• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন

প্রথমবার আশ্রয়ণ প্রকল্পে তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর আবাসন

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ২৯ মার্চ ২০২৩  

বিস্তীর্ণ সবুজের মাঠ। এর মাঝে সরকারের দেয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর। রঙিন চালের এসব ঘরেই নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন বুনছেন তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর কয়েকজন। বাবা-মা ও পরিবার পরিজন থেকে বিচ্যুত এসব মানুষকে এখন থেকে কিছুদিন আগেও মানুষের বাড়িতে ভাড়া থাকতে খুঁজতে হতো ঘর। তবে তৃতীয় লিঙ্গের অবহেলিত এসব মানুষকে নানা অজুহাতে ঘর ভাড়া দিতে অস্বীকৃতি জানাত সবাই। ফলে অনিশ্চিত গন্তব্যে দিন কাটত তাদের।

তাদের সেই কষ্ট লাঘব হয়েছে সরকারের দেয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে। ফলে তৃতীয় লিঙ্গের এসব মানুষজন খুঁজে পেয়েছে তাদের নিজস্ব ঠিকানা।

দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার সিংড়া ইউনিয়নে গড়ে উঠেছে এই আবাসন। সেখানে ঠাঁই হয়েছে তৃতীয় লিঙ্গের ৫ জন মানুষের। এখন আর মানুষের বাড়িতে বসবাসের ঠাঁই খুঁজতে হবে না তাদের। নতুন বাড়ি পেয়ে স্বপ্নের ঘর সাজাতে ব্যস্ত তারা। পরিবর্তন করতে চান নিজেদের ভাগ্যের চাকা। এতে খুশি সমাজের অবহেলিত এই মানুষ।

উপজেলা প্রশাসনের তথ্য বলছে, ঘোড়াঘাট উপজেলার সিংড়া ইউনিয়নের কশিগাড়ী গ্রামে প্রথমবারের মতো ৫ জন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষকে ঘর প্রদানের মধ্য দিয়ে গড়ে উঠেছে আবাসন। আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় প্রতিটি ঘর নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ২ লাখ ৮৯ হাজার ৫০০ টাকা।

সেখানে ঘর পাওয়া তৃতীয় লিঙ্গের আমজাদ বলেন, আগে মানুষের বাড়িতে ভাড়া থাকার জন্য ঘুরে বেড়াতাম। কেউ ঘর ভাড়া দিত না। দুরদুর করে তাড়িয়ে দিত। এভাবেই দিন চলত আমাদের।

পেটের দায়ে তারা বাজারের দোকানে গিয়ে একটি-দুটি করে শাকসবজি চেয়ে নিত। হাত পাততো রাস্তাঘাট কিংবা যানবাহনে। তবে নতুন ঘর পেয়ে তারা সেখানে কবুতরসহ বিভিন্ন পশুপাখি পালনে মনোনিবেশ করেছেন। নিজ বাড়ির উঠোনে গড়ে তুলছেন ফলমূল ও শাকসবজির বাগান। তারা সবাই ব্যস্ত নতুন জীবন সংগ্রামে। মানুষের উপহাস কিংবা ঘৃণার পাত্র না হয়ে নিজেরা হতে চান স্বাবলম্বী।

তৃতীয় লিঙ্গের শিলা বলেন, নতুন ঘর পাওয়ার পর কবুতরের খামার তৈরি করেছি। আস্তে আস্তে হাঁস-মুরগি পালন শুরু করব। মানুষের কাছে আর হাত পাততে চাই না। নিজেরাই কিছু করে দেখাতে চাই।

তৃতীয় লিঙ্গের এসব মানুষ এখন কেবল ভরসা বিয়েসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান। কোন অনুষ্ঠানের খবর পেলে তারা ছুটে যায় সেখানে। গান গেয়ে কিংবা নাচ দেখিয়ে কিছু টাকা উপার্জন করে খেয়ে না খেয়ে কষ্টে চলছে তাদের জীবন। সরকারের কাছে তাদের জন্য কর্মস্থান সৃষ্টির দাবি জানিয়েছে সমাজের অবহেলিত এই মানুষ।

তৃতীয় লিঙ্গের কাজলী বলেন, আমাদের মাঝে অনেক পরিবর্তন এসেছে। আমরা রাস্তাঘাটে মানুষের সঙ্গে আর খারাপ ব্যবহার করি না। এখন শুধু এলাকার বিয়েবাড়ি, আকিকা, অন্নপ্রাশনসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নাচ-গান দেখাই। বিনিময়ে খুশি করে যে যা দেয়, তা দিয়েই কষ্টে আমাদের দিন যাচ্ছে। সরকারের কাছে দাবি থাকবে আমাদের একটা কর্মসংস্থান করলে আমরা আরও উপকৃত হতাম।

শুধু ঘর প্রদান নয়, তৃতীয় লিঙ্গের এসব মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের জন্য সব ধরনের সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস দিয়ে ৩ নম্বর সিংড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যাপক সাজ্জাদ হোসেন বলেন, আমরা তৃতীয় লিঙ্গের এসব মানুষদের ঘর নিশ্চিত করতে পেরেছি। আগামী দিনে সরকারিভাবে আরও সহযোগিতার করা হবে।

ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাফিউল আলম বলেন, সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় তৃতীয় লিঙ্গের এসব মানুষদের নির্দিষ্ট একটি জায়গায় বসবাসের ব্যবস্থা হওয়ায় সমাজে স্বস্তি ফিরেছে। পর্যায়ক্রমে ঘোড়াঘাট উপজেলার তৃতীয় লিঙ্গের সবাইকে সুশৃঙ্খল পল্লীতে বসবাসের ব্যবস্থা করাসহ তাদের সরকারি সুযোগ-সুবিধার আওতায় আনা হবে।