে ৮৩ হাজার কেজি যা গত বছর একই সময়ের মধ্যে ছিল ৫০ হাজার কেজি। তিনি মনে করেন চলতি বছর পর্যাপ্ত পরিমাণ বৃষ্টিপাত হওয়ায় এবার তার বাগানে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশা রয়েছে।

এদিকে চট্টগামের উদালিয়া চা বাগানের ম্যানেজার রফিকুল ইসলাম জানান, তার বাগানে চলতি বছর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১১ লাখ ১৫০০ কেজি। তার বিপরীতে মে মাস পর্যন্ত উৎপাদন হয়েছে দুই লাখ ২৫ হাজার কেজি, যা গত বছর একই সময়ের মধ্যে উৎপাদন হয়েছিল এক লাখ ১৩ হাজার কেজি। সে কারণে এবার তিনি তার বাগানে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশা করছেন।

জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগ ও নির্দেশনা মোতাবেক বর্তমানে দেশে চায়ের উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে চা রফতানি করার যে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে, সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নে বাংলাদেশ চা বোর্ড গ্রহণ করেছে নানামুখি উন্নয়ন-কার্যক্রম। এই কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে প্রতিটি বাগানে প্রতিবছর কমপক্ষে আড়াই শতাংশ করে চা বাগান বর্ধিত করা আর সেজন্য উন্নত মানের চারা প্রদান ও পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণসহ অন্য সুযোগ-সুবিধা বাড়ায় প্রতি বছরই এখন চা বাগানের পরিধি ও উৎপাদন দুটোই বেড়ে চলছে। প্রতি বছর গড়ে প্রতি হেক্টরে চা উৎপাদন হয় এক হাজার ৫০০ কেজি, অপরদিকে সম-পরিমাণ জমিতে ইস্পাহানি, ফিনলে, ডানকানসহ বেশ কিছু কোম্পানির বাগানে দুই হাজার ৫০০ কেজি থেকে তিন হাজার কেজি উৎপাদন ছাড়িয়ে যায়।

চা বোর্ডের হিসাব অনুযায়ী জানা গেছে, দেশে মোট নিবন্ধনকৃত ১৬৭টি টি-এস্টেট ও চা বাগান রয়েছে। তাতে সর্বমোট দুই লাখ ৭৯ হাজার ৫০৬.৮৮ একরে চা উৎপাদন হয়ে আসছে। এর মধ্যে মৌলভীবাজারে রয়েছে ৭৬টি এস্টেট ও ১৫টি চা বাগান (১ লাখ ৫৬ হাজার ১৯১.৯৪ একর), হবিগঞ্জ জেলায় রয়েছে ২২টি টি-এস্টেট ও তিনটি চা বাগান (৫৪ হাজার ১৬৪.১৬ একর), সিলেট জেলায় রয়েছে ১২টি টি-এস্টেট ও সাতটি চা বাগান (২৮ হাজার ৯৩৬.৩২ একর), চটট্টগ্রাম জেলায় রয়েছে ১৮টি টি-এস্টেট ও তিনটি চা বাগান (৩৪ হাজার ৫৬০.৪৫ একর), রাঙ্গামাটি জেলায় রয়েছে একটি টি-এস্টেট ও একটি চা বাগান (৭৯৪.৯৪ একর), পঞ্চগড় জেলায় রয়েছে আটটি চা বাগান (৪ হাজার ৮১৮.২৯৫ একর) এবং ঠাকুরগাওয়ে রয়েছে একটি চা বাগান (৪০.৭৭ একর জমি)।