• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

মাদারীপুর দর্পন

এক্সপ্রেসওয়ে-মেট্রোতে সরাসরি যুক্ত হচ্ছে তৃতীয় টার্মিনাল

মাদারীপুর দর্পন

প্রকাশিত: ২৫ জুলাই ২০২২  

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সংলগ্ন কাওলা এলাকায় এক্সপ্রেসওয়ের একটি লুপ নেমে গেছে বিমানবন্দরের নির্মাণাধীন তৃতীয় টার্মিনালে। টার্মিনালের প্রথম গেট এলাকায় আবার খোঁড়াখুঁড়ির কাজও চলছে। এখানে নির্মাণ করা হচ্ছে টানেল। এই টানেল গিয়ে মিলবে বিমানবন্দরের অদূরে অবস্থিত মেট্রোরেলের স্টেশনে। সবগুলোর নির্মাণ শেষ হলে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে আর মেট্রোরেলের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হবে বিমানবন্দর। ফলে বিদেশ থেকে যেসব যাত্রী আসবেন তারা খুব সহজেই বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে বিভিন্ন গন্তব্যে যেতে পারবেন। আবার যারা বিদেশ যাবেন তারাও রাজধানীর যানজট এড়িয়ে খুব সহজে চলে যেতে পারবেন বিমানবন্দরে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করে সরাসরি চলে যাওয়া যাবে নির্মিতব্য নতুন টার্মিনালে। এ কারণেই বিমানবন্দর এলাকায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে থেকে টার্মিনালে নামার জন্য রাখা হচ্ছে আলাদা ব্যবস্থা। ঠিক একই পথ ব্যবহার করে বিমানবন্দর থেকে বেরিয়েও যাওয়া যাবে।

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে দেশি ও আন্তর্জাতিক চাহিদার কথা বিবেচনা করেই হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের কাজ চলছে। উড়ালসড়কের সঙ্গে একটা কানেক্টিভিটি রাখছি। সবকিছু স্টাডি শেষে চাহিদা বিবেচেনা করেই এটা তৈরি করা যাচ্ছে। এছাড়া বিদেশি যাত্রীরা যাতে বিমানবন্দর থেকে দ্রুত সময়ে মেট্রোরেলে চড়তে পারেন সেজন্য টানেল করে দিচ্ছি।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, এক্সপ্রেসওয়ে এবং থার্ড টার্মিনালের সংযোগ দৃশ্যমান হয়েছে। এরই মধ্যে পিলারের ওপর বসেছে স্প্যান। একটি লুপ কাওলা থেকে বিমানবন্দরে নেমে গেছে। অন্যদিকে টানেল নির্মাণকাজও চলমান। আরও বড় চমক হলো বিমানবন্দর থেকে পাতালরেলে খিলক্ষেত হয়ে কাওলা যাওয়া যাবে। সেখানে নেমে সুড়ঙ্গপথে চলে যাওয়া যাবে তৃতীয় টার্মিনালে। কাওলা স্টেশনকে তৈরি করা হচ্ছে শুধু হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালে যাওয়ার জন্য।

অন্যদিকে মেট্রোরেল-১ হচ্ছে কমলাপুর থেকে শুরু হয়ে রাজারবাগ-মালিবাগ-রামপুরা, যমুনা ফিউচার পার্ক, খিলক্ষেত হয়ে বিমানবন্দর পর্যন্ত। এটি পুরোটাই পাতালরেল। কাওলা স্টেশন থেকে ২০০ মিটারের একটি টানেলের কাজ চলমান। একই সঙ্গে বিমানবন্দর থেকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠার জন্য সুড়ঙ্গ নির্মাণের কাজও চলছে। জুলাই ২০১৯ থেকে জুন ২০২৫ মেয়াদে থার্ড টার্মিনালের কাজ সমাপ্ত হবে।

এ নিয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা) সুকেশ কুমার সরকার বলেন, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে দেশি ও আন্তর্জাতিক চাহিদার কথা বিবেচনা করেই হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের কাজ চলছে। উড়ালসড়কের সঙ্গে একটা কানেক্টিভিটি রাখছি। সবকিছু স্টাডির পর চাহিদা বিবেচেনা করেই এটা তৈরি করা হচ্ছে। এছাড়া বিদেশি যাত্রীরা যাতে বিমানবন্দর থেকে দ্রুত সময়ে মেট্রোরেলে চড়তে পারেন সেজন্য টানেল করে দিচ্ছি। থার্ড টার্মিনালের সঙ্গে সব ধরনের সংযোগ রাখছি যাত্রীদের সুবিধার্থে।

পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করে সরাসরি চলে যাওয়া যাবে নির্মিতব্য নতুন টার্মিনালে। এ কারণেই বিমানবন্দর এলাকায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে থেকে টার্মিনালে নামার জন্য রাখা হচ্ছে আলাদা ব্যবস্থা। ঠিক একই পথ ব্যবহার করে বিমানবন্দর থেকে বেরিয়েও যাওয়া যাবে।

যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত চার লেনের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মূল লেনের দৈর্ঘ্য ১৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সংলগ্ন কাওলা থেকে তেজগাঁও রেলগেট পর্যন্ত অংশের দৈর্ঘ্য সাড়ে ১১ কিলোমিটার। এই অংশটি চলতি বছরের ডিসেম্বরেই খুলে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সেতু কর্তৃপক্ষের।

এই অংশের কাজের অগ্রগতিও ভালো। বনানী পর্যন্ত অংশের অগ্রগতি ৭৬ শতাংশ। এছাড়া বনানী থেকে তেজগাঁওয়ের অগ্রগতি ৫০ শতাংশ। মূল কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ফলে বাকি সময়ে বাকি কাজ সম্পন্ন হবে।

প্রথমে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল বিমানবন্দর থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত শতভাগ কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর খুলে দেওয়া হবে। কিন্তু নগরীর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার কথা মাথায় রেখে চলতি বছরই সাড়ে ১১ কিলোমিটার খুলে দিতে চায় সরকার। বাকি ৮ দশমিক ২৩ কিলোমিটার খুলে দেওয়া হবে পরের বছর।

প্রকল্পটি প্রথমে ২০১১ সালের জুলাই থেকে ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে বাস্তবায়নের কথা ছিল। মূল প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল তিন হাজার ২১৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। পরে প্রকল্প ব্যয় অপরিবর্তিত রেখে মেয়াদ ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। প্রকল্পটির বিদ্যমান অঙ্গের পরিমাণ ও ব্যয় বাড়ার কারণে প্রথম সংশোধনীতে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় চার হাজার ৮৮৯ কোটি টাকা। একই সঙ্গে সময় বাড়ানো হয় ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। দ্বিতীয়বারের মতো প্রকল্পে সংশোধনী এনে সময় ও ব্যয় আরও বাড়িয়ে ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে কাজ শতভাগ সম্পন্ন করার লক্ষ্য নেওয়া হয়। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর-কুড়িল-বনানী-মহাখালী-তেজগাঁও-মগবাজার-কমলাপুর-সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ী-ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক (কুতুবখালী) পর্যন্ত উড়াল সড়কের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে আট হাজার ৯৪০ কোটি টাকা।

নির্মাণের সুবিধার্থে প্রকল্পটি তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে বিমানবন্দর থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত এই পথ। উড়ালসড়ক বাস্তবায়নের পর ঢাকার উত্তর-দক্ষিণে বিকল্প সড়ক সৃষ্টি হবে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি হেমায়েতপুর-কদমতলী-নিমতলী-সিরাজদিখান-মদনগঞ্জ-ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক-মদনপুরে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করবে।